প্রতীকী ছবি।
বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে ছড়াচ্ছিল দুর্গন্ধ। সেই ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সঙ্গে আবাসনের অন্যদের তেমন সম্পর্ক ছিল না। ফলে তাঁরা যে দু’দিন ধরে বাড়ির বাইরে বেরোননি, তা খেয়াল করেননি কেউ। শনিবার দুপুরে দমদম ক্যান্টনমেন্টের মহেন্দ্র কলোনি এলাকার একটি আবাসনের সেই ফ্ল্যাট থেকে তীব্র কটু গন্ধ পেয়ে খবর দেওয়া হয় থানায়। দমদম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙে ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে এক যুবক এবং এক যুবতীর দেহ উদ্ধার করে। যুবকের দেহ মেঝেতে পড়ে ছিল। যুবতীর দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় মেলে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম অনিকেত বন্দ্যোপাধ্যায় (৪০) এবং দেবদ্যুতি বন্দ্যোপাধ্যায় (৩৭)। বছর ছয়েক ধরে তাঁরা ওই ফ্ল্যাটে ভাড়ায় থাকতেন। সম্পর্কে তাঁরা ভাই-বোন। বাড়ি নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে এলাকায় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন তাঁরা। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার হবে। পুলিশ ফ্ল্যাটের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
ওই আবাসনের অন্য বাসিন্দারা জানান, এ দিন সকাল থেকেই দুর্গন্ধ পাচ্ছিলেন তাঁরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গন্ধ বাড়তে থাকায় বোঝা যায়, তা আসছে ওই ফ্ল্যাট থেকে। দুপুরের দিকে খবর দেওয়া হয় থানায়। পুলিশ জানিয়েছে, দরজা ভেঙে ফ্ল্যাটে ঢুকে তারা দেখে, একটি ঘরের মেঝেয় পড়ে রয়েছে অনিকেতের দেহ। ওই ঘরেরই সিলিং থেকে ঝুলছিল দেবদ্যুতির দেহ। দু’টি দেহেই পচন ধরে গিয়েছিল। আবাসনের বাসিন্দারা জানান, গত দু’ দিন ধরে তাঁদের বাইরে দেখা যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনিকেত ও দেবদ্যুতি বছর ছয়েক আগে ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। তাঁদের সঙ্গে এক বৃদ্ধা মহিলাও থাকতেন। তাঁকে নিজেদের মা বলে পরিচয় দিতেন অনিকেতরা। ওই আবাসনের বাসিন্দা সুব্রত ঘোষ বলেন, “কারও সঙ্গেই বিশেষ কথা বলতেন না ওঁরা। এক মহিলা ওঁদের সঙ্গে থাকতেন। তাঁকে মা বলে পরিচয় দিতেন ওঁরা। বছর দুয়েক আগে ওই মহিলা পাড়ার ক্লাবে এসে অভিযোগ জানান, তাঁকে মেরে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। ক্লাবের ছেলেরা থানায় খবর দিয়েছিল।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পরে জানা যায়, ওই মহিলা তাঁদের পরিচারিকা ছিলেন। অনিকেতরা শেয়ারের ব্যবসা করতেন বলে জানিয়েছিলেন। অভিযোগ ওঠে, ওই মহিলার বেতনের টাকা তাঁকে না দিয়ে শেয়ারে খাটিয়ে বেশি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁরা। পরে তিনি টাকা চাইতে গেলে তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে।
দমদম থানার পুলিশ জানিয়েছে, ঘরের ভিতর থেকে দু’জনের কিছু সচিত্র পরিচয়পত্র পাওয়া গিয়েছে। তাতে নদিয়ার কৃষ্ণনগরের ঠিকানা রয়েছে। সেখানকার কোতোয়ালি থানার পুলিশকে ঘটনাটি জানানো হয়েছে। সেখান থেকে তাঁদের পরিজনদের খোঁজ মিলবে বলে মনে করছে পুলিশ। বাজারে অনিকেতদের অনেক দেনা ছিল। তাঁর ফ্ল্যাটের মালিক হ্যারিস রাধাকৃষ্ণন জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরে তাঁরা বাড়ি ভাড়াও মেটাতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy