পুরনো: এম জি রোডের বাড়ির ভিতরে ঝুলছে বিপজ্জনক লেখা বোর্ডটি। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
পলেস্তারা খসে পড়া লম্বা বারান্দার এক কোণে পাতা তেল চিটচিটে চৌকি। তার উপরে শুয়ে ঠকঠক করে কাঁপছেন এক বৃদ্ধা। মাথায় বালিশ নেই। গায়ে মোটা কম্বল। বৃষ্টিতে ঠান্ডা লাগছে? ঝড় আসছে, শুনেছেন? দু’-তিন বার প্রশ্ন করার পরেও উত্তর নেই। শেষে প্রবল বিরক্ত হয়ে হিন্দিতে বললেন, ‘‘ঝড় এলেই বা কী? আর না এলেই বা কী? আমার এর চেয়ে ভাল জায়গা জুটবে না।” এর পরে কাশির প্রবল এক দমক সামলে নিয়ে বললেন, “ছেলে কম পয়সায় এখানে ভাড়ার ঘর পেয়েছে। তাই কিছুতেই ছাড়তে চায় না। কোন দিন সব ভেঙে পড়ে এখানেই মরে থাকব।”
সতী সাইনি নামে বছর পঁচাশির ওই বৃদ্ধা পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের ৪২ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা। ২০১৬ সালে দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ার কথা জানিয়ে এই বাড়ির বাসিন্দারাই স্থানীয় কাউন্সিলরের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কাউন্সিলর ‘দেখি কী করা যায়’ বলে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সে দিনই ভেঙে পড়ে ওই বাড়ির একাংশ। মৃত্যু হয় দু’জনের। ওই ঘটনার পরে শহর জুড়ে শোরগোল পড়ায় বাড়ির বাকি বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে হয়। পরে অবশ্য তাঁরা যথাস্থানে ফিরে এসেছেন। সতীদেবীর পুত্রবধূ শীলা সাইনি বললেন, “উনি বুড়ো মানুষ, কী বলবেন? আমরা নিজের চোখে আগের বারের মৃত্যু দেখেছি। তা ছাড়া, আমরা ভাড়া দিই। অন্য কোথাও যাব কেন?”
পুরকর্তাদের দাবি, বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের এই মনোভাবই সমস্যায় ফেলে দেয় তাঁদের। বড়সড় ঝড়বৃষ্টি আসছে জেনেও কিছু করার থাকে না। বিপদ মাথায় নিয়েই উৎকণ্ঠার রাত্রিবাস করেন অনেকে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ধেয়ে আসছে জেনে পাথুরিয়াঘাটার এই বাড়ির মতোই উৎকণ্ঠায় রয়েছেন মহাত্মা গাঁধী রোড মোড়ের ১২৯/৭ নম্বর বাড়ির বাসিন্দারা। পুরসভা বাড়িটিকে বহু দিন আগেই বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করেছে। শনিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ‘বিপজ্জনক’ লেখা বোর্ড ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে ভিতরে। তার পাশ দিয়েই বাড়ির দেওয়াল বেয়ে উঠেছে বটের ঝুরি। চারতলা বাড়িটির প্রতিটি তলের বারান্দার অংশ খসে পড়ছে। বৃষ্টির মধ্যেই সেই বারান্দায় বসে সাফাইয়ের কাজ করছিলেন মহেন্দ্র লীলা। তিনি বলেন, “এ বাড়ির প্রতিটি তলায় চার-পাঁচটি করে ঘর আছে। সব ঘরেই ভাড়াটেরা আছেন। ভয় হচ্ছে, রাতে সব নিয়ে না হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে।” তবু এ বাড়িতে আছেন কেন? উমা বিশ্বাস নামে একতলার এক দোকানের কর্মী বলেন, ‘‘এ বাড়ির ভিত অনেক পুরনো, শক্তপোক্ত। তেমন কিছু হবে বলে মনে হয় না।”
ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটের একটি বাড়ির বাসিন্দারা আবার ‘ভাগ্যের হাতে’ই সবটা ছেড়ে দিয়েছেন। কিছু দিন আগেই সেখানকার ১০ নম্বর বাড়ি ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল এক তরুণীর। পাশের বাড়িটি অন্য একটি বাড়ির গায়ে হেলে পড়ে। সেই হেলে পড়া বাড়িতেই আছে ১১টি পরিবার। এক বাসিন্দার কথায়, “অনেক টাকায় ফ্ল্যাট কিনেছি। রাতারাতি ছাড়া যায়? যা বৃষ্টি, মনে হয় রাতটা জেগেই থাকতে হবে।”
ঝড়বৃষ্টির ভ্রূক্ষেপ অবশ্য দেখা গেল না গিরিশ পার্কের গণেশ টকিজ় মোড়ের চায়ের দোকানে। দোকানটি যে বাড়ির নীচে, সেটিও ‘বিপজ্জনক’। তবু দোকানের মালিক অনন্ত শর্মা বললেন, “পোস্তা উড়ালপুল এই দোকানের উপরেই ভেঙে পড়েছিল। এখন আর এ সব ঘূর্ণিঝড়ে ভয় করে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy