প্রতীকী ছবি।
বৈদ্যবাটির বাসিন্দা, ১৮ বছরের তরুণীর জ্বর ছিল গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে। ১ জানুয়ারি তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। পরের দিন থেকে কোনও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই তিনি ২০ মিলিগ্রাম করে স্টেরয়েড চালু করে দেন! সঙ্গে এমন সব ওষুধ নিয়েছেন, যা করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের চিকিৎসায় রাখেইনি স্বাস্থ্য দফতর।
এর পরেও শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সম্প্রতি ওই তরুণী কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। কাকে দেখিয়ে এই ওষুধ নিলেন? উত্তরে তরুণীর মা-বাবা বলেছেন, ‘‘মেয়ে বলল ওষুধ জানে। আমরাও গত বার দেখেছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ওষুধগুলোর নাম ঘুরছে। এ বার করোনা ধরা পড়তেই সেগুলো কিনে খাইয়েছি!’’
কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে দেখে, কোনও উপসর্গ না থাকা সত্ত্বেও অনেকেই এ ভাবে নিজের মতো করে চিকিৎসা শুরু করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। কোন ওষুধের সত্যিই প্রয়োজন আর কোনটির নয়— সে কথা তাঁরা ভেবেও দেখছেন না। চিকিৎসকদের অভিযোগ, এঁরাই দোকান থেকে প্রচুর ভিটামিন ট্যাবলেট কিনে বাড়িতে মজুত করে রাখছেন। আর সেই কারণেই দোকানে মুহূর্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে জ়িঙ্ক ট্যাবলেট। অথচ মিউকরমাইকোসিসের কথা মাথায় রেখে এ বার করোনা চিকিৎসায় রাখাই হয়নি এই জিঙ্ক ট্যাবলেট! জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বললেন, ‘‘এমন রোগীদের জন্যই বহু মানুষ প্রয়োজনে ওষুধ পাচ্ছেন না। দোকানে ঘুরে ওষুধ না পেয়ে আবার চিকিৎসকের থেকে জেনে নিতে হচ্ছে বিকল্প নাম। ভাল মতো পাওয়া যায়, এমন ওষুধও শেষ হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন দোকানদার! মানুষকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না যে, আগাম যে সমস্ত ওষুধ কিনে তাঁরা মজুত করে রাখছেন, সেগুলির বেশির ভাগই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কাজে আসবে না। নিজের মতো খেতে শুরু করলে এগুলোই বড় ধরনের বিপদ ঘটাতে পারে!’’
গত কয়েক দিনে বিপদের তোয়াক্কা না করার এই ছবি দেখা গেল ওষুধের পাইকারি বাজার বাগড়ি মার্কেট চত্বরে। প্রায় প্রতিদিনই বিকেলের দিকে সেখানে ডিলারের ভাঁড়ার শেষ হয়ে যাচ্ছে। পেটিভর্তি ভিটামিন আর জ়িঙ্ক ট্যাবলেট নিয়ে যাচ্ছেন বিক্রেতারা। বিক্রি হচ্ছে নানা অ্যান্টিবায়োটিকও।
শ্যামবাজারের একটি ওষুধের দোকানের কর্মী বললেন, ‘‘ফের সেই আগের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হু হু করে ভিটামিন, জ়িঙ্ক, অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হচ্ছে। কাকে বাদ দিয়ে কাকে ওষুধ বিক্রি করব, বুঝতে পারছি না। পাইকারি বাজার থেকে বেশি করে ওষুধ তুলে রেখেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না!’’ হাজরা মোড়ের একটি ওষুধের দোকানের মালিকের বক্তব্য, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে যা চলছে, তার জেরে এক জনকে এক পাতা করে ওষুধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বেশি বেশি তুলে রাখার এই প্রবণতা চলতে থাকলে ওষুধের আকাল দেখা দেবে। তখন সত্যিই যাঁদের জরুরি প্রয়োজন, তাঁরা ওষুধ পাবেন না।’’ বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শঙ্খ রায় অবশ্য বলছেন, ‘‘কোনও ধরনের ওষুধের অভাব যাতে না হয় এবং মানুষ ঠিক পরিষেবা পান, সে বিষয়ে সব দোকানদারকে সচেতন করছি। আমাদের সংগঠনও নজর রাখছে।’’
চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীর দাবি, ‘‘আগের বারের মতো ওষুধের আকাল এখনও শুরু হয়নি। কারণ এখনও মূলত হাতে গোনা কিছু ওষুধ দিয়ে চিকিৎসার নির্দেশিকা এসেছে। অক্সিজেনের প্রয়োজন সে ভাবে পড়ছে না। ওরাল স্টেরয়েড দেওয়ারও ব্যাপার নেই। সব থেকে বড় কথা, আমরা এখনও সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছয়নি। আগামী কয়েক দিনে বোঝা যাবে, ব্যাপার কী দাঁড়াচ্ছে। তার আগেই নিজের মতো ওষুধ তুলে রেখে কৃত্রিম ঘাটতি তৈরি করা অন্যায়।’’ চিকিৎসক বিমানকান্তি রায় আবার বলছেন, ‘‘কেউ আক্রান্ত হলেও কোন গোত্রের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, সেটা বোঝা সহজ নয়। ধরা যাক, কেউ আক্রান্ত হয়ে ভাবলেন তাঁর শরীরে ওমিক্রন ঢুকেছে। এর প্রভাব কম, তাই নিজের মতো আনিয়ে রাখা ওষুধ খেলেই হয়ে যাবে! বাস্তবে হয়তো তিনি ডেল্টা বা ডেল্টা প্লাসে আক্রান্ত! অবহেলার হিসাব তখন কী ভাবে চোকাতে হবে, ভাবতে পারছেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy