Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

পথ, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ?

আমজনতার কাছে যা শুধুই খালপাড়ের রাস্তা, গুগ্‌ল ম্যাপের সৌজন্যে সেটাই এখন চেস্টার বেনিংটন স্ট্রিট! নিউ টাউনের ওই রাস্তা ধরে একটি অ্যাপ-ক্যাব যাচ্ছিল এলাকার বহুতল আবাসন ‘ইকো স্পেস’-এর দিকে।

রকস্টার-রাস্তা: নিউ টাউনের সেই পথ।

রকস্টার-রাস্তা: নিউ টাউনের সেই পথ।

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৫৬
Share: Save:

কেউ জানে না, শুধু গুগ্‌ল জানে। নিউ টাউনের বাগজোলা খালপাড়ের একটি রাস্তার নাম নাকি চেস্টার বেনিংটন স্ট্রিট!

আমেরিকা ও ইউরোপে জনপ্রিয় ওই তরুণ রকস্টারের নামে পশ্চিম দুনিয়াতেও কোনও রাস্তা তৈরি হয়েছে বলে খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে মৃত্যুর কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁর নামে রাস্তা হয়ে গিয়েছে নিউ টাউনে! যাত্রাগাছি মোড় থেকে বাগজোলা খালের ধার দিয়ে যে রাস্তাটি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে চলে গিয়েছে, তারই নাম চেস্টার বেনিংটন স্ট্রিট।

গুগ্‌ল ম্যাপে তারই বিদেশি নাম। —নিজস্ব চিত্র।

আমজনতার কাছে যা শুধুই খালপাড়ের রাস্তা, গুগ্‌ল ম্যাপের সৌজন্যে সেটাই এখন চেস্টার বেনিংটন স্ট্রিট! নিউ টাউনের ওই রাস্তা ধরে একটি অ্যাপ-ক্যাব যাচ্ছিল এলাকার বহুতল আবাসন ‘ইকো স্পেস’-এর দিকে। গুগ্‌ল ম্যাপ তখন দেখাচ্ছে, ‘ইকো স্পেস’ যাওয়ার জন্য সহজ পথ হল চেস্টার বেনিংটন স্ট্রিট। ওই রাস্তার আশপাশের এলাকার নাম বালিগুড়ি, চকমাচুরিয়া, আকন্দকেশরী, ভোজেরহাট, যাত্রাগাছি। এই সব আঞ্চলিক নামের পাশে এ রকম একটি বেমানান বিদেশি নামের রাস্তা দেখে ক্যাবের যাত্রীদের সন্দেহ হয়, ঠিক পথে যাচ্ছি তো? যাত্রাগাছি মোড়ে এসে বাঁ দিকের ওই রাস্তা ধরার আগে তাঁরা স্থানীয় এক বাসিন্দাকে জিজ্ঞেস করলেন, এই রাস্তার নামই চেস্টার বেনিংটন স্ট্রিট তো?

নিউ টাউনের বালিগুড়ি গ্রামের ওই বাসিন্দার মুখ দেখেই বোঝা গেল, নামটি তিনি প্রথম বার শুনলেন। চেস্টার বেনিংটন স্ট্রিটে তখন কয়েকটি গরু চরে বেড়াচ্ছে। ক্যাবের যাত্রীরা ইতস্তত করে ওই রাস্তা ধরেই এগিয়ে গেলেন।

শুধু বালিগুড়ির ওই যুবকই নন, চেস্টার বেনিংটন স্ট্রিট নামটি শুনে আকাশ থেকে পড়লেন বিধাননগর পুরসভার মেয়র সব্যসাচী দত্ত। চেস্টার বেনিংটন কে এবং তিনি কী করেন, তা জানার পরে সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘নিউ টাউনের ওই এলাকা আমাদের পুরসভার মধ্যে পড়ে। আমরা কিন্তু কোনও রাস্তার ওই নাম দিইনি। দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’’ গুগ্‌ল ওই নাম দিয়েছে জানার পরে সব্যসাচীবাবুর সহাস্য উত্তর, ‘‘গুগ্‌লই তা হলে জানে এর রহস্য।’’

ওই নামে যে রাস্তা আছে, তা জানা নেই হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেনেরও। রাস্তার নাম শুনে তিনিও বিস্মিত। বললেন, ‘‘এটা আবার কী রাস্তা? এ রকম রাস্তার নাম তো প্রথম শুনলাম। এটা এখনই গুগ্‌ল ম্যাপে ঠিক করে নেওয়া দরকার। না হলে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়বে।’’

গুগ্‌ল সার্চ করে দেখা গেল, আমেরিকার অ্যারিজোনার ওই জনপ্রিয় পপ গায়কের প্রথম অ্যালবাম বেরোয় ২০০০ সালে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৪। অ্যালবামের নাম ‘হাইব্রিড থিয়োরি’। প্রথম অ্যালবামই সারা পৃথিবী জুড়ে প্রবল জনপ্রিয় হয়। ‘লিঙ্কিন পার্ক’ নামে একটি ব্যান্ডও তৈরি করেছিলেন তিনি। চেস্টারই ছিলেন সেই ব্যান্ডের প্রধান গায়ক। শুধু গায়কই নন, চেস্টার ছিলেন গীতিকার ও অভিনেতাও। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকাকালীন চলতি বছরের ২০ জুলাই ওই মার্কিন গায়ক আত্মহত্যা করেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৪১। ক্যালিফনির্য়ার একটি বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর দেহ মেলে।

এ রকম আদ্যন্ত এক আমেরিকান গায়কের নামে নিউ টাউনের ওই রাস্তার নাম কে দিল? চেস্টার বেনিংটনের কোনও পরম ভক্তই কি এ কাজ করেছেন? গুগ্‌লের কলকাতার আঞ্চলিক গাইড শৌনক দাস বলেন, ‘‘গুগ্‌ল ম্যাপে যখন কোনও রাস্তার বা এলাকার নামকরণ হয়, তখন পুরসভা থেকে শুরু করে সব দিক যাচাই করা হয়। যে কেউ কোনও এলাকার নাম বা রাস্তার নাম গুগ্‌ল ম্যাপে বসিয়ে দিতে পারে না। কী ভাবে এটা হল, তা খতিয়ে দেখে ঠিক করে দেওয়া হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE