Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মেয়ে-জামাই নিরুপায়, পথে ঠাঁই অসুস্থ বাবার

শহরের এক ফুটপাতে মৃত্যুর অপেক্ষায় শুইয়ে দিয়ে এসেছিলেন বাবাকে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে পরিচারিকার কাজ করেন মেয়ে।

অসহায়: আর জি কর হাসপাতাল চত্বরে একটি গাছের তলায় ওই বৃদ্ধকে শুইয়ে রেখেছেন তাঁর মেয়ে-জামাই। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: আর জি কর হাসপাতাল চত্বরে একটি গাছের তলায় ওই বৃদ্ধকে শুইয়ে রেখেছেন তাঁর মেয়ে-জামাই। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:২৪
Share: Save:

জবাব দিয়ে দিয়েছেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। বৃদ্ধের আর কোনও চিকিৎসা করা সম্ভব নয়।।

এ বার? স্বামী আর দুই ছেলেকে নিয়ে দমদমে ভাড়ার একচিলতে ঘরে গাদাগাদি করে বেঁচে থাকার লড়াই চালান ওই বৃদ্ধের মেয়ে। সেখানে দুই পা পচে গিয়ে গন্ধ বেরনো, অশক্ত বাবার ঠাঁই কোথায়?

তাই শহরের এক ফুটপাতে মৃত্যুর অপেক্ষায় শুইয়ে দিয়ে এসেছিলেন বাবাকে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে পরিচারিকার কাজ করেন মেয়ে। ফুটপাতে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বিক্রি করেন মেয়ের স্বামী। ২০ ও ২৫ বছরের দুই ছেলে কলেজের গণ্ডি টপকালেও চাকরি পাননি এখনও। অভাবের সঙ্গে নিত্য বসবাস তাঁদের। বেসরকারি হাসপাতালে বাবাকে রেখে চিকিৎসা করানোর সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। আবার নিজেদের একটি মাত্র ঘরে রাখলেও গন্ধে টিকতে পারবেন না।

এই অবস্থায় সোমবার আর জি কর হাসপাতাল থেকে বাবা সমীর হালদারকে নিয়ে মেয়ে সটান পৌঁছে যান কলকাতা বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে রেলসেতুর তলায়। বাবাকে সেখানকার ফুটপাতে শুইয়ে রেখে আশপাশে থাকা অটোচালকদের কাছে স্বামীর মোবাইল নম্বর দিয়ে মেয়ে জানিয়ে এসেছিলেন, বাবা মারা গেলে যেন একবার জানিয়ে দেওয়া হয়। খোলা আকাশের নীচে কুঁকড়ে সোমবার রাতটা কেটে যায় ওই বৃদ্ধের।

মঙ্গলবার খবরটা পৌঁছয় বিমানবন্দর পুলিশের কাছে। প্রথমে তাঁরা খবর পেয়েছিলেন, এক ভবঘুরের দেহ পড়ে রয়েছে। কিন্তু, ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পরে দেখা যায়, বেঁচে রয়েছেন বৃদ্ধ। ওই অটোচালকেরাই শ্যামবাবুর নম্বর দেন। এমনি ডাকলে হয়তো আসবেন না, এই ভেবে বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর দিয়েই ডেকে আনা হয় মেয়ে এবং জামাইকে। পুলিশের চাপে পড়ে ফুটপাত থেকে বাবাকে নিয়ে তাঁরা আবার চলে যান আর জি করে।

বুধবার সকাল দেখা গেল, হাসপাতাল চত্বরের এক গাছতলায় চাদর মুড়ি দেওয়া অবস্থায় শুয়ে ওই বৃদ্ধ। পাশে বসে মেয়ে-জামাই। কথা বলতে গিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন তাঁর জামাই, ‘‘কী করব? আমাদের ঘরে রাখার জায়গা নেই। হাসপাতালও ভর্তি নিচ্ছে না। দু’টো কি়ডনিই নাকি খারাপ হয়ে গিয়েছে। ওঁকে নিয়ে কোথায় যাব আমরা?’’

ওই বৃদ্ধের স্ত্রী মারা গিয়েছেন বছরখানেক আগে। তত দিন পর্যন্ত দমদমের এক কলোনিতে একটি
ঘরে ভাড়া থাকতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। নিজে কিছু করতে পারতেন না। বৃদ্ধের আর এক মেয়ে রয়েছেন। তিনি অবিবাহিত, পরিচারিকার কাজ করেন। কানে ভালো শুনতে পান না। তাঁর পক্ষেও বাবার দেখভাল করা সম্ভব নয়। তাঁদের মা বেঁচে থাকতে দুই মেয়ে আর প্রতিবেশীরা মিলে সাহায্য করতেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন বৃদ্ধ। দমদম এলাকার ফুটপাতই ছিল তাঁর ঠিকানা। কার্যত ভিক্ষে করেই দিন গুজরান হতো। রোদ-জলে পুড়তে পুড়তে আরও ভেঙে যায় তাঁর শরীর। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Fathe Ill Daughter Helpless Pavement Shelter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE