পরিদর্শন: পূর্ব নারায়ণপুরে পূর্ত দফতরের গুদামে পুর প্রতিনিধিরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। অথচ মশার বাড়বাড়ন্ত এখনও কমছে না। ফুরোচ্ছে না মশাবাহিত রোগের জেরে মৃত্যু মিছিলও। অথচ পুর প্রশাসনগুলির দাবি, এলাকার জমা জল অনেকটাই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কেন মশার দাপট কমছে না, তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সংস্থার এলাকাতেই অসংখ্য লার্ভার খোঁজ পেল পুরসভা।
চিত্র ১) দক্ষিণ দমদমের ন’নম্বর ওয়ার্ডে সেনাবাহিনীর শিবির। প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত সেই শিবিরে গিয়ে পুরপ্রতিনিধিরা দেখলেন, বহু জায়গায় ঝোপজঙ্গল। কোথাও আবর্জনার স্তূপ, কোথাও বা জল জমে রয়েছে। আর সেই সব জায়গাতেই মিলল প্রচুর মশার লার্ভা।
পুরসভার প্রতিনিধিরা অবশ্য জানাচ্ছেন, ওই শিবিরের ঠিক বাইরেই ডান এবং বাঁ দিকে পাকা নিকাশি নালা তৈরি করে ঢাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশপাশের এলাকার জল ওই শিবিরের মধ্যে দিয়ে একটি খোলা নদর্মায় পড়ে। কিন্তু সেই খোলা নর্দমা পাকা করা হয়নি। জল জমে রয়েছে।
চিত্র ২) বিধাননগর পুর এলাকার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব নারায়ণপুরে পূর্ত দফতরের একটি গুদাম। ওই গুদাম ও সংলগ্ন এলাকা দেখে মাথায় হাত পুর প্রতিনিধিদের। কোথাও পরিত্যক্ত সামগ্রীর স্তূপে জমে আছে জল। কোথাও বা ঝোপজঙ্গল, আবর্জনা। নিকাশি নালা বন্ধ। বহু জায়গায় পড়ে থাকা পিচের ড্রাম, চৌবাচ্চা কিংবা জলের ট্যাঙ্কে জমা জল। সর্বত্র কিলবিল করছে মশার লার্ভা। সূত্রের খবর, ওই গোডাউন সংলগ্ন এলাকায় ইতিমধ্যেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তিন জন।
গুদাম এলাকায় পুর প্রতিনিধিদের অভিযানের খবর পেয়ে পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা হাজির হন। বিধাননগরের এক শীর্ষ পুর কর্তা উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘‘কেন এত দিন স্থানীয় পুরসভাকে খবর দেওয়া হয়নি।’’
চিত্র ৩) বিধাননগর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশি নালাগুলি থেকে বর্জ্য জল যে মূল নালার মাধ্যমে বাগজোলায় পড়ে, তা বন্ধ। সেখানে রীতিমতো ঝোপজঙ্গল তৈরি হয়েছে, জমেছে আবর্জনাও। আক্ষরিক অর্থেই মশার আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে এলাকা।
তিন জায়গাতেই দু’টি পুরসভার কর্মীরা মশা মারার জন্য ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়েছেন, তেলও স্প্রে করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এক সপ্তাহে বাগুইআটি এলাকায় তিন জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। জনমত গঠন করে বাসিন্দাদের নিয়ে একযোগে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ না করলে এই সমস্যা মেটানো মুশকিল।’’
দুই পুরসভার বক্তব্য, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি ওই দুই সংস্থাকে তাঁদের এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু আবেদনে কাজ হয়নি। তাই এ দিন বাধ্য হয়ে পদক্ষেপ করেছে পুরসভা।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই শিবিেরর ভিতরে আগে পুরকর্মীরা সাফাইয়ের কাজ করতেন। কিন্তু গত এক বছর ধরে পুর কর্মীরা সেখানে কাজ করতে পারেননি। সম্প্রতি ফের চিঠি দেওয়া হলে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজে অনুমতি মেলে। তাই এ দিন কাজ করা হয়েছে।
দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘অনেক লার্ভা মিলেছে। মশা যে শুধু শিবিরের ভিতরেই ঘুরবে, এমনটা তো হয় না। আশা করি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জনস্বার্থে বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’’
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, কী ধরনের লার্ভা মিলেছে সে সম্পর্কে পুরসভা জানালে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। তবে সেখানে নিয়মিত ফগিং করা-সহ মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ করা হয়।
সেনা বাহিনীর এলাকার পাশাপাশি পূর্ত দফতরের এলাকায় এমন হাল নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন বিধাননগরের মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায়। তাঁর অভিযোগ, পূর্ত দফতরকে পদক্ষেপ করার আবেদন জানানো হলেও সাড়া মেলেনি। তিনি আরও বলেন, ‘‘এ দিন তাঁদের আরও এক বার বলা হল। তাঁরা অবশ্য চলতি সপ্তাহের মধ্যে এলাকা পরিচ্ছন্ন করা, জমা জল সরানোর কাজ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy