Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

আলো চাই, তাই বাইকে চেপে ‘ছিনতাই’ কর্মীদের

গত চার-পাঁচ দিনে সিইএসসি-র কর্মীরা এসেছেন জেনে এ ভাবেই ছুটছেন অন্য এলাকার মানুষ।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

রোহন ইসলাম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ০২:০৫
Share: Save:

কাছের এলাকায় সিইএসসি-র কর্মীরা এসেছেন। খবর পেতেই ছুট দিল পাড়ার ছেলেরা। পৌঁছে দেখা গেল, অন্য পাড়ার ছেলেরা গোটা তিরিশেক মোটরবাইকে চেপে এসে আগেই তাঁদের ‘হাইজ্যাক’ করেছে।

গত চার-পাঁচ দিনে সিইএসসি-র কর্মীরা এসেছেন জেনে এ ভাবেই ছুটছেন অন্য এলাকার মানুষ। এমনও হয়েছে যে পাশের পাড়ায় কাজ সেরে কিছু পরেই আসার কথা কর্মীদের। কিন্তু বহু ক্ষণ পরেও তাঁরা না-আসায় জানা গিয়েছে, অন্য পাড়ার বাসিন্দারা সেই কর্মীদের তুলে নিয়ে গিয়েছেন।

বুধবার কেউ-ই বোধহয় ভাবিনি কোন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে চলেছি। প্রশাসন আগাম প্রস্তুতি নিয়েছিল। তাতে খামতিও ছিল হয়তো। কিন্তু, গত পাঁচ দিনের অভিজ্ঞতায় মনে হচ্ছে, আয়লার থেকেও ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় নাগরিকদের প্রস্তুতির অভাব ছিল যথেষ্টই। আমপানও হয়তো বাংলাদেশের দিকে যাবে, এমনটা ভেবে নিয়েছিলাম অনেকেই। মোবাইলে চার্জ দিয়ে রাখা নেই। জল মজুত করা নেই। জল ধরে রাখার পাত্র, মোমবাতি নেই। তার উপরে পাঁচ দিন ধরে না প্রশাসনের, না সিইএসসি, কারওই দেখা নেই। ফলে অভাবনীয় দুর্গতির মুখে পড়লেন অগুনতি নগরবাসী।

ঝড়ের পরের দিন বোঝা গেল, বেহালায় ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের আবাসনের সামনে তিনটি গাছ ভূপতিত। পাড়ার পথ রুদ্ধ। ২৪ ঘণ্টা পরেও রাস্তা সাফ করতে কেউ এলেন না। পুর প্রশাসন বা সিইএসসি-র কোনও পরিচিতকে ধরে পাড়ার অনেকেই বিদ্যুৎ ফেরাতে তদ্বির শুরু করলেন। দ্বিতীয় দিনেও কারও দেখা নেই। পাড়ার ছেলেরাই গাছ সরানোর ব্যবস্থা করলেন। বেহালায় তখন ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা পথে নামা শুরু করেছেন। কাটা গাছের টুকরো নিয়ে দুপুরেই রাজা রামমোহন রায় রোডে শুরু হল পথ অবরোধ। রাতে একটি গাছ কাটার ব্যবস্থা হল।

এ দিকে ফ্রিজের খাবার পচতে শুরু করেছে। দু’-তিন গুণ বেশি দামে পানীয় জল কিনতে হচ্ছে। স্নানের জল পেতে ভরসা দূরের নলকূপে। সেখানেও বিস্তর লাইন।

দূরত্ব-বিধি নিয়ে ভাবার সুযোগই নেই। এই যন্ত্রণার ছবি তৃতীয় ও চতুর্থ দিনেও। বেশ কিছু পরিবার অন্যত্র চলে গেল। এত দিন করোনার কারণে কেউ বাইরে পা রাখেননি। এই দুর্ভোগে কেউ দু’বার ভাবছেন না। সবার কাছে অবশ্য সে সুযোগ নেই৷ এরই মধ্যে পাড়ার মানুষ নিজেরাই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে থাকা ভেঙে পড়া ডালপালা ছেঁটে ফেলার ব্যবস্থা করলেন। এর মধ্যে এক দিনও দেখা মেলেনি ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের।

কিছু সহৃদয় মানুষের অক্লান্ত চেষ্টা ও বেশ কিছু টাকা খসিয়ে শেষমেশ ৯৬ ঘণ্টা পরে বিদ্যুৎ এল পাড়ার একাংশে। তা-ও এটি অস্থায়ী ব্যবস্থা। এই পঞ্চম দিনেও অনেকের বাড়ি বিদ্যুৎহীন। জলের সঙ্কটও চলছেই। রবিবার সিইএসসি টুইটে লাইন সারিয়ে দেওয়ার দাবি করলেও সোমবার সন্ধ্যা অবধি পাড়ার কাছেই জেমস লং- চৌরাস্তা মোড়ে বিদ্যুৎ এসে পৌঁছয়নি।

(লেখক কলেজ শিক্ষক)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy