আড়াল: তীব্র রোদ থেকে বাঁচতে এক পথচারীর ভরসা রুমাল। মঙ্গলবার, ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী
প্রাণপণে বলের পিছনে ছুটছিলেন এক ফিল্ডার। নাগাল পেয়েও গিয়েছিলেন। কিন্তু ধরতে পারলেন না। হঠাৎ মাটিতে পড়ে গিয়ে শুয়ে রইলেন কিছু ক্ষণ। সমস্যা বুঝে খেলা স্থগিত রাখলেন আম্পায়ার। কাছে গিয়ে বোঝা গেল, সমস্যা আরও গভীর। বার বার ডাকলেও কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। জল, বরফ গায়ে ঘষে কিছুটা সুস্থ করার চেষ্টা হল ওই ক্রিকেটারকে। কিন্তু তাঁকে মাঠে ফেরানো গেল না! এর পরে দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সিএবি-তে। সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে এসএসকেএম হাসপাতাল। চিকিৎসকেরা কোনও মতে লড়াই করে সে যাত্রায় ওই ক্রিকেটারকে সুস্থ করে বললেন, ‘‘আর একটু দেরি করলেই কিছু করার থাকত না। গরমে কাহিল হয়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই ক্রিকেটার।’’
কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত কয়েক বছরে ময়দানে ক্রিকেট খেলা চলাকালীন এ ভাবেই একাধিক ক্রিকেটার গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে। চলতি বছরে মার্চ মাসের শেষ থেকেই এমন ভাবে গরম বাড়তে শুরু করেছে যে, খেলা চালিয়ে যাওয়া তো দূর, বেলা ১২টার পরে রাস্তায় কয়েক পা হাঁটাও দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবু এর মধ্যেই ময়দান জুড়ে চলছে ক্রিকেটের আসর। দুপুরে বিভিন্ন ক্লাবের অনুশীলন তো বটেই, রয়েছে সিএবি-র নিজস্ব প্রতিযোগিতাও। ক্রিকেটারদের একটি বড় অংশই জানিয়েছেন, এই গরমে খেলতে গিয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর চিকিৎসার ন্যূনতম ব্যবস্থা থাকে না। ইডেন গার্ডেন্স লাগোয়া ময়দানে কেউ অসুস্থ হলে তবু সিএবি-র মেডিক্যাল ইউনিটের সাহায্য পাওয়া যায়। সিএবি-র অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু শহরের অন্য মাঠগুলিতে সেই সুযোগও নেই। এমনই এক উঠতি ক্রিকেটারের মন্তব্য, ‘‘গত এক বছরে সোনু যাদব এবং অনিকেত শর্মা নামে দু’জনের মৃত্যু হলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। সিএবি থেকে অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে তার পরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই তো অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়।’’
হৃদ্রোগ চিকিৎসক বিশ্বকেশ মজুমদার বলছেন, ‘‘গরমে কাহিল হয়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলে প্রথম এক ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময়ে ঠিকঠাক চিকিৎসা পেলে বিপদ এড়ানো যায়। দেখতে হবে, ওই সময়টা যেন পেরিয়ে না যায়।’’ তাঁর পরামর্শ, গরমে ম্যাচ করতে হলে মাঠেই চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেই সঙ্গে খেলোয়াড়দের রুটিন চেক আপের মধ্যে থাকতে হবে। অন্তত ইসিজি, ইকো করিয়ে রাখা অবশ্যই দরকার। পারিবারিক রোগের ইতিহাস সম্পর্কে জেনে রাখতে পারলে ভাল।
বিশ্বকেশবাবু আরও জানান, শুধু খেলোয়াড় নয়, এই মুহূর্তে যে ভাবে গরম বাড়ছে, তাতে সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে। গরমে শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রায় গোলমাল হয়। ডিহাইড্রেশন হয়ে গিয়ে শরীর কাহিল হয়ে পড়তে পারে। কিডনির অসুখ রয়েছে যাঁদের, তাঁদের হৃদ্যন্ত্রে প্রভাব পড়তে পারে। এই সময়েই সব থেকে বেশি পেসমেকার বসানোর দরকার পড়ে বলেও জানান তিনি। তাঁর পরামর্শ, ‘‘বার বার জল খেতে হবে। সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলতে হবে।’’
মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, মানবদেহ পাঁচ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রার তারতম্য সহ্য করতে পারে। তার বেশি ব্যবধান হলে অর্থাৎ, কেউ ২২ ডিগ্রির এসি ঘর থেকে যদি হঠাৎ ৩৫ ডিগ্রির গরমে বেরোন, তা হলে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। অরুণাংশুবাবু বলেন, ‘‘যতটা সম্ভব ঢিলেঢালা সাদা বা হালকা রঙের পোশাক পরতে হবে। প্রচুর পরিমাণে জল আর ফল খেতে হবে। তবে রাস্তার কাটা ফল বা প্রচুর পরিমাণে তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া চলবে না। আর বেলা ১২টা থেকে দুপুর ৩টের মধ্যে সরাসরি সূর্যের তাপ এড়িয়ে চলতে হবে। তবু যাঁদের রোদে বেরিয়ে কাজ করতে হয় বা খেলার তাগিদে মাঠে থাকতে হয়, তাঁদের শরীর খারাপ লাগলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দ্রুত চিকিৎসা না পেলে ফল মারাত্মক হতে পারে।’’
সিএবি-র কর্তারা যদিও জানিয়েছেন, সব মাঠে, সব ম্যাচে চিকিৎসক বা অ্যাম্বুল্যান্স রাখা সম্ভব না হলেও দ্রুত এই ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে এখন পর্যবেক্ষক এবং আম্পায়ারদের ‘সিপিআর’ (কার্ডিয়ো-পালমোনারি রিসাসিটেশন)-এর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তাঁরা। সঙ্গে ক্রিকেটারদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষারও চিন্তাভাবনা রয়েছে তাঁদের। কিন্তু এই ভাবনাচিন্তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হবে কবে? সেই প্রশ্নের অবশ্য স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy