প্রভাকর তুপ
মুম্বইয়ের শ্রীমতি আগরওয়াল হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী প্রভাকর তুপের জীবনে সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু, ১৫ বছর আগে এক শীতের সকালে নিরুদ্দেশ হয়ে যান তিনি। বৃহত্তর মুম্বইয়ের পানভেলের বাসিন্দা প্রভাকরের স্ত্রী জয়শ্রী ও ছেলে শেখর বহু খোঁজ করলেও কোথাও সন্ধান মেলেনি তাঁর। বাড়ির লোকের ধারণা হয়, কোনও মানসিক রোগের জেরেই এ ভাবে নিখোঁজ হয়েছেন প্রভাকর।
এর পরে হু হু করে সময় বয়ে যায় আরবসাগরের তীরে। স্বাভাবিক নিয়মে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তির খোঁজ না মেলায় সাত বছর পরে পরিবারের দরখাস্তের ভিত্তিতে প্রভাকরকে মৃত বলে ঘোষণা করে আদালত। নিয়ম মেনে প্রভাকরের জায়গায় তাঁর ছেলে শেখর চাকরি পান হাসপাতালে। অনেক কাগজ চালাচালির পরে বছর তিনেক আগে পারিবারিক পেনশনও পেতে শুরু করেন জয়শ্রী।
কিন্তু লকডাউনের মধ্যে খোঁজ মিলেছে প্রভাকরের। তা-ও আবার পশ্চিমবঙ্গে, উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে। গত অগস্ট মাসে প্রায় ৬০ বছরের এক ব্যক্তিকে সেখানে দিশাহীন ভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখে সুশান্ত ঘোষ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা তাঁকে নিয়ে আসেন। দুর্বল প্রভাকরকে খাবার দিয়ে খানিকটা সুস্থ করে জানতে চাওয়া হয় তাঁর পরিচয়। শুধু নিজের নাম ও বোনের নাম বলতে পেরেছিলেন তিনি। প্রভাকর যে ভাষায় কথা বলছিলেন, তা থেকে আর কিছু বুঝতে পারেননি সুশান্তবাবু।
আরও পড়ুন: অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, ফের সৌমিত্রের শারীরিক অবস্থার অবনতি
আরও পড়ুন: লোকসভার ক্ষত সারাতে নদিয়ায় কোমর বাঁধছেন মহুয়ারা
তিনি এর পরে যোগাযোগ করেন ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সঙ্গে। ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস শনিবার বলেন, “প্রতি রাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরেরা নিজেদের মধ্যে কথা বলি। প্রভাকরের ভিডিয়ো তুলে সুশান্তবাবু পাঠিয়েছিলেন। সেটি ব্যক্তিগত ভাবে অনেক অপারেটরের কাছে পাঠাই। জানা যায়, মরাঠি ভাষায় কথা বলছেন প্রভাকর।”
মুম্বইয়ের এক হ্যাম রেডিয়ো অপারেটর জয়প্রকাশ পুল্লাপুড়ি প্রভাকরের বাড়ির খোঁজে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন এর পরে। প্রভাকর জানিয়েছিলেন, তাঁর বোনের নাম মীনাক্ষী এবং তিনি পুলিশে চাকরি করেন। সেই সূত্র ধরে মীনাক্ষীকে খুঁজে বার করে পুরনো কথা জানা যায়। প্রভাকরের ভিডিয়ো পাঠালে তাঁকে চিনতে পারেন সকলেই। অম্বরীশ জানিয়েছেন, বাড়ির লোককে কলকাতায় এসে প্রভাকরকে নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে প্রথমে তাঁরা আসতে পারেননি। অম্বরীশ বলেন, “পূর্ণ লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে এক সময়ে আমাদের মনে হতে শুরু করে, প্রভাকরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না তাঁর পরিবার। শেখর যেহেতু প্রভাকরের চাকরি পেয়ে গিয়েছেন, এখন বাবা ফিরে গেলে তিনি সেই চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে পারেন, সেই আশঙ্কা রয়েছে।’’
শেষে মুম্বইয়ের সাতারা থানায় কর্মরত প্রভাকরের বোন তাঁকে ফেরাতে উদ্যোগী হন। মেজদা মধুকরকে উড়ানের টিকিট কেটে তিনি পাঠাচ্ছেন কলকাতায়। মীনাক্ষী বলেন, “স্ত্রী, ছেলে ওকে ফেরানোর কোনও উদ্যোগই নিচ্ছে না। কী করব! আমাদের তো দাদা! জানতে যখন পেরেছি, তখন ফিরিয়েই আনব। মধুকর ১২ নভেম্বর পুণে থেকে কলকাতায় যাবে। দাদাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে। আমাদের গ্রামের বাড়ি দাদার নামে রয়েছে। সেখানেই থাকবে। সমস্যা হলে আমাদের কাছেই রাখব।”
অম্বরীশ জানিয়েছেন, বছর দুয়েক আগে কাকদ্বীপ হাসপাতালে ঠিক এ ভাবেই খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল মহারাষ্ট্রের বন দফতরের এক কর্মীকে। তাঁকেও মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। ফিরে গিয়ে তাঁকে ফের পুরনো স্ত্রীকে বিয়ে করতে হয়। অম্বরীশবাবুদের ধারণা, প্রভাকরকেও এমনটা করতে হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy