Advertisement
১০ অক্টোবর ২০২৪
Durga Puja 2024

মণ্ডপে প্রতিবাদ ও স্লোগানে মুখর ষষ্ঠী, ঢল নামল উত্তর-দক্ষিণে

পঞ্চমীর সকাল থেকে শহরে দফায় দফায় বৃষ্টিও উৎসাহী জনতাকে আটকাতে পারেনি। ছাতা নিয়েই মণ্ডপ দর্শনে গিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ।

দমদম পার্ক ভারত চক্র।

দমদম পার্ক ভারত চক্র। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ ০৫:৫১
Share: Save:

বৃষ্টি উপেক্ষা করে মহালয়ার পর থেকেই ভিড় জমছিল বিভিন্ন মণ্ডপে। উৎসব এবং প্রতিবাদের আবহে গত দু’দিনে সেই ভিড় জনজোয়ারের চেহারা নিয়েছিল। বুধবার, মহাষষ্ঠীর বেলা গড়াতেই যা কার্যত বাঁধ ভাঙল। সেই সঙ্গে এ দিন দেখা গেল মণ্ডপের সামনে আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদের ছবি। স্লোগান দেওয়ায় কয়েক জন আন্দোলনকারীকে আটক করে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হল। সব মিলিয়ে মহাষষ্ঠীর কলকাতায় মিলেমিশে গেল পুজো ও প্রতিবাদ।

পঞ্চমীর সকাল থেকে শহরে দফায় দফায় বৃষ্টিও উৎসাহী জনতাকে আটকাতে পারেনি। ছাতা নিয়েই মণ্ডপ দর্শনে গিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। ষষ্ঠীর সকাল থেকে মেঘ-রোদের লুকোচুরি চললেও বৃষ্টি তেমন হয়নি। ফলে, ভ্যাপসা গরমে মণ্ডপের বাইরে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে গিয়ে কিছুটা অস্বস্তি বাড়লেও ভিড় কমেনি। বরং রাত যত বেড়েছে, দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে মণ্ডপে মণ্ডপে। রেস্তরাঁর সামনে ও গণপরিবহণে গাদাগাদি ভিড়— সকাল থেকেই দেখা গিয়েছিল পুজোর চেনা মেজাজ। বিকেলে ডাক্তারদের পুজো পরিক্রমা কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিলেও পোস্টার হাতে কয়েক জন আন্দোলনকারী প্রথমে যান দক্ষিণ কলকাতার ম্যাডক্স স্কোয়ারের মণ্ডপে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখান থেকে তাঁরা দেশপ্রিয় পার্ক হয়ে যান ত্রিধারার মণ্ডপে। সেখানে বিচার চেয়ে স্লোগান দেওয়ার সময়ে ন’জনকে আটক করে লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ। তাঁদের হাতে প্ল্যাকার্ড ছিল। তবে তাঁদের মধ্যে ডাক্তারদের কেউ নেই বলেই জানিয়েছে পুলিশ। এর প্রতিবাদে ডাক্তারেরা ও সাধারণ মানুষ লালবাজারের সামনে জড়ো হন।

উৎসবের পাশাপাশি আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন আন্দোলনেও শামিল হয়েছেন অনেকে। প্রতিমা দর্শনের ফাঁকে অনেকেই ধর্মতলায় চিকিৎসকদের অনশন মঞ্চে হাজির হন। এ দিন সেখানে দাঁড়িয়েই এক মহিলা বললেন, ‘‘চার দিকে যা হচ্ছে, তা দেখে ভিতর থেকে আনন্দটা আসছে না। আন্দোলনরত ডাক্তারদের মুখগুলো বার বার ভেসে উঠছে চোখের সামনে।’’

তবে, পুজোর উৎসবেও শামিল হয়েছেন অনেকে। এ দিন ভিড়ের নিরিখে উত্তরের টালা প্রত্যয়, হাতিবাগান সর্বজনীন, কলেজ স্কোয়ার ও সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে দক্ষিণের দেশপ্রিয় পার্ক, সুরুচি সঙ্ঘ, চেতলা অগ্রণী। সকালে উত্তরে সব থেকে বেশি ভিড় দেখা গিয়েছে টালা প্রত্যয় এবং সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে। হাবড়া থেকে বান্ধবীদের সঙ্গে আসা ত্রয়ী মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম, উত্তরের কয়েকটি পুজো দেখে দক্ষিণের দিকে যাব। কিন্তু উত্তরের পুজো দেখতেই তো ঘণ্টাখানেক সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, দক্ষিণে অন্য দিন যেতে হবে।’’ বিকেলের পরে উত্তরে উৎসাহী জনতা এগোতে শুরু করে বাগবাজার সর্বজনীনের দিকে। সন্ধ্যায় বাগবাজারের মণ্ডপে ঢোকার লাইনে দাঁড়িয়ে এক তরুণী বললেন, ‘‘প্রতি বার বাগবাজার থেকে প্রতিমা দর্শন শুরু করি। বাকি কলকাতার জন্য অন্য দিন তো রয়েইছে।’’

সন্ধ্যার পর থেকে দক্ষিণের রাসবিহারী সংলগ্ন পুজোয় ছিল থিকথিকে ভিড়। রাতের দিকে ভিড়ের চাপে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে সংলগ্ন রাস্তাগুলি। একই অবস্থা ছিল কালীঘাটেও। এ দিন হরিশ পার্ক ব্যায়াম সমিতির মণ্ডপের সামনেও দেখা গেল দীর্ঘ লাইন। কলকাতার ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে সল্টলেক এবং নিউ টাউনের কয়েকটি পুজোও। পথের ঝক্কি কাটাতে অনেকে মেট্রোয় সফর করলেও সেখানেও ভোগান্তির মুখে পড়েছেন তাঁরা। ভিড়ের চাপে একাধিক স্টেশনে দরজা বন্ধ করে মেট্রো ছাড়তেই বেশ কয়েক মিনিট করে দেরি হয়।

আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে একাধিক পুজো কমিটির পাশাপাশি বেশ কিছু আবাসন কমিটিও পুজোর সরকারি অনুদান না নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। অনুদান না নেওয়ার পাশাপাশি অভিনব উদ্যোগ দেখা গেল নরেন্দ্রপুরের কৃষ্টি সুগম পার্কের পুজোয়। সেখানে উদ্যোক্তারা ‘অভয়া স্কলারশিপ’ চালু করেছেন। মূলত আবাসনে কর্মরত কর্মীদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়াতেই এই বৃত্তির ভাবনা। অন্যতম উদ্যোক্তা দেবরাজ চক্রবর্তী এবং শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সবাই বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদ করছেন। আমরাও চেয়েছিলাম, প্রতিবাদের পাশাপাশি অন্য ভাবে পাশে থাকতে। প্রতি বছর এই বৃত্তি দিয়ে সেই প্রতিবাদকেই বাঁচিয়ে রাখতে চাইছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Doctor Rape and Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE