ভোগান্তি: ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিউ কাউন্টার বন্ধ। তার সামনেই অপেক্ষায় রোগী ও পরিজনেরা। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি) বিলের বিরোধিতায় হাসপাতালের গেটে পাহারা বসিয়ে কর্মবিরতি সফল করল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। বহির্বিভাগের পরিষেবায় তাল কাটল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং এসএসকেএম হাসপাতালে।
বুধবার সকাল থেকেই কর্মবিরতির আবহ ছিল ন্যাশনাল মেডিক্যালে। মাইকে ঘোষণা করা হয়, সমস্ত বহির্বিভাগ এ দিন বন্ধ থাকবে। বহির্বিভাগের কোনও রোগী যাতে হাসপাতালে ঢুকতে না পারেন, তার জন্য সতর্ক ছিলেন রক্ষীরা। কাগজপত্র না দেখে কাউকে তাঁরা ঢুকতে দেননি। জরুরি বিভাগ চালু ছিল। তিন নম্বর গেট দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ঢোকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এমন ব্যবস্থার মুখে অসহায় ভাবে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন রেবেকা বিবি, শেখ হাফিজুল, মিরাজ শেখ, ইশরত বেগমেরা। ইউরোলজি বিভাগে পরীক্ষা করানোর কথা ছিল হাফিজুলের। স্ত্রীরোগ বিভাগে এ দিনই ভর্তি হওয়ার কথা ছিল রেবেকার।
বহির্বিভাগের রোগীদের আটকাতে গিয়ে ভর্তি থাকা রোগীর পরিজনদেরও হয়রান করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সুন্দরবনের বাসিন্দা জয়দেব পুরকাইত বললেন, ‘‘আমার রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ওষুধ আনতে বাইরে গিয়েছিলাম। এখন সাদা কার্ড থাকা সত্ত্বেও ঢুকতে দিচ্ছে না।’’ বেলা ১২টা নাগাদ ক্ষুব্ধ পরিজনেরা রাস্তা অবরোধ করতে উদ্যত হন। হাসপাতালের সামনে এক দিকের রাস্তা বন্ধ করে দেন তাঁরা। এর পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের জানায়, তাঁরা হাসপাতালে ঢুকতে পারেন। কিন্তু চিকিৎসক দেখবেন কি না, নিশ্চয়তা নেই। তাতে অবরোধ ওঠে। এত কিছুর পরেও অবশ্য ন্যাশনালের বহির্বিভাগ এ দিন চালু হয়নি।
এসএসকেএম হাসপাতালে বাবার কোলে অপেক্ষায় গুরুতর জখম নুর হোসেন। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
এসএসকেএমে এ দিন ভোগান্তির মুখ হয়ে ওঠে তিন বছরের নুর হোসেন মণ্ডল। তেহট্টের বাসিন্দা ওই শিশুটি মঙ্গলবার বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় ও ডান হাতের কনুইয়ে গুরুতর চোট পায়। জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে রাতেই ছেলেকে নিয়ে এন আর এসে আসেন বাবা আল্লারূপ মণ্ডল। সেখান থেকে আল্লারূপকে এসএসকেএমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এসএসকেএমের জরুরি বিভাগ নুরকে অস্থির বহির্বিভাগে দেখাতে বলে। আল্লারূপের কথায়, ‘‘টিকিট কেটে সাড়ে দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা পাইনি। শেষে সুপারের সঙ্গে দেখা করলে সুরাহা হয়।’’ বস্তুত, এ দিন এসএসকেএমের বিভিন্ন বহির্বিভাগে অপেক্ষারত রোগীর পরিজনেরা পরিষেবা চালু হতে দেরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
এ দিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার প্রথমে খোলাই হয়নি! রোগীর পরিজনদের আটকাতে সেখানে টিকিট কাউন্টারের সামনে কোল্যাপসিবল গেট বন্ধ করে রাখা হয়। এ ভাবে কিছু ক্ষণ চলার পরে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের সঙ্গে রোগীর পরিজনদের কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়। তখন কোল্যাপসিবল গেট খুলে দিলেও টিকিট দেওয়া নিয়ে শুরু হয় টালবাহানা। ফের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত টিকিট দেওয়া হলেও নির্দিষ্ট ঘরে চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অনেকে। বেলা ১১টা নাগাদ পরিস্থিতির বদল ঘটে।
এসএসকেএমের সুপার রঘুনাথ মিশ্রের অবশ্য দাবি, ‘‘বহির্বিভাগ কোনও সময়েই বন্ধ ছিল না। প্রতিদিনের মতো এ দিনও ১৪ হাজার রোগী পরিষেবা পেয়েছেন। ওয়ার্ডে পরিদর্শন করে বহির্বিভাগে পৌঁছতে চিকিৎসকদের দেরি হয়।’’ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘টিকিট দেওয়ার পরে চিকিৎসকেরা দেখবেন কি না, তা নিয়ে প্রাথমিক ভাবে কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছিল। বিষয়টি জানার পরে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাড়ে ১০টার মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। তা ছাড়া, অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিন রোগীর সংখ্যাও কম ছিল।’’
ন্যাশনাল প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওখানে বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার খোলা ছিল। অনলাইন রেজিস্ট্রেশনও হয়ছে। বহির্বিভাগ থেকে যে ইন্ডোরে রোগী ভর্তি হয়েছে, সেই তথ্যও দেখাতে পারি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy