Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে অপহরণ ডাক্তারকে

মুক্তিপণ চেয়ে এমনই ফোন আসায় সোমবার তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল হাওড়ার রামরাজাতলার রামচরণ শেঠ রোডের বাসিন্দা, স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক দেবীশঙ্কর দে-র বাড়িতে।

 দেবীশঙ্কর দে

দেবীশঙ্কর দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৫
Share: Save:

সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ ফোনটা আসতেই চমকে উঠেছিলেন চিকিৎসকের বাড়ির লোকজন। ও-প্রান্ত থেকে ভেসে এসেছিল আতঙ্কিত চিকিৎসকের গলা। ফোনে স্ত্রীকে তিনি জানান, তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। ৫০ লক্ষ টাকা জোগাড় করতে না পারলে অপহরণকারীরা মেরে ফেলবে।

ঠিক আধ ঘণ্টা পরে আসে অপহরণকারীদের ফোন। ও-প্রান্ত থেকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘‘ডাক্তারবাবুকে অপহরণ করা হয়েছে। ৫০ লক্ষ টাকা দিলে তবেই ছাড়া হবে। টাকা রেডি রাখুন। আমাদের লোক যাচ্ছে। পুলিশে খবর দেবেন না।’’

মুক্তিপণ চেয়ে এমনই ফোন আসায় সোমবার তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল হাওড়ার রামরাজাতলার রামচরণ শেঠ রোডের বাসিন্দা, স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক দেবীশঙ্কর দে-র বাড়িতে। আতঙ্কিত পরিজনেরা পুলিশকে খবর দেওয়া তো দূর, টাকা জোগাড় করতেই ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু দেবীশঙ্করবাবুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়ার ঘটনাটি কোনও ভাবে জানতে পেরে যান এলাকারই একটি ক্লাবের সদস্যেরা। তাঁদের টানা নজরদারি শুধু অপহরণকারীদের ধরিয়েই দিল তাই নয়, পুলিশের সাহায্যে ওই চিকিৎসকও অপহরণের সাত ঘণ্টার মাথায় সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে এলেন। কোনও মুক্তিপণ না দিয়েই।

কী ভাবে অপহৃত হয়েছিলেন ওই চিকিৎসক?

পুলিশ জানায়, রামরাজাতলায় বাড়ি লাগোয়া একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি এবং নার্সিংহোম রয়েছে দেবীশঙ্করবাবুদের। এ ছাড়া, আমতার একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে তিনি প্রতি সোমবার রোগী দেখতে যান। পুলিশ জানায়, এ দিনও সকাল সওয়া দশটা নাগাদ ওই চিকিৎসক যখন গাড়ি নিয়ে আমতা ও মুন্সিরহাটের মোড়ের দিয়ে যাচ্ছিলেন সে সময়ে দু’টি মোটরবাইকে চার যুবক এসে গাড়ি থামায়। তাদের মুখ ছিল ‘ফুল মাস্ক’ হেলমেটে ঢাকা। জোর করে চার জন গাড়িতে উঠে দেবীশঙ্করবাবুর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে অপহরণ করে। পরে তাঁকে দিয়েই বাড়িতে ফোন করিয়ে ৫০ লক্ষ টাকা চায়।

এরই মধ্যে গোটা বিষয়টি কোনও ভাবে জানতে পেরে যান স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্যেরা। তাঁরা জানান, খবর পাওয়ার পরেই তাঁরা তক্কে তক্কে ছিলেন, অপহরণকারীরা টাকা নিতে আসলেই হাতেনাতে ধরবেন। সেই মতো ক্লাবের ৮-১০ জন সদস্য ছড়িয়ে পড়েন দেবীশঙ্করবাবুর বাড়ির আশপাশে। ক্লাবের তরফে শুভ দাস বলেন, ‘‘দুপুর ২টো নাগাদ দেখি, দু’টি ছেলে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করছে। আর ঘন ঘন ফোন করছে। আমরা কয়েক জন কাছাকাছি গিয়ে ফোনের কথোপকথন শুনে নিশ্চিত হই, তারাই অপহরণকারী। তখনই ধরে ফেলি।’’

স্থানীয় বাসিন্দারাই ওই দুই অপহরণকারীকে উত্তম মধ্যম দিয়ে তুলে দেন পুলিশের হাতে। অপহরণের অভিযোগে জিৎ গোরা ও সংগ্রাম দাস ওরফে সুমন দাস নামে দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ।

হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) স্বাতী ভাঙালিয়া বলেন, ‘‘ধৃতদের দিয়ে ফোন করিয়ে বাকি অপহরণকারীদের মিথ্যা খবর দেওয়া হয় যে, ২০ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যেই তারা পেয়ে গিয়েছে। তাই ডাক্তারবাবুকে ছেড়ে দেওয়া হোক। এর পরেই ওই চিকিৎসককে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা।’’ পুলিশ দেবীশঙ্করবাবুকে উদ্ধার করে আমতা থানায় নিয়ে যায়। সেখানেই তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Kidnapping Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy