Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata

অকালে স্বামীকে হারিয়ে কোভিডকে হারাতে আর্জি

একসঙ্গে: স্বামী অভিজ্ঞান মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পাপিয়া মুখোপাধ্যায়

একসঙ্গে: স্বামী অভিজ্ঞান মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পাপিয়া মুখোপাধ্যায় ছবি: সংগৃহীত।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২১ ০৬:০৩
Share: Save:

অতিমারি আবহে সামনের সারিতে থেকে করোনার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর স্বামী। কিন্তু শেষে সেই করোনার কাছেই হার মানতে হয় কলকাতা পুলিশের আধিকারিক অভিজ্ঞান মুখোপাধ্যায়কে। তার পরে পেরিয়েছে দশ মাস। ভোট-বঙ্গে ফের লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ। অভিজ্ঞানের স্ত্রী পাপিয়া মুখোপাধ্যায় তাই বলছেন, ‘‘আমার স্বামী করোনা-যুদ্ধে সামনের সারিতে থেকে কাজ করেছিলেন। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। তাই সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ভিড় এড়িয়ে দূরত্ব-বিধি মানতে হবে। একমাত্র সচেতন দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে দিয়েই করোনাকে আমরা হারাতে পারব।’’

কোভিড-যুদ্ধে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করা অভিজ্ঞানবাবুই ছিলেন কলকাতা পুলিশের প্রথম আধিকারিক, যাঁর করোনায় মৃত্যু হয়। তার পরে গত সেপ্টেম্বরে লালবাজারের রেকর্ড সেকশনে কাজে যোগ দিয়েছেন পাপিয়াদেবী। বলছেন, ‘‘অভিজ্ঞান মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী বলেই গোটা লালবাজার আমাকে সম্মান করে। মানুষটার কর্মকাণ্ড কেমন ছিল, তা এখন বুঝতে পারছি। আমার পুরো জীবনটাই এখন বদলে গিয়েছে।’’

ভোটের সময়ে এ রাজ্যে আছড়ে পড়েছে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। এই পরিস্থিতিতে ফের পাপিয়াদেবীর মনে ঘুরেফিরে আসছে গত বছরের সেই দিনগুলোর কথা। করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরে দু’বার অভিজ্ঞানবাবুর কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল। তৃতীয় বার যতক্ষণে রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে, ততক্ষণে অভিজ্ঞানবাবুর শারীরিক অবস্থার অনেকটাই অবনতি হয়েছে। এর পরে গত ২৪ জুলাই বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান তিনি। তাই এ বারে ঠিকঠাক ভাবে কোভিড পরীক্ষা করার উপরে নজর দেওয়ার কথা বার বার বলছেন পাপিয়াদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘প্রশাসনের কাছে একটাই অনুরোধ, করোনা আক্রান্তের প্রাথমিক পরীক্ষা এবং চিকিৎসা যেন ঠিকঠাক হয়। প্রথম পরীক্ষায় আমার স্বামীর রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে হয়তো এ ভাবে ওঁকে হারাতে হত না।’’ সেই সঙ্গে শহরবাসীর একাংশের বেপরোয়া মনোভাব, মাস্ক না পরার প্রবণতা দেখে রীতিমতো বিরক্ত এবং হতাশ বোধ করছেন তিনি। তিনি বলছেন, ‘‘সকলকে বলব, দয়া করে মাস্ককে নিজের সঙ্গী করুন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখনও অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। অনেকের মাস্ক আবার থুতনির নীচে ঝুলছে। এমন ভাবে মাস্ক পরে কোনও লাভ নেই।’’

গত বছর অভিজ্ঞানবাবুর মৃত্যুর সময়ে সমাজের একাংশ যে ভাবে তাঁর পরিবারকে কার্যত ‘একঘরে’ করে দিয়েছিল, তা রীতিমতো যন্ত্রণা দিয়েছিল পাপিয়াদেবীকে। কিন্তু সেই ছবিটা এত দিনে অনেকটাই বদলেছে বলে মনে করছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্য বিভাগের প্রাক্তনী পাপিয়াদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘অভিজ্ঞান চলে যাওয়ার পরে আমার করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। সেই সময়ে কড়েয়ার পুলিশ আবাসনের একাংশ থেকে শুরু করে হাওড়ার আন্দুলের শ্বশুরবাড়ির পাড়া-প্রতিবেশীদের মানসিকতায় ভীষণ আঘাত পেয়েছিলাম। তবে এখন যত দিন গড়াচ্ছে, সকলের মানবিক দিকটা আবার দেখা যাচ্ছে। কোভিডের দোহাই দিয়ে কি আমরা ফের একই সূত্রে নিজেদের বাঁধতে পারব?’’

হাওড়ার আন্দুলের শ্বশুরবাড়ি থেকে বাসে চড়ে এখন প্রতিদিন লালবাজারে আসেন পাপিয়াদেবী। তাঁর মেয়ে, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী অগ্নিহোত্রী মাস দুয়েক আগে কালিম্পঙে স্কুলের হস্টেলে ফিরে গিয়েছে। মেয়ের কথা
উঠতেই ফোনের ও পারে গলাটা ধরে আসে পাপিয়াদেবীর। ‘‘ওর বাবা অফিস থেকে ফিরলে মেয়েটা কাছছাড়া হতে চাইত না। এত দিন ও আমার কাছে ছিল। রাস্তায় কোনও মেয়েকে তার বাবার হাত ধরে যেতে দেখলেই আমাকে জড়িয়ে ধরত। হস্টেলে এখন ও কেমন আছে, কী জানি!’’ —ফুঁপিয়ে উঠে বলেন মা পাপিয়াদেবী।

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Kolkata Police COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy