প্রতীকী ছবি।
পুজো এগিয়ে আসায় বিভিন্ন কাজে রাস্তায় বেরোনোর প্রয়োজন বাড়ছে মানুষের। আর সেই কারণেই সম্প্রতি জোরালো দাবি উঠেছে লোকাল ট্রেন পুনরায় চালু করার। শহরতলির যাত্রীদের বড় অংশেরই বক্তব্য, আনলক-পর্বে জনজীবন এখন আবার আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গিয়েছে। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি, দুই ধরনের বাসই যথেষ্ট অপ্রতুল। সেই কারণে তাঁদের ভিড় বাসে ঠাসাঠাসি করেই যাতায়াত করতে হচ্ছে। যা নিয়ে প্রবল শঙ্কিত অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, ভিড় বাসে কোনও মতেই দূরত্ব-বিধি রক্ষা করা যাচ্ছে না। অথচ, বাসে না চড়েও উপায় নেই। কাজের জায়গায় তো যেতেই হবে। এমন পরিস্থিতিতে লোকাল ট্রেন চালু করার দাবি তুলছেন তাঁরা।
সোনারপুর, বারুইপুর, বজবজ, ব্যারাকপুর, বনগাঁ, বারাসত, উলুবেড়িয়া, আমতা, হুগলি, শ্রীরামপুর, ব্যান্ডেল, বর্ধমানের মতো বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকাল ট্রেনে চেপেই কলকাতায় আসেন অসংখ্য মানুষ। কিন্তু বর্তমানে লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় এবং বাসের সংখ্যা সীমিত হওয়ায় যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন তাঁরা নাজেহাল হচ্ছেন বলে অভিযোগ। সংক্রমণের আশঙ্কার পাশাপাশি অনেকে জানিয়েছেন, বাস বা অটোয় বাড়তি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রচুর টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে তাঁদের। এই অবস্থায় তাঁদের বক্তব্য, প্রয়োজনীয় বিধি মেনে লোকাল ট্রেন চালু হলে অনেকটাই সুবিধা হবে যাতায়াতে।
যাত্রীদের এই সমস্যার কারণেই হুগলির পাণ্ডুয়া, খন্যান বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে রেলকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট ট্রেনে জোর করে ওঠা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা এবং অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। লোকাল ট্রেন চালানোর দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান ও সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে চিঠি দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। পথে নেমেছে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনও।
তবে গত কয়েক সপ্তাহে সংক্রমণের হার যে ভাবে বেড়েছে, তাতে লোকাল ট্রেন চালু হলে পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা। মেট্রোয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর পরিষেবা পুনরায় শুরু হওয়ার প্রথম দিন যেখানে যাত্রী-সংখ্যা ছিল মাত্র ২০ হাজার, সেখানে চলতি সপ্তাহে সেই দৈনিক যাত্রী-সংখ্যা ৭৭ হাজারে পৌঁছেছে। লোকাল ট্রেন চালু হলে ওই সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা অসম্ভব বলে মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের একাংশ। বিশেষত, শহরতলির স্টেশনে ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রেল বা রাজ্য, কোনও পক্ষই এখনও সুনির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেনি। মুম্বইও এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় লোকাল ট্রেন চালু করতে পারেনি। ফলে পুজোর মতো বড় উৎসবের সময়ে সংক্রমণের মাত্রাছাড়া হওয়া ঠেকাতে লোকাল ট্রেন না চালানোর পক্ষেই মত দিচ্ছেন প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ। মেট্রো কর্তৃপক্ষও পুজোয় সারা রাত মেট্রো চালানোর বিপক্ষে।
আরও পড়ুন: ড্রোনের ছবিতে ধরা পড়ল আবর্জনার বেহাল চিত্র
আরও পড়ুন: বাজারের ভিড় ঠেকাতে মাইকে সচেতনতার পাঠ
বেসরকারি হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক শিবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাউদ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটি একটা সমীক্ষায় দেখিয়েছে, ট্রেনের মাধ্যমে প্রতি এক ঘণ্টায় ০.১৫ শতাংশ সংক্রমণ বাড়তে পারে। একই আসনে এক জন বসার পরে আর এক জন বসলে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা ০.৭৫ শতাংশ। একই সারি থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা ১.৫ শতাংশ। আর একই কামরায় কোভিড পজ়িটিভ রোগী থাকলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা ৩.৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন: পুলিশ আবাসনের পুজোয় চাই পুরোহিত-রাঁধুনির করোনা রিপোর্ট
ট্রেন কখনও না কখনও চালাতে হবে। তবে পুজোর আগে তা ঠিক হবে না। উৎসবের সময়ে এমনিতেই সংক্রমণ কয়েক গুণ বাড়তে পারে। সেই ধাক্কা সামলে ট্রেন চালানোর কথা ভাবা যেতে পারে।’’ ওই চিকিৎসকের বক্তব্য, ট্রেন থেকে যত সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হবেন, তাঁদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো রয়েছে কি না, তা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy