Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Murder

দেহ উদ্ধার মথুরাপুরে, যাদবপুরে মিলল বাইক, বিয়ের মুখেই রহস্যমৃত্যু

বিয়ের ঠিক ১০ দিন আগে রহস্যজনক ভাবে রেললাইনের উপর পাওয়া গেল ৩১ বছরের এক যুবকের দেহ।

মৃত যুবক অমিত ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

মৃত যুবক অমিত ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৫:১৬
Share: Save:

বিয়ের ঠিক ১০ দিন আগে রহস্যজনক ভাবে রেললাইনের উপর পাওয়া গেল ৩১ বছরের এক যুবকের দেহ। গোটা ঘটনায় রহস্য আরও বেড়েছে কারণ, ওই যুবকের বাইক পাওয়া গিয়েছে তাঁর দেহ থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে! নিহতের পরিবারের অভিযোগ, রেল পুলিশে অভিযোগ জানানোর পরেও তারা তদন্তে আদৌ সক্রিয় নয়।

পূর্ব যাদবপুর থানা এলাকার মুকুন্দপুরের বাসিন্দা বছর একত্রিশের অমিত ঘোষ। পারিবারিক হোটেল এবং গেস্ট হাউসের ব্যাবসা দেখাশোনা করতেন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে হঠাৎই নিঁখোজ হয়ে যান তিনি।

অমিতের বাবা স্বপন ঘোষ জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ অন্য দিনের মতোই খাওয়াদাওয়া সেরে শুতে গিয়েছিলেন অমিত। পরের দিন সকালে পরিবারের লোকজন দেখেন অমিত নেই। বাইকও নেই। প্রথমে কেউ বিশেষ উদ্বিগ্ন হননি। কারণ, মাঝে মাঝেই অ্যাকোরিয়ামের জন্য মাছ কিনতে ভোরবেলা বেরোতেন তিনি। কিন্তু বেলা পর্যন্ত না ফেরায় ফোন করলে দেখা যায়, তাঁর ফোন সুইচড অফ।

আরও পড়ুন: হামলার মূল্য চোকাতেই হবে দোষীদের, হুঁশিয়ারি মোদীর, নাম না করে কড়া বার্তা পাকিস্তানকেও​

অমিতের হবু স্ত্রী বাঘাযতীনের বাসিন্দা শ্রাবণী সেন বলেন, “বিকেলে পূর্ব যাদবপুর থানা থেকে দুই পুলিশ অফিসার এসে বলেন অমিতের দেহ মথুরাপুর স্টেশনের কাছে দুই এবং তিন নম্বর লাইনের মাঝখানে পাওয়া গিয়েছে। পকেটে থাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে প্রাথমিক ভাবে শনাক্ত করা হয় ওকে।”

আরও পড়ুন: সিরিয়ার কায়দায় পুলওয়ামায় হামলা হতে পারে, আগাম জেনেও নেওয়া যায়নি ব্যবস্থা!

পরে পরিবারের লোকজন দেহ শনাক্ত করেন। পুলিশ সূত্রে তাঁরা জানতে পারেন, অমিতের মাথায় দু’টি গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিল। বাকি দেহে কোনও আঘাত ছিল না। শ্রাবণী জানান, গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি তাঁদের রেজিস্ট্রি হয়। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারিই তাঁদের আনুষ্ঠানিক বিয়ের দিন ঠিক করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘৮ তারিখ বিকেলেও অমিতের সঙ্গে আমার কথা হয়। তখনও তো সব ঠিকঠাকই ছিল।’’

আরও পড়ুন: ‘সন্ত্রাসকে ভয় করি না, অন্য ছেলেকেও দেশের কাজেই পাঠাব’, বলছেন নিহত জওয়ানের বাবা

অন্য দিকে ঘটনার পর বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করতে গিয়ে রহস্যের সন্ধান পান পরিবারের লোকজন। অমিতের বাড়ির ডাইনিং রুমে লাগানো ক্যামেরায় দেখা যায়, ৮ তারিখ রাত দেড়টা নাগাদ ফোন হাতে নিয়ে চিন্তিত মুখে পায়চারি করছে অমিত। পর পর ফোন আসছে। এর পরই রাত আড়াইটে নাগাদ অমিত সিসি ক্যামেরার লাইন বন্ধ করে দেয়। সেটাও দেখা গিয়েছে ফুটেজে।

রহস্য আরও রয়েছে। ১০ তারিখ অমিতের বাইক পাওয়া যায় গরফা থানা এলাকার ঝিল রোডে। ওই জায়গা থেকে মথুরাপুর অনেক দূর। তা ছাড়াও ঝিল রোড থেকে নিকটতম রেল স্টেশন যাদবপুর বা ঢাকুরিয়ার দূরত্ব দেড় কিলোমিটারের বেশি। প্রাথমিক ভাবে বারুইপুরের রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেহটি পাওয়া গিয়েছে সকালে। তা হলে রাতে ঝিল রোড থেকে কিসে করে স্টেশনে পৌঁছল অমিত? পরিবারের দাবি, অমিতের মোবাইল ফোনের কোনও হদিশ মেলেনি। অথচ তাঁর পকেটে থাকা মানি ব্যাগ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। প্রায় দু’হাজার টাকা ছিল ব্যাগে, তা-ও পাওয়া গিয়েছে।

সেখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে, কী ভাবে মথুরাপুর পৌঁছলেন অমিত? তিনি কি একা ছিলেন না কি অন্য কেউ ছিল তাঁর সঙ্গে? পাশাপাশি কার বা কাদের ফোন পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন অমিত? স্বপনবাবুর অভিযোগ, “আমি সমস্ত বিষয়ে বিশদে জানিয়ে অভিযোগ জানাতে যাই বারুইপুর জিআরপি থানায়। সেখানে ওই অভিযোগপত্র নিতে অস্বীকার করা হয়। পুলিশের বলে দেওয়া বয়ান অনুযায়ী আমাকে লিখতে বলা হয়।”

রেল পুলিশের এক কর্তা যদিও অভিযোগ নেওয়া হয়নি বলে মানতে চাননি। তিনি বলেন, “অমিতের পরিবার তদন্ত চেয়েছেন। আমরা সেই অনুযায়ী তদন্ত শুরু করেছি।” তবে পরিবারের সন্দেহ অমিতের কয়েক জন বন্ধু এবং বান্ধবীকে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy