প্রতীকী ছবি।
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আতঙ্কে মার্চের গোড়া থেকেই ব্যাহত হয়েছে দাঁতের চিকিৎসা। ফলে বিপদে পড়েছেন দাঁতের সমস্যায় ভোগা অসংখ্য মানুষ। বেশির ভাগ রোগীকেই যন্ত্রণা কমাতে ভরসা করতে হয়েছে ব্যথার ওষুধে। কারণ, সংক্রমণ এড়াতে ‘ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ দাঁতের জরুরি পরিষেবা ছাড়া বাকি চিকিৎসা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল।
দাঁতের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া একাধিক সংস্থার মতে, দীর্ঘ দিন চিকিৎসা করাতে না পারায় বাড়ছে রোগী। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা নেই বলেই দাবি তাদের। কারণ, বর্তমানে চিকিৎসা শুরু হলেও সংক্রমণ ঠেকাতে বিধি-নিষেধের জন্য তা ধীর গতিতে হচ্ছে।
লালারসের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, ফলে মুখের সেই অংশ নিয়েই কাজ করা চিকিৎসকেরা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নিতে চাননি। এই অবস্থায় কেউ কেউ অনলাইনে চিকিৎসা করেছেন। দাঁত তোলা, রুট ক্যানাল, ক্যাভিটির গুরুত্ব বুঝে চেম্বারে রোগী দেখেছেন তাঁরা। তবে তা তুলনায় অনেক কম। আগে ফোনে রোগীর সঙ্গে কথা বলে তাঁর কোভিড সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না, যাবতীয় তথ্যের মাধ্যমে জেনে নেওয়া হয়েছে। কী ভাবে রোগী দেখতে হবে তার নির্দেশিকা দাঁতের চিকিৎসকদের জানিয়ে দিয়েছে ‘ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’। হাসপাতাল, চেম্বার এবং রোগীদের ভাল করে জীবাণুমুক্ত করা, অটোক্লেভ যন্ত্রের ব্যবহার, চিকিৎসকদের পিপিই-গ্লাভস-মাস্ক পরে রোগী দেখা আবশ্যিক করা হয়েছে। এরোসোল (মুখের ভিতরে জল ও বাতাসের ঘূর্ণন) তৈরি করে এমন পদ্ধতি এবং এয়ারোটার যন্ত্রের ব্যবহার এই মুহূর্তে বন্ধ রাখতেও বলা হয়েছে নির্দেশিকায়।
নিয়ম মেনে এ সব করতে গিয়ে চিকিৎসার খরচ অনেকটাই যে বেড়েছে, মানছেন চিকিৎসকেরা। ‘ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্য চিকিৎসক অনিন্দ্য দাস বলেন, ‘‘একটি দাঁত তুলতে আগে ৫০০ টাকা নিতাম। কাউন্সিলের নির্দেশ মানতে গিয়ে রোগী প্রতি খরচ পড়ছে আড়াই হাজার টাকা! ফলে একটা দাঁত তুলতেই তিন হাজার টাকা ফি হওয়ার কথা। এত টাকা দিয়ে চিকিৎসা করানো ক’জন রোগীর পক্ষে সম্ভব?’’
শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের দাঁতের চিকিৎসক সৈকত দেব জরুরি রোগী দেখেছেন লকডাউনের সময়েও। এখন পরিষেবা শুরু করলেও কাউন্সিলের নিয়ম মেনে দিনে একটি শিফটে তিন জন করে রোগী দেখছেন। সুরক্ষার যাবতীয় বিধি মানতে গিয়ে চিকিৎসার খরচ যে বেড়েছে মানছেন তিনিও। তাঁর কথায়, “নিজের এবং রোগীদের সুরক্ষার সঙ্গে সমঝোতা করা সম্ভব নয়। যন্ত্রপাতি, চেম্বার জীবাণুমুক্ত করার সমস্ত প্রক্রিয়া মানা হচ্ছে। সেই খরচের ভার তো রয়েছেই।”
তবে আর্থিক সমস্যা থাকলে এখনও ভরসা সরকারি হাসপাতাল। আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষক-চিকিৎসক তীর্থঙ্কর দেবনাথ জানান, স্বাভাবিক ভাবেই এক চতুর্থাংশের বেশি রোগী কমে গিয়েছে। যদিও লকডাউনে জরুরি পরিষেবা চলছিল। তিনি বলেন, “বহির্বিভাগে ডাক্তারেরা পিপিই-ফেসশিল্ড, গ্লাভস, মাস্ক-সহ সমস্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বসছেন। দূরত্ব-বিধি মেনে রোগী দেখা ও দাঁত তোলা-সহ জরুরি পরিষেবা চলছে। দাঁতের স্কেলিং, ক্রাউন পরানোর মতো এরোসোল পদ্ধতির চিকিৎসা এখন বন্ধ আছে। শিশু এবং বড়, সব রোগীর থার্মাল স্ক্যান করে তবেই চিকিৎসা শুরু হচ্ছে।” ওই হাসপাতালের সুপার রাহুল সামন্ত বলেন, ‘‘চিকিৎসা চলছে। তবে করোনা-বিধি মানার জন্য চিকিৎসায় সময় অনেকটাই বেশি লাগছে। ফলে পরিষেবা পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, জরুরি না হলে দাঁতের চিকিৎসা এখন না করাই বাঞ্ছনীয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy