Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
শুধু ভাইরাস নয়, তাকে ঘিরে অজস্র প্রতিকূলতা জয় করার কাহিনি
Doctor

‘যুদ্ধ জিততে হবে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য’

ঠিক যেন ২০১৬ সালের ‘৯৩ ডেজ়’ ছবির দৃশ্য। ২০১৪ সালে নাইজিরিয়ায় ইবোলা সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে তৈরি, স্টিভ গুকাস নির্দেশিত সেই ছবিতে সংক্রমিত হন চিকিৎসক আদা ইগোনো।

আরোগ্য: বাড়িতে চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত। নিজস্ব চিত্র

আরোগ্য: বাড়িতে চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২০ ০৩:০৯
Share: Save:

বাঁ দিকে ভেন্টিলেশনে শোয়া এক যুবক। মুখোমুখি আধবসা এক প্রবীণ চিৎকার করে বলছেন, ‘‘আমার মেয়েকে ফোন করো।’’ ডান দিকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় শুয়ে অন্য এক বৃদ্ধা। হঠাৎই ডাক্তারদের ছোটাছুটি বেড়ে গেল সেই ঘরে। ভেন্টিলেশনে থাকা যুবকের বুকে দ্রুত মাসাজ করতে লাগলেন চিকিৎসকেরা। এক সময়ে তাঁরা বাধ্য হলেন হাল ছেড়ে দিতে। আর সেই বৃদ্ধ? দূর থেকে নার্সের হাতে ধরে থাকা ফোনে মেয়ের গলা শুনে বলেছিলেন, ‘‘এ বার আমি খেয়ে নেব, তোমরা ভাল থেকো।’’ শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেই খাওয়া অবশ্য আর হয়নি। এ সব দেখতে দেখতে আইসিইউ-এর চতুর্থ রোগী তখন চোখ বুজে প্রাণপণ ডাকছিলেন তাঁর ঈশ্বরকে।

ঠিক যেন ২০১৬ সালের ‘৯৩ ডেজ়’ ছবির দৃশ্য। ২০১৪ সালে নাইজিরিয়ায় ইবোলা সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে তৈরি, স্টিভ গুকাস নির্দেশিত সেই ছবিতে সংক্রমিত হন চিকিৎসক আদা ইগোনো। জনশূন্য জায়গায় অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি ইগোনো সংক্রমণের দাপট আর মৃত্যু মিছিলকে চাক্ষুষ করেও সুস্থ হয়ে ফিরেছিলেন। ঠিক যেমন, কোভিড-যুদ্ধ জিতে ফিরেছেন চতুর্থ সেই রোগী। যিনি নিজেও চিকিৎসক।

টানা ১৮ দিনের লড়াই শেষে পাঁজাকোলা করে বাড়িতে ঢোকানো হয়েছিল তাঁকে। রাত-দিনের পার্থক্য বুঝতেই কেটে গিয়েছিল আরও কিছু দিন। প্রায় দেড় মাস আগে ঘরে ফেরা, এসএসকেএম হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত এখন ৯০ শতাংশ সুস্থ। বাকি ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছেন বলে নিজেই জানালেন তিনি।

সিওপিডি-র পাশাপাশি অটোইমিউন প্যানক্রিয়াটাইটিসের কারণে ডায়াবিটিস এবং উচ্চ রক্তচাপেরও রোগী তিনি। প্রতি বছর নিয়ম করে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। কোভিড-যুদ্ধে দু’বার আইসিইউ-তে দিতে হয়েছে তাঁকে।

আরও পড়ুন: বিধাননগরে করোনা-যুদ্ধে এগিয়ে এল আরও কিছু ক্লাব

অথচ, মে মাসের শুরুতে তাঁর সংক্রমণ ধরা পড়ার দু’মাস আগে থেকেই নিজেকে ঘরবন্দি করেছিলেন ওই চিকিৎসক। তাঁর সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি, সেই কারণেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এক সকালে ঘুম থেকে উঠে বোঝেন, জ্বর-জ্বর ভাব আর গায়ে-হাতে অসহ্য যন্ত্রণা। আর কোনও উপসর্গ ছিল না। বেলা বাড়তেই রক্তচাপ নামতে থাকায় এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর ছেলে। ভর্তি করে লালারসের নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হয়। রিপোর্ট আসে পজ়িটিভ। তখন তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় বাইপাসের এক বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি থাকাকালীন বুকের অসহ্য যন্ত্রণার কথা মনে করে আঁতকে ওঠেন এখনও। প্রবল ক্লান্তিতে অসাড় দেহ নিয়ে মাঝেমধ্যে নিজেরই সংশয় হচ্ছিল, আদৌ বেঁচে আছেন তো! কিছু খেলেই বমি হয়ে যেত।

সেই চিকিৎসক এখন খাবারের তালিকা বেঁধে নিয়েছেন। ভোরে কুলেখাড়ার জল দিয়ে শুরু। কারণ, হিমোগ্লোবিন নেমে গিয়েছিল পাঁচে। বেড়ে হয়েছিল সাড়ে সাত। এর পরে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট। জলখাবারে দুধ-ওট, ডিম সেদ্ধ আর কলা। দুপুরে ভাত, আনাজের দু’রকম তরকারি, সঙ্গে মাছ বা মাংস। বিকেলে টক দই, আপেল আর পেয়ারা। রাতে দু’টো রুটি ও আনাজের দু’রকম তরকারি। সঙ্গে ওমলেট। ঘরেই হাল্কা হাঁটাচলা আর পড়াশোনার মধ্যে ভাল থাকার রসদ খুঁজছেন তিনি।

অভিজ্ঞতা থেকে অরুণাভবাবুর পরামর্শ, “উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গের কোভিড রোগীরা বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা করুন। এর জন্য বাড়িতে পালস-অক্সিমিটার (শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ও পালস রেট জানিয়ে দেয়), রক্তচাপ মাপার যন্ত্র ও অক্সিজেনের জোগান রাখবেন। দিনে পাঁচ বার অক্সিজেনের মাত্রা মাপবেন। ৯০-এর নীচে নামলেই অক্সিজেন নেওয়ার প্রস্তুতি নেবেন। যদি দেখেন, তাতেও মাত্রা বাড়ছে না, দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকবেন। মনের জোর রাখাটা সব থেকে জরুরি। বিশ্বাস রাখবেন, যুদ্ধ জিততে হবে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য।” (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctor Health COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy