অবরুদ্ধ: আবর্জনায় ভরে রয়েছে স্বর্ণময়ী খাল। মঙ্গলবার, হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
চিত্র ১: খালের নাম স্বর্ণময়ী। খাল অবশ্য নামেই। জল দেখা যায় না। কারণ, বছরের পর বছর ওই নিকাশি খালের পলি না তোলায় তার নাব্যতা ১০ ফুট থেকে নেমে গিয়েছে এক ফুটে। এলাকাবাসীর কাছে বর্তমানে সেটি আবর্জনা ফেলার জায়গা। প্লাস্টিকের কাপ থেকে শুরু করে থার্মোকলের অজস্র থালা-বাটি, কাচের বোতল— কী নেই! দক্ষিণ হাওড়ার নিকাশি ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই খালটি। এর সঙ্গে যুক্ত এলাকার ছোট-বড় সব নর্দমা।
চিত্র ২: ভূগর্ভস্থ জোড়া নর্দমার উপরে প্রায় ২০ ফুট জায়গা খোলা রাখা হয়েছিল হাঁটার জন্য কংক্রিটের সেতু তৈরি হবে বলে। কিন্তু ওই নর্দমা কার দায়িত্বে— সেই টানাপড়েনে ঢালাইয়ের কাঠ বসিয়েও তুলে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। কিন্তু নীচে আটকানো বাঁশ খোলা হয়নি। যার ফল সেখানেই জমছে আবর্জনার পাহাড়। ভূগর্ভস্থ ওই জোড়া নালার নাম ‘ডবল ব্যারেল।’ মধ্য হাওড়ার নিকাশির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নালা। এই নর্দমা দিয়ে ১০-১২টি ওয়ার্ডের নিকাশির জল বেরোয়।
হাওড়া শহরের নিকাশির বর্তমান হাল কেমন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে এই দুই ছবি। দু’টি গুরুত্বপূর্ণ নিকাশি নালা দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেগুলি যে মশার বংশবৃদ্ধির আদর্শ জায়গা হয়ে উঠেছে, তা নিয়ে দ্বিমত নেই কোনও মহলেই। আর এই কারণে উত্তরের পাশাপাশি বর্তমানে ডেঙ্গি-আতঙ্কে কাঁপছে দক্ষিণ হাওড়াও। স্বর্ণময়ী রোড থেকে দানেশ শেখ লেনের সরকারি আবাসন, বটানিক্যাল গার্ডেন থেকে পি কে রায়চৌধুরী লেন— সর্বত্র বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু ২৪/১ দানেশ শেখ লেনের সরকারি আবাসনেই গত কয়েক দিনে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ছ’জন। তাঁদের কয়েক জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি।
ওই আবাসনের ডব্লিউ ব্লকের বাসিন্দা কৃষ্ণা গুহ জানান, তাঁর ছেলে ভাস্কর গুহের ডেঙ্গি ধরা পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সারা বছর পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখা পাওয়া যায়নি। ছেলের ডেঙ্গি হওয়ার খবর পেয়ে দুই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী শুধু খোঁজ নিতে এসেছিলেন।’’ অন্য বাসিন্দারা জানালেন, তাঁদের ওই আবাসনে আরও পাঁচ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
একই অভিযোগ সরকারি ওই আবাসনের আর এক বাসিন্দা কৈলাসচন্দ্র খৈতানের। তিনি বলেন, ‘‘গোটা আবাসন আবর্জনায় ভরা। পাশের পার্কে জমা জলে প্রচুর লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল। পুরকর্মীরা এসে সেগুলি নষ্ট করেছেন। কিন্তু তার পরেও গোটা এলাকায় ডেঙ্গি হচ্ছে।’’ ডেঙ্গি হওয়ার পরে সদ্য হাসপাতাল থেকে মেয়েকে বাড়ি এনেছেন বটানিক্যাল গার্ডেন রোডের একটি আবাসনের বাসিন্দা স্বরূপ নাগ। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু পুর স্বাস্থ্যকর্মীই নন, এলাকায় সাফাইকর্মীদেরও দেখা যায় না। আমাদের বাড়ির পিছনে বড় নর্দমা পাঁক পড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার পরেও সেখানে আবর্জনা ফেলা চলছে।’’
প্রায় ঘণ্টা তিনেক ধরে এলাকায় ঘুরে এ কথা স্পষ্ট, পুরসভা অবিলম্বে নর্দমা পরিষ্কার এবং আবর্জনা সাফাইয়ে হাত না দিলে দক্ষিণ হাওড়ায় ডেঙ্গি আরও ভয়াবহ আকার নেবে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ৩৮ থেকে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে গত কয়েক বছরে অজস্র আবাসন ও ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে। কিন্তু নিকাশির সংস্কার নিয়ে
পুর প্রতিনিধিদের কোনও হেলদোল নেই। এমনকি ডেঙ্গি ছড়ানোর পরেও কেউ আসেননি। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর সবিতা সাঁতরা বলেন, ‘‘পুরসভা সাফাইকর্মীদের বসিয়ে দিয়েছে। ১০০ দিনের কর্মীরা সময় মতো বেতন পান না। তাই তাঁদেরও কাজে লাগানো যায় না। মূলত পুরসভার কর্মীর অভাবেই এলাকার এমন অবস্থা।’’
নিকাশি নিয়ে পুরসভাকে বারবার বলে, এমনকি ‘দিদিকে বলো’তে ফোন করেও কোনও সুরাহা না হওয়ায় মঙ্গলবার নিজেই ব্লিচিং পাউডার নিয়ে রাস্তায় নামেন হাড়ের চিকিৎসক সুজয় কুণ্ডু। একই ভাবে পুরসভার কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ দিন নিকাশি ও আবর্জনা পরিষ্কারে নামেন উত্তর হাওড়ার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy