Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Diwali 2020

বাজি বিক্রি নয়, সিদ্ধান্তে কালিকাপুর বাজিবাজার

উত্তরে টালা পার্ক এলাকার কাছে রবিবার এক বৈঠক করেন শহরের বিভিন্ন প্রান্তের বাজি ব্যবসায়ীরা।

বৈঠকে বাজি ব্যবসায়ীরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

বৈঠকে বাজি ব্যবসায়ীরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২০ ০২:৪৩
Share: Save:

আলোর উৎসবে সংযম দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাতে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এলেন বাজি ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। ‘এ বছর বাজির ব্যবহার মানে মৃত্যুকে ডেকে আনা’— এমনই মন্তব্য করে বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করল পূর্ব কলকাতার কালিকাপুর বাজিবাজার সমিতি।

উত্তরে টালা পার্ক এলাকার কাছে রবিবার এক বৈঠক করেন শহরের বিভিন্ন প্রান্তের বাজি ব্যবসায়ীরা। পুলিশের তরফে এখনও অবশ্য শহরে সরকারি বাজিবাজারের সবুজ সঙ্কেত পাননি তাঁরা। ফলে চলতি বছর বাজিবাজার আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ কাটেনি। বাজিবাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত, কলকাতা পুলিশের ডিসি (রিজ়ার্ভ ফোর্স) সুখেন্দু হীরা বলেন, “নবান্নে চিঠি দিয়ে বাজিবাজারের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এখনও তার জবাব আসেনি।”

কালীপুজো উপলক্ষে শহরের পাঁচ জায়গায় সরকারি বাজিবাজার বসে। এ দিন ব্যবসায়ীদের বৈঠকে হাজির ছিলেন টালা পার্ক, শহিদ মিনার, কালিকাপুর এবং হাওড়ার বাজিবাজার সমিতির প্রতিনিধিরা। বৈঠকের শুরুতেই বাজিবাজারের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান শুধু কালিকাপুর বাজিবাজার সমিতির সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ মজুমদার। সভা শেষে তিনি বলেন, “দীপাবলিতে বাজির ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারির ডাক দিয়েছে রাজ্যের চিকিৎসক সংগঠনগুলি। এই পরিস্থিতিতে বাজিবাজার করা মানে সাক্ষাৎ মৃত্যুকে ডেকে আনা। তাই এ বছর আমরা বাজিবাজার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তবে বেআইনি আতসবাজি বিক্রি ঠেকাতে পুলিশ ও প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে বলে মনে করছেন শ্যামাপ্রসাদবাবু।

আরও পড়ুন: বাজি-দূষণ পাল্টে দিতে পারে কোভিডে সুস্থতার হার​

পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তেরও প্রশ্ন, “সরকারি বাজিবাজার না বসলেও বিক্রি কি পুরো বন্ধ হবে? বরং, বাজি পরীক্ষা না হওয়ায় চোরাপথে নিষিদ্ধ বাজি বিক্রির আশঙ্কা অনেক বেশি।”

প্রতি বছর দুর্গাপুজোর পরেই বাজির পরীক্ষা হয়। এখনও সেই পরীক্ষা না হওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের মতে, প্রতি বছর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে শব্দ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বাজির তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হয় কলকাতা পুলিশকে। আশঙ্কা, এ বছর সে সব না হওয়ায় নিষিদ্ধ বাজি দেদার বিক্রি হবে।

কী ভাবে পরিস্থিতি সামলাবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ? পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের উত্তর, “বাজি বিক্রি এবং নিষিদ্ধ বাজি ধরপাকড়ের কাজ পুলিশ করবে।” আর ডিসি (রিজ়ার্ভ ফোর্স ) সুখেন্দুবাবু বলেন, “যে সব দোকানের লাইসেন্স রয়েছে, তারা বাজি বিক্রি করতে পারবে। নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি ঠেকাতে পুলিশ শহরে নজর রাখবে।”

আরও পড়ুন: রাজনৈতিক চাপ সামলে কি ঠেকানো যাবে বাজি-দূষণ’​

কী ভাবছে অন্য বাজিবাজারগুলি? শহিদ মিনার বাজিবাজারের যুগ্ম সম্পাদক শান্তনু দত্ত বলেন, “এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার বাজিবাজার নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা-ই মানব।” টালা পার্ক বাজিবাজারের সভাপতি তথা ‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতির’ সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না বলেন, “আগে জীবন, পরে উৎসব ঠিকই। তবে বাজি শিল্পের সঙ্গে লক্ষাধিক মানুষ যুক্ত। তাঁদের আর্থিক সাহায্য দিতে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।”

কালিকাপুর বাজিবাজারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বক্ষরোগ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগী। তিনি বলেন, “কোভিড পরিস্থিতিতে আলোর বাজি বা শব্দবাজির মতোই যে কোনও বিষ-ধোঁয়া বিপদ বাড়িয়ে দেবে। অন্য বাজি ব্যবসায়ীদেরও একজোট হতে হবে। আমরা এ বছর বরং বাজি না পোড়ানোর শপথ নিই।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE