Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Death

‘ঠাকমা’র আদরে ভাগ, বহিরাগত বলে গুরুত্ব কম, অবসাদেই কি আত্মহত্যা কিশোরের

ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডে তপতী বিশ্বাসের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন সানির মা। সেই সূত্রে সানির দায়ভার নিয়েছিলেন তপতীদেবী।

অলংকরঁণ: শৌভিক দেবনাথ।

অলংকরঁণ: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২০ ২১:২১
Share: Save:

পরিবারে গুরুত্ব কমছে। ঠাকমার আদরেও ভাগ বসাচ্ছে অন্যরা। কেউ আগের মতো আর তাকে ভালবাসে না। উল্টে তাকে দিয়েই বাজার-হাট করানো হচ্ছে। কারণ সে ‘বহিরাগত’। এ সব নিয়েই কি শিশুমনে বাসা বেঁধেছিল অবসাদ। তার জেরেই কি ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডের বাড়ির ছাদ থেকে ঝুলে পড়ে বছর দশেকের এক কিশোর? অবসাদে আত্মহত্যা না কি খুন, সানি মণ্ডলের মৃত্যু রহস্যে দু’দিন পরেও ইতি টানা যায়নি। তদন্তে নেমে নানা দিক খতিয়ে দেখছে লেক থানার পুলিশ। অবসাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হলেও, খুনের তত্ত্বও উড়িয়ে দিচ্ছে না তারা।

ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডে তপতী বিশ্বাসের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন সানির মা। সেই সূত্রে সানির দায়ভার নিয়েছিলেন তপতীদেবী। সানি তাঁকে ঠাকমা বলেই ডাকত। নিজের নাতির মতোই সানিকে মানুষ করছিলেন তিনি। বুধবার ঝুলন্ত অবস্থায় সানির দেহ উদ্ধার হয়। তার পরেই উঠছে নানা প্রশ্ন। বাবা-মায়ের দাবি, সানিকে খুন করা হয়েছে। না হলে লোহার রড থেকে পাইপ বার করে কেউ এ ভাবে আত্মহত্যা করতে পারে না। মায়ের কথায়, ‘‘ওর তো মাত্র দশ বছর বয়স!’’ প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি তাকে কেউ খুন করেছে? না কি কোনও কারণে শিশুমনে অবসাদ বাসা বেঁধেছিল?

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে যে বিষয়গুলি জানা যাচ্ছে, বছর দেড়েক বয়সেই ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডের বাড়িতে চলে আসে সানি। স্বভাবে সে ছটফটে ছিল। বাড়ির ছাদের চিলেকোঠাই ছিল তার জগৎ। ঠাকমা তপতী বিশ্বাসের কাছেই আবদার-বায়না করত। বৃদ্ধাও সানির বায়না মেটাতেন। দু’জনের মধ্যে সম্পর্কও ছিল গভীর। বাবা-মায়ের কথা তার মনেই পড়ত না। এমনকি তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও কমে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন: স্কুটির চাকায় হাওয়া দেওয়া নিয়ে বচসার জেরে হাতুড়ি দিয়ে মার, মৃত্যু ব্যবসায়ীর

২০১৭ সালে ছেলে সঞ্জীবের বিয়ে দেন তপতীদেবী। তাঁর দু’টি ছেলে। ধীরে ধীরে দুই নাতিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তপতীদেবী। পুলিশি খোঁজখবরে জানা গিয়েছে, সঞ্জীবের দুই ছেলেকে সহ্য করতে পারত না সানি। গত কয়েক মাস ধরে বিষয়টি আরও চোখে পড়ার মতো হয়ে দাঁড়ায়। তপতীদেবীও তাকে মাঝেমধ্যে বকাঝকা করতেন। খুব একটা ভাল চোখে দেখতেন না তাঁর পুত্রবধূও। তাই সানি চিলেকোঠাতে বেশির ভাগ সময় কাটাত। তার শিশুমনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারী আধিকারিক থেকে থেকে মনবিদরাও।

বাড়ির ছোটখাটো কাজও তাকে দিয়ে করানো হত। ছাদের কাপড় তোলা থেকে বাজার— মাঝেমধ্যেই করতে হত তাকে। সানির বাবা-মায়ের অভিযোগ, তপতীদেবীর পুত্রবধূ সানিকে পছন্দ করতেন না। বকাঝকাও করতেন তিনি। তাঁকে গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তেজনা ছড়ায় ওই এলাকায়। পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেন সানির বাবা-মা।

আরও পড়ুন: প্রশ্ন তুলেও ঐক্যের সুর সর্বদলে, দৃঢ় ভাবে পাশে আছি, বললেন মমতা

বুধবার দুপুরে সানিকে ওই বাড়ির ছাদ থেকে শুকনো কাপড় তুলতে পাঠানো হয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তার কয়েক ঘণ্টা পর, ওই কিশোরের উদ্ধার হয় গলায় পাইপের ফাঁস দেওয়া অবস্থায়। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যা মনে হলেও, এর নেপথ্যে অবসাদও কাজ করতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ।

মনোবিদ সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘এই বয়সের শিশু কী করে আত্মহত্যা করতে পারে সেটাই বিস্ময়ের। তাকে কোনও অত্যাচার সইতে হয়েছে নাকি নিজেই অন্য দুই শিশুর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে কোনও জটিল মনস্তত্বে ভুগছে সেটা খতিয়ে না জানলে তার মনের হদিশ পাওয়া মুশকিল।’’ তাঁর মতে, সমাজে অনেকেই অনেক শিশুর দায়িত্ব নেন, তার পর সেই দায় পালনে ফাঁক থাকে। এ ক্ষেত্রে যদি এমন হয়, তবে অবশ্যই এই মৃত্যুর দায় পরিবারেরও বলে মনে করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘৮-১২ বছর বয়স শিশুদের বোধবুদ্ধি সংবেদন তৈরি হওয়ার বয়স। এই সময় যদি আদর ভালবাসায় খামতি পড়ে, তারা তা ঠিকই বোঝে। তখন এমন কাউকে পাশে লাগে যে তাকে কেন্দ্র করে বাঁচতে ও ভালবাসতে পারবে। তেমন কেউ না থাকলে তার অবসাদ আসা স্বাভাবিক। একাকিত্ব আসাও খুব স্বাভাবিক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Suicide Depression Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy