Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

শ্বশুরের পাড়ায় ধোঁয়া, মশা পালাচ্ছে জামাইয়ের ওয়ার্ডে

শ্বশুর, মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলালচন্দ্র দাস। জামাই, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টেপাধ্যায়।

সীমানা: মাঝখান দিয়ে গিয়েছে খাল। এক দিকের রাস্তা কলকাতা পুরসভার ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে (ছবিতে বাঁ দিকে)। খালের অন্য পার মহেশতলা পুরসভার অন্তর্গত। অভিযোগ, এই খাল পেরিয়েই হানা দিচ্ছে মশার দল। নিজস্ব চিত্র

সীমানা: মাঝখান দিয়ে গিয়েছে খাল। এক দিকের রাস্তা কলকাতা পুরসভার ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে (ছবিতে বাঁ দিকে)। খালের অন্য পার মহেশতলা পুরসভার অন্তর্গত। অভিযোগ, এই খাল পেরিয়েই হানা দিচ্ছে মশার দল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০২:২৭
Share: Save:

‘দেশান্তরী করলে আমায় কেশনগরের মশায়’— লিখেছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায়। তবে দেশ পার না করলেও ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস ইজিপ্টাই এ বার শ্বশুরের এলাকা ছেড়ে পা বাড়িয়েছে জামাইয়ের এলাকায়! যা দেখেশুনে শ্বশুর বলছেন, ‘‘কোথাকার মশা কোথায় যাচ্ছে কে জানে! মশার পিছনে তো কেউ ছোটে না।’’ আর কলকাতা পুরসভার অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে সরস মন্তব্য, শ্বশুর-জামাই পারিবারিক ‘তরজা’য় কি এখন মশারাও যোগ দিচ্ছে?

শ্বশুর, মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলালচন্দ্র দাস। জামাই, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টেপাধ্যায়। ঘটনাটা হল, গত কয়েক দিনে রোজ মহেশতলা এলাকায় অন্তত ৫-৬ জন করে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছিলেন। বাধ্য হয়ে পরিস্থিতি সামলাতে ধোঁয়া দিতে শুরু করেন পুরকর্মীরা। আর সেই ধোঁয়াতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত মশকবাহিনীর। তারা এ বার ঢুকে পড়েছে বেহালায়, ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। যেটি প্রাক্তন মেয়র শোভনবাবুর। এতে রীতিমতো বিড়ম্বনায় কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। অবস্থা নিয়ন্ত্রণে দু’দিন ধরে লড়ছে দফতরের ১৪টি র‌্যাপিড অ্যাকশন দল। পুরসভা সূত্রের খবর, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ওই ওয়ার্ডের উপেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি রোডে।

পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কলকাতা পুরসভার ১৩১ এবং ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশ মহেশতলার ১২, ১৩ এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের লাগোয়া। কয়েক সপ্তাহ আগে নজরে আসে, ওই এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।’’ এর পরেই পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের সাপ্তাহিক বৈঠকে বলা হয়, মহেশতলার ওই ওয়ার্ডগুলিতে বংশবৃদ্ধি করছে এডিস। তা রুখতে ধোঁয়া দিতে শুরু করে পুরসভার দল। জেরবার ওই মশককুল তখন হানা দেয় ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। এখনও পর্যন্ত সেখানে ৬৪ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে পুরসভার খবর। এই পরিস্থিতিতে সেখানে বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় পুর প্রশাসন।

রবিবার প্রায় ১৩৫০টির মতো বাড়িতে অভিযান চলে। সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি পাত্র পরীক্ষা করে ১৫০টির মতো পাত্রে এডিসের লার্ভা এবং পিউপা মিলেছে বলে জানান পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস। সেগুলি মেরে ফেলা হয়েছে। সোমবারও চলে এই পর্ব। এ দিন অভিযানে শামিল হয়েছিলেন খোদ ডেপুটি মেয়র অতীন বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘যে তথ্য মিলেছে তাতে এটা স্পষ্ট, মহেশতলা থেকে উড়ে আসা মশা ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে কলকাতার ওই সীমানা এলাকায়।’’ যদিও পুরসভা আগেই জানিয়ে দিয়েছে, ধোঁয়া ছড়িয়ে মশা মারা যায় না। বরং সেই ধোঁয়া মশাকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পালাতে সাহায্য করে মাত্র। এই যুক্তি অবশ্য মানতে চাননি দুলালবাবু। তাঁর সাফ কথা, ‘‘আমরা ধোঁয়া দিচ্ছি। এবং মশা ও লার্ভা মেরে ফেলছি।’’

যুক্তি-পাল্টা যুক্তিতে অবশ্য কান দিতে নারাজ পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। এক অফিসার জানান, ওই এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার বাড়ি রয়েছে। সব বাড়ি গিয়ে জল জমার পাত্র পরীক্ষা করবে র‌্যাপিড অ্যাকশন দল। আগামী কয়েক দিন এই অভিযান চলবে। ডেঙ্গি দমনের কাজে কোনও গাফিলতি হবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Mosquito KMC Sovan Chatterjee Dulal Das
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy