বাঁ দিকে, হাসনাবাদ লোকালের কামরায় দূরত্ব-বিধির বালাই না রেখেই পাশাপাশি বসেছেন যাত্রীরা। ছবি: সুদীপ ঘোষ ডান দিকে, ভিড়ে ঠাসা বিধাননগর রোড স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দূরত্ব-বিধির স্থান নেই। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
করোনায় দৈনিক সংক্রমণ লাগামছাড়া হওয়া সত্ত্বেও হুঁশ ফিরছে না যাত্রীদের। এমনকি, মাস্ক না পরলে যাত্রীদের ৫০০ টাকা করে জরিমানা করার ঘোষণাতেও হয়নি কাজ। সোমবারও পরিস্থিতির বিশেষ কোনও বদল চোখে পড়েনি। হাওড়া, শিয়ালদহের মতো হাতে গোনা কিছু বড় স্টেশনে সাময়িক নজরদারি চললেও বেশির ভাগ স্টেশনেই বিশেষ কোনও তৎপরতা চোখে পড়েনি। ঢিলেঢালা নজরদারির সুযোগে যাত্রীদেরও বড় অংশকে দেদার মাস্ক ছাড়াই সফর করতে দেখা গিয়েছে।
শহরতলির অধিকাংশ স্টেশনেই এ দিন বিশেষ নজরদারি চোখে পড়েনি। আরপিএফ বা টিকিট পরীক্ষকদের কোথাও দেখতে পেলে অনেকেই মুখ লুকিয়ে অন্য দিকে ছুটে পালিয়েছেন। জরিমানা এড়াতে যাত্রীদের এ ভাবে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য হাওড়া, শিয়ালদহ, দমদম, কলকাতা, ব্যান্ডেল, বিধাননগর, সোনারপুর, বালিগঞ্জ, বারাসত, সাঁতরাগাছি— সর্বত্রই চোখে পড়েছে। মাস্কবিহীন যাত্রীদের পাশাপাশি মাস্ক থুতনির কাছে নামিয়ে রাখা যাত্রীর সংখ্যাও ছিল ভূরি ভূরি। এ নিয়ে যে সব যাত্রী প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের অনেককেই শুনতে হয়েছে কটূক্তি।
সোনারপুর লোকালের নিত্যযাত্রী মিলন সাহা বালিগঞ্জের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তাঁর উল্টো দিকের আসনে দুই যাত্রী মাস্ক না পরে বসেছিলেন। গল্পে মশগুল ওই দুই যাত্রীকে মাস্ক পরার কথা বলতেই তাঁরা পাল্টা বলে ওঠেন, ‘‘মাস্ক পরলেই কি করোনা চলে যাবে? ভিড়ের সময়ে বলবেন এমন কথা, ট্রেন থেকে নামিয়ে দেবে। লোকাল ট্রেন এই রকমই।’’ আর তর্ক করার সাহস পাননি মিলন। বাধ্য হয়ে সরে বসেন তিনি। বালিগঞ্জে নামার পরেও অন্যান্য দিনের চেয়ে আলাদা কোনও নজরদারি চোখে পড়েনি তাঁর। বিধাননগর রোড স্টেশনে প্রায় একই অভিজ্ঞতা হয়েছে আর এক নিত্যযাত্রী সৈকত দাসের। তাঁর কথায়, ‘‘মাস্ক না পরার জন্য জরিমানার সিদ্ধান্তে কিছুটা আশান্বিত হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, বেপরোয়া যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কিন্তু, এ দিন রেলের বিশেষ কোনও তৎপরতা চোখে পড়েনি। ফলে, যাত্রীদের একটি বড় অংশেরই অভ্যাসে কোনও বদল আসেনি।’’
রেল সূত্রের খবর, এ দিন পূর্ব রেলের হাওড়া, শিয়ালদহ ছাড়াও আসানসোল ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনে মাস্ক না পরা এবং থুতু ফেলা আটকাতে নজরদারি চলেছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনেও নজরদারি চালানোর পাশাপাশি জরিমানা করা হয়েছে বলে খবর। তবে, সারা দিনে হাওড়া এবং শিয়ালদহ মিলিয়ে মাত্র জনা কুড়ি যাত্রীকে জরিমানা করা হয়েছে বলে খবর। স্টেশনে কর্মরত রেলকর্মীদের অভিযোগ, ট্রেন থেকে এক-এক বারে হাজার হাজার যাত্রী নেমে আসেন। তাই ভিড়ের মধ্যে কাউকে আলাদা করে চিহ্নিত করা মুশকিল। অনেকেই আরপিএফ কর্মীদের দেখে ছুট লাগাচ্ছেন।
যদিও রেলের আধিকারিকেরা এই যুক্তি মানতে চাননি। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রথম দিন প্রস্তুতির কিছু অভাব ছিল। আগামী দিনে এ নিয়ে তৎপরতা আরও বাড়ানো হবে। এ দিন সকালে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করেন রাজ্যের পরিবহণসচিব। ওই বৈঠকে দৈনিক কত সংখ্যক ট্রেন চলছে, যাত্রী কেমন হচ্ছে, কোন স্টেশনে ভিড়ের পরিস্থিতি কেমন, এ সম্পর্কে রেলের কাছে তথ্য চান রাজ্যের আধিকারিকেরা। রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দৈনিক ১২০০-র বেশি শহরতলির লোকাল ট্রেন হাওড়া এবং শিয়ালদহ থেকে চলছে। প্রাক্ করোনা পরিস্থিতিতে দৈনিক প্রায় ৩৪ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করতেন। এখন ওই সংখ্যা ২৬ থেকে ২৯ লক্ষের মধ্যে রয়েছে। তাই যাত্রী-সংখ্যা সামান্যই হ্রাস পেয়েছে বলে জানালেন রেলকর্তারা। প্রয়োজন ছাড়া যাত্রীদের ট্রেনে সফর না করার জন্য আবেদনও জানানো হচ্ছে। তবে তাতে এখনও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy