ডেঙ্গি দমনে মশার তেল ছড়াচ্ছে পুরসভার কর্মী। ফাইল চিত্র।
রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের মোট সংখ্যা এখন দশ হাজার ছুঁইছুঁই। এ মাসের প্রথম সপ্তাহের গোড়ায় সংখ্যাটি পৌঁছে গিয়েছিল আট হাজারের ঘরে। স্বাস্থ্য আধিকারিকেরাই জানাচ্ছেন, ২০১৭ থেকে ২০২১— এই পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৯ বাদ দিলে, সেপ্টেম্বরের গোড়ায় ডেঙ্গি সংক্রমণের প্রকোপ এ বছরই সব থেকে বেশি।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০১৯ সালে মশাবাহিত এই রোগের মারাত্মক বাড়াবাড়ি হয়েছিল। এ বারেও যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে তিন বছর আগের ছায়াই দেখতে পাচ্ছেন চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে বছরের ৩৬তম সপ্তাহ (১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৪ হাজার ৭৪৫ জন। আর শুধু ওই এক সপ্তাহেই (৩৬তম সপ্তাহ) আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৯৬০ জন। এ বছর ওই এক সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮৫৪ জন। আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮২৭৭ জনে। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য দফতরের জনস্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, তিন বছর আগে এই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা যা ছিল, তার প্রায় গা ঘেঁষে চলছে এ বছরের সংক্রমণ। বিষয়টি উদ্বেগের।
শুধু কলকাতা বা উত্তর ২৪ পরগনা নয়, মশাবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে জেলাগুলিতেও। এক আধিকারিকের কথায়, “২০১৯ বাদ দিয়ে বাকি বছরগুলির পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা এতটা বাড়েনি। তাই সব রকমের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে, অর্থাৎ শুধু ৩৬তম সপ্তাহে (সাত দিনে) ২০১৭ সালে আক্রান্ত হন ৮৪৪ জন এবং ২০১৮ সালে ১৩০৪ জন। অতিমারির সময়ে সংখ্যাটি কমে গিয়েছিল। ২০২০ সালে ৮৬ জন ও ২০২১ সালে ১৪১ জন আক্রান্ত হন। শেষ দুই বছরের মোট আক্রান্তের তুলনায় আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে চলতি বছরের ১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর, এই সাত দিনের সংক্রমণ।
বাড়বাড়ন্তের নেপথ্যে বিক্ষিপ্ত কয়েক পশলা বৃষ্টি একটি বড় কারণ বলে জানাচ্ছেন সংক্রামক রোগের চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী। তিনি জানান, টানা ভারী বৃষ্টি হলে ডেঙ্গিবাহী মশা এডিস ইজিপ্টাইয়ের বংশবিস্তার সম্ভব ছিল না। কোথাও মশার লার্ভা জন্মালেও সেগুলি ভেসে যেত। কিন্তু তা না হওয়ার ফলেই ক্রমশ প্রকোপ বাড়ছে। তাঁর কথায়, “মশাবাহিত এই রোগের বাড়াবাড়ির নেপথ্যে কয়েকটি বিষয় পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। তা হল ভাইরাস, মশা, মানুষ এবং পরিবেশ। আবার এই পরিবেশের মধ্যে বর্ষা, জল জমা, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা রয়েছে। এই বিষয়গুলির একটিও যদি ব্যাহত হয়, তা হলে প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু এখন সব ক’টিই একত্রিত হয়ে গিয়েছে।” তাঁর মতে, অক্টোবর, নভেম্বর জুড়ে ডেঙ্গির প্রকোপ ভাল মতোই চলবে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কিছুটা কমবে।
এসএসকেএম হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রাজা রায় বললেন, “বছর দুই পরপর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার প্রবণতা ডেঙ্গির ক্ষেত্রে দেখা যায়। এটা এই রোগের একটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলা যেতে পারে। ২০১৯-এর পরে এ বছর সেই চিত্র দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতেই সংক্রমণের এই চেহারা। এখনও বাকি সময়টা দেখতে হবে।” চিকিৎসকদের একাংশ এটাও জানাচ্ছেন, অতিমারির কারণে গত দু’বছরে অধিকাংশ জায়গাতেই মশা-দমন কর্মসূচি ব্যাহত হয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলায় তারই ফল মিলছে। শুধু ২০১৯ সালের ৩৬তম সপ্তাহে হাওড়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ১২২ জন। এ বার সংখ্যাটা ২১৪। কলকাতায় সেই সংখ্যা ছিল ১০৭। এ বারে ২১৩। কয়েকটি জেলাতেও বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy