ফাইল ছবি
সারা দুনিয়ার বাঙালির ঐক্যের দিন একুশে ফেব্রুয়ারিতেই এ বার বাংলা ভাষাকে অস্ত্র করে দিলীপ ঘোষ বিভাজনের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠে আসছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতির একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরেই সমালোচনার সূত্রপাত। তাতে বিদ্যাসাগর ও রবীন্দ্রনাথের নাম করে তিনি বাংলা ভাষা নিয়ে নিজস্ব অভিমত প্রকাশ করেছেন।
বাংলা ভাষায় আরবি-উর্দু শব্দের উঁকিঝুঁকি বিদ্যাসাগরের আদর্শ থেকে সরে আসা বলে সরব বিজেপি নেতা। এ প্রসঙ্গে উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষক-শিক্ষক তথা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষতের প্রাক্তন সম্পাদক শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এই ধরনের মন্তব্য একেবারেই বিদ্যাসাগরের ভাবধারার অপব্যাখ্যা।’’ তিনি বলছেন, ‘‘বিদ্যাসাগরের বাংলা
সংস্কৃত-ঘেঁষা। কিন্তু একই সময়ে কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘হুতোম পেঁচার নকশা’ বা প্যারীচাঁদ মিত্রের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ প্রকাশিত হচ্ছে। তাতে আরবি-পারসি শব্দের ব্যবহার যথেষ্টই। বিদ্যাসাগরের ওই সব সাহিত্যকীর্তির প্রতি কোনও ছুতমার্গ ছিল বলে জানা যায় না। তাঁর স্বভাবের মধ্যেই প্রত্যাখ্যানমূলক, বর্জনমূলক দিক ছিল না। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিদ্যাসাগরের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে।’’
কিছু দিন আগে হোয়াটসঅ্যাপে ‘কালান্তর’ গ্রন্থ থেকে রবীন্দ্র-উদ্ধৃতি প্রক্ষিপ্ত ভাবে ব্যবহারের বিকৃতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন ইতিহাসের অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী। এ বার ফের ‘মক্তব-মাদ্রাসার বাংলা’ বলে একটি গ্রন্থের সমালোচনায় রবীন্দ্র-উদ্ধৃতি ব্যবহার করে দিলীপবাবু ফের বিভাজনের চেষ্টা করছেন বলে পণ্ডিতদের অভিযোগ। ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘ইংরেজদের হিন্দু-মুসলিমে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পদ্ধতির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ভাষায় এর প্রভাবের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে হিন্দু, মুসলমান সবারই সমালোচনা করেছেন। দিলীপবাবুও ইংরেজদের ভঙ্গিতেই ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছেন।’’ ইতিহাসবিদ সুগত বসুর মতেও, ‘‘রবীন্দ্রনাথ তো বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলমানের রাখিবন্ধনের ডাক দিয়েছিলেন। এটাই রবীন্দ্র উত্তরাধিকার। ভাষাকে বিভাজনের অস্ত্র করার বিরুদ্ধে সব বাঙালির অবস্থান নেওয়া উচিত।’’
পাঠ্যবইয়ে কিছু ক্ষেত্রে রংধনু, আসমান শব্দের ব্যবহার নিয়ে দিলীপবাবুর রাজনীতি করা নিয়েও ক্ষুব্ধ সারস্বত সমাজ। দেবপ্রসাদবাবুর মতে, ‘‘একটি শব্দ ব্যবহার মানে আর একটি নস্যাৎ করা নয়। রংধনু, আসমানও পুরনো শব্দ। রবীন্দ্রনাথ তো ‘বাংলাভাষা-পরিচয়’ বইয়ে হাঁদারাম, ভোঁদারাম, বোকারাম বলে রাম শব্দে বোকা বিশেষণের যোগ নিয়েও লিখেছেন। বিভাজনপন্থীদের তা সহ্য হবে তো?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy