Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
corona

Coronavirus in Kolkata: করোনার রিপোর্ট পেতে দেরি, চিকিৎসা শুরু উপসর্গ দেখেই

উপায় না থাকায় রিপোর্ট পাওয়ার আগেই অধিকাংশ রোগীর উপসর্গ বুঝে ওষুধ দিতে হচ্ছে চিকিৎসককেও।

দীর্ঘ: ফের পড়ছে করোনা পরীক্ষা করানোর লম্বা লাইন। শুক্রবার, এম আর বাঙুর হাসপাতালে।

দীর্ঘ: ফের পড়ছে করোনা পরীক্ষা করানোর লম্বা লাইন। শুক্রবার, এম আর বাঙুর হাসপাতালে। ছবি: সুমন বল্লভ।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:০৪
Share: Save:

‘রিপোর্ট কি একটু তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে?’

প্রশ্নটা শুনে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা বেসরকারি পরীক্ষা কেন্দ্রের কর্মী খানিকটা বিরক্তই হলেন। বললেন, “নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। ৪৮ ঘণ্টা সময় তো লাগবে। দেখছেন তো এখন কত চাপ।” শুধু রিপোর্ট পেতে দেরি নয়, করোনা পরীক্ষা করাতেও সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই। পরীক্ষার জন্য যে দিন বুকিং করা হচ্ছে, তার পরের দিন হয়তো নমুনা নিতে লোক আসছেন। আবার নিজে পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হলেও যে পরীক্ষার সুযোগ মিলছে, তেমনটাও নয়।

তাই উপায় না থাকায় রিপোর্ট পাওয়ার আগেই অধিকাংশ রোগীর উপসর্গ বুঝে ওষুধ দিতে হচ্ছে চিকিৎসককেও। রাজ্যে দ্রুত গতিতে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার চাহিদা। তাতেই শুরু হয়েছে এ হেন বিভিন্ন সমস্যা। কারণ হিসাবে উঠে আসছে বেশ কয়েকটি বিষয়। যেমন, সমস্ত পরীক্ষা কেন্দ্রের নিজস্ব আরটি-পিসিআর পরীক্ষার পরিকাঠামো না থাকা। দ্বিতীয়ত, ডিসেম্বরের শুরুতেও যে সংখ্যক পরীক্ষা হত, তার থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া এবং নমুনা সংগ্রহের কর্মীদেরও আক্রান্ত হয়ে পড়া। কয়েক দিন আগেও পরীক্ষা করানোর ঘণ্টা পাঁচ-ছয়ের মধ্যে রিপোর্ট হাতে আসত। এখন অন্তত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগছে। আর সেই সময়টা আতঙ্কে কাটছে প্রায় সকলেরই।

এই চিন্তার জেরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধাক্কা খাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রঞ্জন ভট্টাচার্যের কথায়, “লালারসের নমুনা দেওয়ার পরে যত ক্ষণ না রিপোর্ট আসছে, তত ক্ষণ একটা উৎকণ্ঠা, আতঙ্কের মধ্যে থাকা স্বাভাবিক। তবে যে কোনও আতঙ্ক শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অনেকটা কমিয়ে দেয়। তাই যাঁদের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসবে, তাঁদের কারও কারও ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে সাইটোকাইন ঝড়ের আশঙ্কা বৃদ্ধি পেতে পারে।”

শহরের কয়েকটি প্যাথলজিক্যাল ও ডায়াগনস্টিক সংস্থার নিজস্ব আরটি-সিপিআর পরীক্ষার যন্ত্র রয়েছে। লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে সেখানেই পাঠায় বহু মাঝারি-ছোট সংস্থা। যেমন কামারহাটির একটি বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল কেন্দ্রের কর্ণধার রীতম মল্লিকের কথায়, “সকালে যে নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে, সেগুলি দুপুরে, আর দুপুরের নমুনাগুলি বিকেলে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছে। সেখানে যাওয়ার পরে অনেক প্রক্রিয়া থাকে। তাই রিপোর্ট পেতে ৪৮ ঘণ্টা সময় তো লাগছেই। আর সব থেকে বড় সমস্যা হল নমুনা সংগ্রহ করতে যাওয়া কর্মীরাই একের পর এক আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।”

বাড়িতে গিয়ে লালারসের নমুনা সংগ্রহ করার সমস্যার কথা জানাচ্ছেন দক্ষিণ কলকাতার আরও একটি সংস্থার কর্ণধার কালীপদ নন্দন। তাঁর কথায়, “যে হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে কর্মীরাও পর পর আক্রান্ত হচ্ছেন। এক জন অসুস্থ হওয়ার অর্থ, অন্তত সাত দিন তিনি ছুটিতে।” আরটি-পিসিআর পরীক্ষার জন্য নিজেদের পাঁচটি যন্ত্র থাকার পরেও চাপ বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন শহরের একটি বেসরকারি ডায়গনস্টিক সংস্থার শীর্ষ কর্তা, চিকিৎসক সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কয়েক দিন আগেও দৈনিক ২০০টি করে পরীক্ষা হচ্ছিল। এখন সেখানে অন্তত ২৫০০টি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ১২-১৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নিজস্ব পরিকাঠামো না থাকলে সমস্যা তো বটেই। তাতেই রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে।” রাজারহাটে ওই সংস্থার কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগার রয়েছে। সেখানে একটি যন্ত্রে এক-একটি পর্বে একসঙ্গে ৯৬টি নমুনা ‘রান’ করে।

আরটি-পিসিআর পরীক্ষার পরিকাঠামোর উপরেই নির্ভর করে কতগুলি করে নমুনা রোজ পরীক্ষা করা সম্ভব। যেমন পিয়ারলেস হাসপাতালের শীর্ষ কর্তা, চিকিৎসক সুদীপ্ত মিত্র জানাচ্ছেন, তাঁদের দু’টি আরটি-পিসিআর যন্ত্র রয়েছে। একটিতে ৭০টি, অপরটিতে ৯৪টি নমুনা একসঙ্গে ‘রান’ করে। মূল পরীক্ষা হওয়ার আগে স্বয়ংক্রিয় ভাবে নমুনাগুলির প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়। তাতেও একটি নির্দিষ্ট সময় লাগে। তাঁর কথায়, “আগে যেখানে দিনে ৩০-৫০ জন আসছিলেন, এখন সেটা কমপক্ষে ৩০০ হয়েছে। এর পরে রয়েছে বাইরের সংস্থার পাঠানো নমুনা। নিজেদের হাসপাতালে যে পরীক্ষা হচ্ছে, তার রিপোর্ট কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেওয়া হচ্ছে। তবে যাঁদের বিদেশযাত্রার ব্যাপার রয়েছে, তাঁরাও বিকেল ৪টের মধ্যে ‘কিউআর কোড’ রিপোর্ট চাইছেন। চাপ অনেক বেড়েছে।”

রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় কিছুটা হলেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, “অধিকাংশেরই রিপোর্ট পেতে দু’দিন সময় লাগছে। তাই উপসর্গ দেখেই ওষুধ দেওয়া এবং আইসোলেশনে থাকতে বলা হচ্ছে। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ঘরে থাকছেন না। ফলে নিজেদের অজানতেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

corona Coronavirus in Kolkata Covid 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy