Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
চিকিৎসার অধিকার থেকে কেন বঞ্চিত বিরল রোগে আক্রান্তেরা? কেন প্রশাসনের দরজা থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়? বিরল রোগের একটি, স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফির (এসএমএ) সচেতনতা মাস হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আসছে অগস্ট। কিন্তু সচেতনতা কি আদৌ আসছে?
Spinal Muscular Atrophy

Spinal Muscular Atrophy: হার না মানা লড়াই করেও বিস্তীর্ণ হচ্ছে মৃত্যু উপত্যকা

গত কয়েক মাসে রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে চার এসএমএ আক্রান্তের। সন্তান হারানো বাবা-মায়েরাই শোনাচ্ছেন মর্মান্তিক পরিণতি জেনেও হার না মানা পথের লড়াই।

বামদিকে বীর পারিক ও অভ্রদীপ ঘোষ। মাঝখানে আরুশ ইসলাম। ডানদিকে ইভান ইসলাম ও  সপ্তাংশু ঘোষ।

বামদিকে বীর পারিক ও অভ্রদীপ ঘোষ। মাঝখানে আরুশ ইসলাম। ডানদিকে ইভান ইসলাম ও সপ্তাংশু ঘোষ।

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২২ ০৬:৩৭
Share: Save:

স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি বা এসএমএ। পেশির সঞ্চালনকে নিয়ন্ত্রণ করে যে মোটর নিউরোন, তা নষ্ট হওয়াই জিনঘটিত এই বিরল রোগের কারণ। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী, টাইপ ওয়ান থেকে টাইপ ফাইভ পর্যন্ত হয় এসএমএ। এর ওষুধ বাজারে এলেও তা কেনা সাধারণের সাধ্যাতীত। ফলে ওষুধ না-পেয়ে লম্বা হচ্ছে মৃতের তালিকা। গত কয়েক মাসে রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে চার এসএমএ আক্রান্তের। সন্তান হারানো বাবা-মায়েরাই শোনাচ্ছেন মর্মান্তিক পরিণতি জেনেও হার না মানা পথের লড়াই।

বীর পারিক: জন্ম ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০। ওই বছরের ১২ অগস্ট টানা ১২ দিন ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থাতেই চিরঘুমে চলে যায় এসএমএ টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত ওই শিশু। আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ শিশুটির হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, চিকিৎসায় ধরা পড়ে রোগ। অসুখটা কী, সেটা বুঝতে এবং চিকিৎসার চেষ্টায় এক মাস সময় পেয়েছিলেন লেক টাউনের বিশাল এবং নীতু পারিক। প্রথম সন্তানের স্মৃতি আঁকড়ে সচেতন হয়েছেন পারিক দম্পতি। ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল তাঁদের একটি মেয়ে হয়েছে। অবিকল বীরের মুখ। বিশাল বলছেন, ‘‘বীরের সময়ে অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু এর পরে নীতুর তিন-চার মাসের গর্ভাবস্থায় জিনগত ত্রুটি আছে কি না, জানতে জেনেটিক পরীক্ষা হয়। এসএমএ বাহক বাবা-মায়ের সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে এই পরীক্ষা আবশ্যিক।’’

আরুশ এবং ইভান ইসলাম: এসএমএ টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয় এক বছর বয়সের আগেই। এক জনের রোগ ধরা পড়েছিল জন্মের ৪৫ দিনের মাথায়। অন্য জনের ৩৫ দিন পরে। দু’জনের রোগের প্রকাশ একই রকম। প্রথমে হাত-পা নেড়ে খেলা করলেও হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। আরুশের অসুখ ধরা পড়তে কিছুটা দেরি হয়। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ইভানের চিকিৎসায় দেরি হতে দেননি বহরমপুরের মনিরুল ইসলাম এবং উম্মেহানা খাতুন। গত বছরের শেষ দিকে আরুশ এবং চলতি মাসে ইভানকে হারিয়ে মনিরুলের আক্ষেপ, ‘‘বিজ্ঞানকে অবহেলা করে ধর্মের উপরে নির্ভরতা বাড়ালে কী হয়, তা বুঝলাম। আরুশের মৃত্যুর পরে বাড়িতে জেনেটিক টেস্টের কথা বলেছিলাম। কেউ বিশ্বাস করেননি।’’ দৃঢ় স্বরে বলেন, ‘‘আর ভুল হতে দেব না।’’

সপ্তাংশু ঘোষ: এসএমএ টাইপ টু আক্রান্ত, বছর তেরোর এই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে চলতি মাসের ১২ তারিখে, বেঙ্গালুরুতে। সেখানেই মেরুদণ্ডের বিশেষ অস্ত্রোপচার (স্কোলিয়োসিস কারেকশন) হয়েছিল তার। ভেন্টিলেশন থেকে ফিরলেও শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে এবং ডায়েরিয়ায় মৃত্যু হয় সপ্তাংশুর। গত পুজোর পরপরই মারা যান সপ্তাংশুর বাবা বরুণপ্রসাদ ঘোষ। তাঁর বহু চেষ্টায় ছেলে সবে বিদেশি ওষুধ নির্মাতা সংস্থার সৌজন্যে বিনামূল্যে ওষুধ পেয়েছিল। একা হয়ে যাওয়া মা সোমা ঘোষের পাশে দাঁড়ায় হুইলচেয়ারবন্দি কিশোর। পারিবারিক ব্যবসার হিসাবপত্র এবং নিজের চিকিৎসার ফাইল তৈরি করা— সবই সপ্তাংশু দক্ষ হাতে সামলাত বলে জানাচ্ছেন তার পরিচিতেরা। সে বিশ্বাস করত, অস্ত্রোপচার করে নিজের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে।

অভ্রদীপ ঘোষ: বটানিক্যাল গার্ডেনের বাসিন্দা, নবম শ্রেণির অভ্রদীপের মৃত্যু হয়েছে গত ১ অগস্ট। মা সুমনা ঘোষ এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না, কী থেকে কী হয়ে গেল। বটগাছ হয়ে আগলে রাখা ছেলেকে এক দিনের সামান্য জ্বরে চোখের সামনে নেতিয়ে পড়তে দেখেছিলেন সুমনা। হাসপাতালে নিয়ে যেতেই সব শেষ। এখনও ছড়িয়ে আছে হুইলচেয়ার, ওয়াকার, বই-খাতা, অজস্র পুরস্কার আর কিশোরের ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন। এই সে দিনও রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়েছিল সে। স্কুলে বরাবর প্রথম হত। পড়াশোনায় ভাল ফল করতে অনুশাসন মেনে চলত। সুমনা বলেন, ‘‘হুইলচেয়ার ছাড়া চলতে পারত না। সেটাও ওর ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছেটা টলাতে পারেনি। ওকে আঁকড়ে তো জীবনের এতগুলো বছর পেরোলাম। হঠাৎ সব দৌড়ঝাঁপ বন্ধ। চিকিৎসার আশায় সর্বত্র দৌড়েছি। সরকারের তরফ থেকে শুধুই ‘না’ শুনে ফিরেছি।’’

(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Spinal Muscular Atrophy Rare Disease
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy