প্রতি বছর বর্ষা এলেই রাস্তার কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে পড়ে। ফাইল চিত্র।
২০১২ সালে কলকাতা পুরসভার বাজেট-বক্তৃতায় তৎকালীন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন—‘নিয়মিত রাস্তার উপরিভাগ মেরামত করার ক্ষেত্রে আমরা আন্তরিক উদ্যোগ নিয়েছি।’ সেই বছর রাস্তা খাতে ১৯৯.৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।
তার ঠিক ১০ বছর পরে, ২০২২ সালে পুর বাজেট পেশ করে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানালেন, রাস্তা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৪০.৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১২-২০২২, এই ১১ বছরে রাস্তা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে প্রায় ১৪১ কোটি টাকা। সেই হিসেবে ২০১২ সালে শহরের ১৮৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রধান রাস্তা-সহ মোট ৪৬৩৬ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যেখানে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হত ৪.৩ লক্ষ টাকা, তা চলতি বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৩৫ লক্ষ টাকায়। কিন্তু এত কিছুর পরেও রাস্তার হাল ফিরেছে কি?
শহরবাসীদের একাংশের অভিজ্ঞতা বলছে, একেবারেই ফেরেনি। বরং, প্রতি বছর বর্ষা এলেই রাস্তার কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে পড়ে— এবড়োখেবড়ো, খানাখন্দে ভরা। আর পুজোর আগে সেই রাস্তা তাপ্পি দিয়ে সারানো হয়। কিন্তু রাস্তার স্বাস্থ্যের পরিবর্তন হয় না। যেমন পরিবর্তন হয় না, খারাপ রাস্তার জন্য দুর্ঘটনা ঘটলে কলকাতা পুরসভা ও শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর (কলকাতা বন্দর) বা রাজ্য সরকারের অন্য কোনও দফতরের মধ্যে চাপানউতোরের।
গত মাসেই বন্দর এলাকার কাঁটাপুকুর রোডে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল পুরসভার মেয়র পারিষদ রামপিয়ারি রামের ছেলে রামকিঙ্কর রামের। মৃতের পরিবারের অভিযোগ ছিল, বন্দরের অধীনস্থ রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু শহরের অন্যান্য বহু জায়গায় তো পুরসভা অধীনস্থ রাস্তার অবস্থা খারাপ। সে ক্ষেত্রে? উত্তরে রামপিয়ারি বলেন, ‘‘অনেক সময়ে কোন রাস্তা কোন দফতরের অধীনে, সেটাই জানা যায় না। তখন তার দায়িত্ব পুরসভার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়। পুরসভা পুরো চেষ্টা করে।’’ মেয়র পারিষদ (রাস্তা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘‘এই ক’দিন বৃষ্টি হওয়ায় মেরামতিতে সমস্যা হলেও পুজোর আগেই সব রাস্তা ঠিক হয়ে যাবে।’’ আর বছরের বাকি সময়? তাঁর দাবি, ‘‘বছরভরই পুরসভা রাস্তার দেখাশোনা করে।’’
যার পরিপ্রেক্ষিতে যাদবপুরের বাসিন্দা অহনা মজুমদার বলছেন, ‘‘এ দাবি আর নতুন কী! তবে রাস্তায় বেরোলে বোঝা যায়, আসলে কী অবস্থা।’’ শ্যামবাজারের বাসিন্দা তরুণ সেনগুপ্তের আবার বক্তব্য, ‘‘কোন রাস্তা কাদের দায়িত্বে, সেটা তো আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকের জানার কথা নয়। শুধু যাতায়াতের সময়ে খানাখন্দে না পড়াটা নিশ্চিত করা হোক।’’
২০১৬ সালে বাজেট-বক্তৃতায় শোভন জানিয়েছিলেন, শহরের প্রশস্ত ও সঙ্কীর্ণ রাস্তা ‘শরীরের ধমনী ও শিরার মতো।’ যার সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে পুরসভা আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করছে। আবার ২০১৯ সালে মেয়র হিসেবে প্রথম বাজেট পেশের সময়ে ফিরহাদ বলেছিলেন, ‘প্রশস্ত ও মসৃণ সড়ক শুধু যে স্বাচ্ছন্দ্য দেয় তাই-ই নয়, এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিচায়কও বটে। প্রাচীন এই শহরের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নে আমাদের আন্তরিকতায় কোনও ঘাটতি নেই।’
অর্থাৎ, বাজেট বক্তৃতার বয়ানে সামান্য পরিবর্তন হলেও মোদ্দা বিষয়টা একই। তাই পুর প্রধানের মুখ পাল্টায়। সময় পাল্টায়। কিন্তু শহরের রাস্তা? তারা বোধহয় ‘পরিবর্তন’-এ বিশ্বাসী নয়। এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy