অসহায়: অসুস্থ মাকে নিয়ে রুমেলা চৌধুরী। ছবি: সুমন বল্লভ
পাঁচ রাত ধরে জেগে আছি। মাকে নিয়ে এমন অসহায় অবস্থায় মধ্যে আগে কোনও দিন পড়িনি।
বিদ্যুৎ না-থাকায় এই গরমে মা ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। মাকে সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালিসিস করতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। লকডাউনের মধ্যেও গাড়ি জোগাড় করে মাকে ঢাকুরিয়ার একটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি। বুধবার আমপানের পরে মনে হল, মাকে নিয়ে তেতলা থেকে নীচে নামাব কী করে? আলো নেই। লিফ্ট বন্ধ। মা তো হাঁটতে পারেন না। শেষে পাড়ার ছেলেদের সাহায্য নিয়ে মাকে পাঁজাকোলা করে নীচে নামিয়েছি। আবার ওই ভাবেই উপরে তুলেছি হাসপাতাল থেকে ফেরার সময়।
আমরা থাকি বৈষ্ণবঘাটা মিনি বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি আবাসনে। টানা আলো নেই, জল নেই। আমার ছ’বছরের ছেলে তো রবিবার জানলার ধারেই সারারাত শুয়ে ছিল। কিন্তু সব থেকে কষ্ট মায়ের। মায়ের কিডনির সমস্যা ছাড়াও ডায়াবিটিস আছে। আছে উচ্চরক্তচাপ জনিত সমস্যা। গরমের জন্য মাকে খাটে শোয়াতে পারছি না। নীচে শুইয়ে রেখেছি। একটু হাওয়ার আশায় গত রাতে মাকে ব্যালকনিতে শুইয়ে রেখেছিলাম। আমাকে কাঁদতে দেখে মা আমার চোখের জল মুছিয়ে দিয়েছে।
কিডনির অসুখের জন্য মায়ের জল সারা দিনে মাপা। ২০০ মিলিলিটারের বেশি জল খাওয়া মানা। কিন্তু এই গরমে মায়ের বার বার জল তেষ্টা পাচ্ছে। অথচ জল খেতে পারছে না। রেফ্রিজারেটরে থাকে মায়ের ইনসুলিন ইনজেকশন। ফ্রিজই তো চলছে না। ইনজেকশনগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে না তো?
আরও পড়ুন: কোথায় বিদ্যুৎ? বিক্ষোভ চলছে, সিইএসসি-কে দুষলেন ফিরহাদ
এই কষ্ট আর কত দিন সহ্য করব? পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে তাই চলে গিয়েছি মোড়ের মাথায় অবরোধ করতে। নেতাজিনগর থানায় গিয়েছি। সিইএসসি কর্মীদের আমাদের এলাকায় পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছি থানায় গিয়ে। কিন্তু সুরাহা হয়নি। এলাকার কাউন্সিলরের তো দেখাই নেই।
এই বিপদের সময়ে পাড়ার ছেলেরাই আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। ওরা বলল, পাড়ার রাস্তায় গাছ পড়ে আছে বলে সিইএসসি কর্মীরা আসতে পারছেন না হয়তো। পুরসভার কর্মীদের দেখা নেই। তাই নিজেরা লোক ডেকে পয়সা দিয়ে গাছ কাটালাম। গাছ তো সাফ হয়ে গিয়েছে রাস্তা থেকে। কিন্তু সিইএসসি কর্মীদের দেখা-ই নেই।
ফলে আবার একটা অন্ধকার রাত! এর কি কোনও শেষ নেই?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy