Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Bahala

বেলাগাম জীবনে বাধা, ডিভোর্সের জন্য চাপ, বেহালায় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে মাকে খুন করল মেয়ে

মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেখানেই একটি ফ্ল্যাটে স্বামী ভূপাল চক্রবর্তী, মেয়ে স্নেহার সঙ্গে থাকতেন শম্পা দেবী।

খুনের ঘটনার পর তদন্তে পুলিশ। (ইনসেটে) রাস্তার উপর পড়ে রয়েছে বিছানার চাদরে মোড়া বৃদ্ধার মৃতদেহ। —নিজস্ব চিত্র

খুনের ঘটনার পর তদন্তে পুলিশ। (ইনসেটে) রাস্তার উপর পড়ে রয়েছে বিছানার চাদরে মোড়া বৃদ্ধার মৃতদেহ। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ১৮:০৯
Share: Save:

মেয়ে-জামাইয়ের বেলাগাম জীবনযাত্রায় বাধা মা। তাই পরিকল্পনা করে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে মাকে খুন করল মেয়ে। রীতিমত ছক কষে মায়ের দেহ ট্রলি ব্যাগে ভরে পাচার করার পথে, ট্রলির চেন ছিঁড়ে দেহ পড়ে যায় রাস্তায়। চোখে পড়ে যায় রাস্তার পাশের একটি আবাসনের বাসিন্দার। সেই সূত্র ধরেই শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে গেল মেয়ে জামাই।

ঘটনাটি ঘটেছে, পর্ণশ্রী থানা এলাকার বাসুদেবপুর রোডে। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেখানেই একটি ফ্ল্যাটে স্বামী ভূপাল চক্রবর্তী, মেয়ে স্নেহার সঙ্গে থাকতেন শম্পা দেবী।

রবিবার স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রথম দেখেন রাস্তার পাশে একটি চাদরে মোড়া কিছু পড়ে রয়েছে। বিছানার চাদরে মোড়া বড়সড় পোটলার পাশেই ছিল একটি মেরুণ রঙের ট্রলিব্যাগ। চাদরের ফাঁক থেকে মানুষের পা বেরিয়ে আসতে দেখেই আঁতকে ওঠেন বাসিন্দারা। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পর্ণশ্রী থানা থেকে পুলিশ এসে ওই চাদর খুলে দেখে এক মহিলার দেহ। স্থানীয়রা দেহটি শম্পা চক্রবর্তীর বলে শনাক্ত করেন। গলায় ধারালো অস্ত্রের ক্ষত। মুখে প্লাস্টিক চাপা দেওয়া।

পুলিশ মহিলার ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখেন, বাইরে থেকে তালা বন্ধ। দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে পুলিশ। তদন্তকারীরা ঘরে থাকা রক্তের দাগ এবং সব্জি কাটা ছুরি দেখে বুঝতে পারেন ওই ফ্ল্যাটেই খুন করা হয়েছে ৪৭ বছরের শম্পাকে। ঘরে তল্লাশি করতে গিয়ে খাটের তলা থেকে পাওয়া যায় একটি বেড়ালের অচেতন দেহ। মুখে গলায় বেল্টের ফাঁস। পর্ণশ্রী থানার আধিকারিকদের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে পৌঁছন গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা এবং কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা। তিনি বলেন,‘‘তদন্তে স্পষ্ট শম্পার দেহে জড়ানো বিছানার চাদর এবং দেহ বাঁধার নাইলনের দড়িও শম্পার ফ্ল্যাট থেকে নেওয়া হয়েছে।”

আরও পড়ুন: কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির টোপ, ১০ লাখ টাকা খোয়ালেন রেলকর্মী

এর মধ্যেই যেখানে দেহটি পাওয়া গিয়েছিল, তার উল্টোদিকের আবাসনের এক বাসিন্দা পুলিশকে জানান শনিবার রাতে তাঁর দেখা ঘটনা। তিনি বলেন, ‘‘ রাত ২টো নাগাদ আমার স্বামী বাড়ি ফেরেন। তিনি বলেন, নীচে রাস্তায় একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে। তাই শুনে আমি ব্যালকনিতে গিয়ে দেখি দিয়া (স্নেহার ডাক নাম) এবং সঙ্গে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে।” ওই মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, পরে ওই ছেলেটিকে স্নেহার স্বামী হিসাবে চিনতে পারেন তিনি। তারপর তিনি দেখেন স্নেহার স্বামী একটি সাইকেলে কোনও ভারী কিছু চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ঘটনাটি রাত তিনটে নাগাদ। সাইকেল থেকে ভারী জিনিসটা পড়ে যাওয়ার পর পাশের একটি বন্ধ গ্যারাজের শাটার খোলার চেষ্টা করে ওই যুবক। তারপর হঠাৎই ওই মহিলাকে দেখতে পেয়ে সাইকেল নিয়ে চলে যায়। ওই প্রত্যক্ষদর্শী নিজের মোবাইলে রাস্তায় দাঁড়ানো অবস্থায় স্নেহার ছবিও তোলেন। তিনি সেই ভিডিয়ো পুলিশকে দেন।

ওই মহিলার বয়ান থেকেই পুলিশের সন্দেহ হয়, খুনের সঙ্গে শম্পার মেয়ে এবং জামাইয়ের যোগ থাকতে পারে। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্নেহা, তার স্বামী রাজু সামুই এবং শম্পার স্বামী পেশায় বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী ভূপালকে আটক করে জেরা করা শুরু করে পুলিশ।

তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, জেরার মুখেই পুলিশ জানতে পারে, গত নভেম্বরে নিজের পছন্দেই রাজুকে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করে স্নেহা। পুলিশ সূত্রে খবর, রাজুর আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায়, ভূপাল জামাইকে তাঁর ফ্ল্যাটে থাকতে বলেন। সেখানে মাস তিনেক ছিল রাজু। কিন্তু ওই তিন মাসে রাজুর সঙ্গে বিরোধ বাধে শম্পার। পুলিশ সূত্রে খবর, ভূপাল পুলিশকে জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকেই মেয়েকে নিয়ে রাত করে মদ্যপান করে বাড়ি ফেরা শুরু করে রাজু। স্নেহার বেলাগাম জীবন নিয়ে প্রতিবাদ করলেও, রাজুর প্রশ্রয়ে জীবনযাত্রা আরও বেলাগাম হতে থাকে বলে অভিযোগ। এই নিয়ে বিরোধের জেরে রাজুকে ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যেতে বলেন শম্পা। তা নিয়ে মেয়ের সঙ্গেও মনোমালিন্য হয় শম্পার।পুলিশ সূত্রে খবর, জেরার মুখে স্নেহা এবং রাজু স্বীকার করেছেন যে, শম্পা তাদের ডিভোর্সের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন।

আরও পড়ুন: ‘খুব বিপদে আছি’, বিমানে রাহুলকে পেয়ে ক্ষোভে কেঁদে ফেললেন কাশ্মীরের মহিলা, দেখুন ভিডিয়ো

তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, শনিবার রাত ১টা নাগাদ শম্পার ফ্ল্যাটে পৌঁছয় রাজু। ভূপাল রাতের ডিউটিতে বাইরে ছিলেন। বাড়িতে স্নেহা ছাড়া ছিলেন শম্পা। পুলিশের দাবি, স্নেহা এবং রাজু ঘুমের মধ্যেই গলা টিপে শ্বাসরোধ করে শম্পাকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তার মধ্যে ঘুম ভেঙে যায় শম্পার। তিনি বাধা দেওয়ার আগেই তাকে শ্বাসরোধ করে রাজু। সাহায্য করে শম্পা। জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, এর মধ্যেই ঘরে থাকা শম্পার পোষা বেড়ালটি প্রচন্ড চিৎকার করতে থাকে। রাজু ভয় পেয়ে যায়, বেড়ালটি ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে ভেবে। তখন বেড়ালটির গলায় বেল্ট দিয়ে ফাঁস দিয়ে খাটের তলায় ছুঁড়ে ফেলে সে। পরে সকালে পুলিশ বেড়ালটিকে উদ্ধার করেছে। ফাঁসের কারণে নিস্তেজ হয়ে পড়লেও, উদ্ধার হওয়ার পর বেড়ালটি সুস্থ হয়ে উঠেছে বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে।

পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় স্নেহা এবং রাজু জানিয়েছে, সব্জি কাটার ছুরি দিয়ে গলা কাটে। দেহটি ভাল করে বিছানার চাদরে বেঁধে ট্রলিতে ভরে। পরিকল্পনা ছিল ট্রলিতে ভরে দেহটি কোথাও পাচার করে দেওয়ার। কিন্তু সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে ট্রলির চেন ছিড়ে দেহটি পড়ে যায়। পড়শি মহিলাকে ফ্ল্যাটের বারান্দায় দেখে সাহস করে দেহটি আর তুলে নিয়ে যেতে পারেনি রাজু।

ধৃতদের সোমবার আলিপুর আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Behala Murder Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy