প্রতীকী ছবি ফাইল চিত্র
সামান্য জ্বর আর শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন রোগী। পরিজনেদের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানিয়েছিলেন, আগে করোনা পরীক্ষা হবে, তার পরেই চিকিৎসা শুরু হবে। কিন্তু অভিযোগ, করোনা পরীক্ষার সেই রিপোর্ট ৩০ ঘণ্টা পরে আসে। আর তত ক্ষণ বিনা চিকিৎসায় পড়ে থেকে মৃত্যু হয় ওই রোগীর। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মধ্য হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়াম সংলগ্ন এক বেসরকারি হাসপাতালে শনিবার রাতে ওই রোগীর চিকিৎসার দাবিতে প্রথমে বিক্ষোভ দেখান পরিজনেরা। রবিবার বেলায় রোগীর মৃত্যুর পরে ফের বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। দু’বারই বিশাল পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দেয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে দেবাশিস পাল (৫৭) নামের এক ব্যক্তিকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী ও পুত্র। তাঁদের অভিযোগ, করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের অপেক্ষায় থেকে চিকিৎসাই শুরু করেনি হাসপাতাল! ভর্তির পরে শুধু অক্সিজেন দেওয়া ছাড়া কার্যত কোনও চিকিৎসা হয়নি রোগীর। এমনকি কোনও ডাক্তারও দেখেননি বলে অভিযোগ। ওই রোগীর করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট চিকিৎসকদের হাতে আসে রবিবার দুপুর দুটো নাগাদ। তার আগেই, বেলা ১১টা নাগাদ রোগীর মৃত্যুর খবর ঘোষণা করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসা কেন শুরু হচ্ছে না, এ নিয়ে শনিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রোগীর পরিবারকে জানানো হয়েছিল, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এলে তবেই চিকিৎসা শুরু হবে। পরিবারের দাবি, তাঁরা রোগীকে জেলার সরকারি কোভিড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে চান। কিন্তু করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট না থাকায় কোনও সরকারি কোভিড হাসপাতাল দেবাশিসকে ভর্তি নিতে চায়নি। এমনকি জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
শনিবার রাত ৯টা থেকে রোগীর অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। পরিবারের আরও অভিযোগ, রাতে ওই হাসপাতালে কোনও চিকিৎসক থাকেন না। থাকেন শুধু নার্স, এমনটাই তাঁদের জানানো হয়। ফলে রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও কোনও চিকিৎসা পরিষেবা তাঁকে দিতে পারা যায়নি বলেই দাবি। এই পরিস্থিতিতে রোগীর অবস্থার অবনতি হতে দেখে আত্মীয় ও বন্ধুরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। রোগীর পরিজনদের দাবি, রাত ১২টা নাগাদ হাসপাতালের পিছনের দরজা দিয়ে এক চিকিৎসক ঢোকেন। তিনিই রোগীকে ভেন্টিলেটরে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। রবিবার বেলা ১১টায় কর্তৃপক্ষ জানান, রোগী মারা গিয়েছেন।
এর পরেই মৃতের পরিবারের সদস্যেরা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। দেবাশিসবাবুর স্ত্রী কাকলি পাল রবিবার বলেন, “কোভিড রিপোর্ট না আসায় শনিবার সকাল থেকে কোনও চিকিৎসা করেনি হাসপাতাল। ওদের দোষেই আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালকে ছাড়ব না।’’
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে ইতিমধ্যে ওই পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ জানানো হয়েছে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং জেলাশাসকের কাছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘গোটা ঘটনার তদন্ত হবে। রিপোর্ট হাতে এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ওই বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার তথা চিকিৎসক সব্যসাচী চক্রবর্তী বলেন, “ওই রোগীর করোনা থাকতে পারে আশঙ্কা করেই আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছিল। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে সময় লাগে। তাই দেরি হয়েছে। কিন্তু এ জন্য রোগীর চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি হয়নি। যা ব্যবস্থা নেওয়ার সবটাই নেওয়া হয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy