Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Corona Vaccine

‘প্রতিষেধকের এই ঘাটতি থাকবে আরও অন্তত দু’মাস’

পুরো বিষয়টির মধ্যে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার দিকটি যত না গুরুত্ব পেয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে প্রতিষেধক সংক্রান্ত আগাম ঘোষণা করার ‘রাজনৈতিক চমক’!

প্রতীক্ষা:  প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার জন্য ডাকের অপেক্ষায় প্রবীণেরা। শনিবার, এম আর বাঙুর হাসপাতালে।

প্রতীক্ষা: প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার জন্য ডাকের অপেক্ষায় প্রবীণেরা। শনিবার, এম আর বাঙুর হাসপাতালে। ছবি: সুমন বল্লভ

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২১ ০৫:৩৬
Share: Save:

অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কত সংখ্যক মানুষকে প্রতিষেধক দিতে হবে, তা জানা ছিল। প্রতিষেধকের কতগুলি ডোজ় দৈনিক উৎপাদন করা যায়, জানা ছিল তা-ও।

কিন্তু তার পরেও সাম্প্রতিক করোনা সংক্রমণ রুখতে প্রতিষেধকের ঘাটতি কেন? কারণ অনুসন্ধান করে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, করোনা রুখতে প্রতিষেধক বাজারে আসবে—গত বছরের ১৫ অগস্ট আগাম এই ঘোষণা করে বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-কে। তেমনই চাহিদা-জোগানের বিষয়টি ঠিক মতো বিশ্লেষণ না করেই পয়লা মে থেকে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে প্রতিষেধক দেওয়া যাবে, এই ঘোষণা আদতে কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে’ ফেলেছে। তাঁদের মতে, পুরো বিষয়টির মধ্যে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার দিকটি যত না গুরুত্ব পেয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে প্রতিষেধক সংক্রান্ত আগাম ঘোষণা করার ‘রাজনৈতিক চমক’!

যার পরিপ্রেক্ষিতে, কবে প্রতিষেধকের ঘাটতি মিটবে?—আপাতত এই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে গবেষক-বিজ্ঞানীদের। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তাঁরা জানাচ্ছেন, রাতারাতি এই ঘাটতি মেটার কোনও লক্ষণ নেই। ভারতের সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতি ও প্রতিষেধকের ঘাটতি সম্পর্কে জানতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে মুখ্য উপদেষ্টা তথা আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ়েস’-এর ডিরেক্টর অ্যান্টনি ফাউচির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘করোনা টাস্ক ফোর্সের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। ফলে এই মুহূর্তে আলাদা করে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে করোনাভাইরাস ও প্রতিষেধক সম্পর্কে সাম্প্রতিক যে সব তথ্য উঠে এসেছে, সেগুলিই অনুসরণ করার পরামর্শ দেব।’’ করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়, পরামর্শ নিয়ে তৈরি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের তথ্য ঘেঁটে দেখারও পরামর্শ দেন ফাউচি। যেখানে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা রয়েছে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রতিষেধক কতটা নিরাপদ ও কার্যকর। এমনিতে প্রতিষেধকের সব ক’টি ডোজ় নিলে রোগের তীব্রতা যে কমবে, সে ব্যাপারে নিঃসংশয় বিশেষজ্ঞেরা। বার বার তাঁরা সে কথা বলেছেনও।

কিন্তু কবে প্রতিষেধকের সব ডোজ় নেওয়া যাবে, সেটাই এখন পুরোপুরি অনিশ্চিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শদাতা এবং ‘সেন্টার ফর ডিজিজ় ডায়নামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসি’-র ডিরেক্টর রামানন লক্ষ্মীনারায়ণের মতে, ‘‘প্রতিষেধকের এই ঘাটতি আরও অন্তত দু’মাস থাকবে বলে মনে হয়।’’ অর্থাৎ, জুলাই-অগস্টের আগে প্রতিষেধকের ঘাটতি মেটানো কিছুটা অসম্ভব বলেই মনে করছেন অনেকে। ফলে এই সময়সীমার মধ্যে আরও কত জন আক্রান্ত হবেন, আরও কত জনের মৃত্যু হবে, সেই ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন গবেষকেরা। এক গবেষকের কথায়, ‘‘কিসের ভিত্তিতে পয়লা মে থেকে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সব ভারতীয় নাগরিককে প্রতিষেধক দেওয়া যাবে বলে কেন্দ্রের তরফে বলা হল, তা স্পষ্ট নয়। বিশেষত যেখানে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে এত ফাঁক রয়েছে।’’

আর এই সূত্রেই উঠে আসছে ‘রাজনৈতিক চমক’-এর প্রসঙ্গটি। এক জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘পয়লা মে থেকে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে প্রতিষেধক দেওয়ার ঘোষণার মধ্যে যতটা রাজনীতি রয়েছে, ততটা বাস্তবের প্রতিফলন নেই। কারণ, পরিসংখ্যান দেখলেই প্রতিষেধকের ঘাটতির বিষয়টি বোঝা যাবে।’’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘সাউথ-ইস্ট এশিয়া রিজিয়ন অফিস’-এর ‘কমিউনিকেবল ডিজিজ়েস’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর রাজেশ ভাটিয়া জানাচ্ছেন, দেশে প্রতিষেধকের বর্তমান দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৫ লক্ষ। কিন্তু চাহিদা তার চেয়ে অনেক বেশি। তাঁর কথায়, ‘‘যতক্ষণ না প্রতিষেধকের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হবে অথবা দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি অন্য প্রতিষেধক বাজারে আসবে কিংবা প্রতিষেধক আমদানি করা হবে, ততক্ষণ এই ঘাটতি চলতেই থাকবে।’’

ফলে এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে রাতারাতি এই ঘাটতি মেটার আশা দেখছেন না কেউই।

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Vaccine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy