Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
COVID-19

রাতভর চেষ্টায় অ্যাম্বুল্যান্স মেলেনি, ‘বিনা চিকিৎসায়’ মৃত্যু 

সোমবার ভোরে যখন অতি কষ্টে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় হল, ততক্ষণে মারা গিয়েছেন বৃদ্ধ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২১ ০৬:০২
Share: Save:

মেলেনি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স। কোভিড কেয়ারের হেল্পলাইনে ফোন করেও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন লেক টাউনের শ্রীপল্লির বাসিন্দা, আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা বছর ৭১-এর এক করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধ। এর পরেও অবশ্য হয়রানি কমেনি মৃতের পরিজনেদের। অভিযোগ, সৎকারের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স বা শববাহী গাড়ি না পাওয়া যাওয়ায় প্রায় ১১ ঘণ্টা বাড়িতেই পড়ে রইল বৃদ্ধের দেহ। অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে রাজ্য তথা দেশ যখন বেসামাল, তখন রোগী-পরিষেবা যে আক্ষরিক অর্থে খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে লেক টাউনের এই ঘটনা।

মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৩ এপ্রিল শুক্রবার বৃদ্ধের জ্বর আসে। পরের দিন তাঁর করোনা পরীক্ষা করানো হয়। পাশাপাশি, অন্য উপসর্গ থাকায় ভিডিয়ো কলে এক চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করেন বৃদ্ধের পরিজনেরা। রবিবার সকালে তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। সে দিন বিকেলে বৃদ্ধের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য চেষ্টা শুরু করেন বাড়ির লোক। বৃদ্ধের ভাই বলেন, “বেশ কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজ করেও শয্যা পাইনি। শেষে সরকারি কোভিড কেয়ারের হেল্পলাইনে ফোন করি। ওঁরা দাদার আধার কার্ডের নম্বর-সহ আরও কিছু তথ্য নিয়ে রাখেন। বলেন, যোগাযোগ করবেন। কিন্তু পরে আর যোগাযোগ করেননি। স্থানীয় দক্ষিণ দমদম পুরসভায় খোঁজখবর করেও ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাড়িতেই থেকে যান দাদা।’’

কিন্তু রবিবার রাত দুটো নাগাদ অবস্থার আরও অবনতি হয় বৃদ্ধের। শৌচাগারে যেতে গিয়ে পড়ে যান তিনি। ওই পরিবারের এক প্রতিবেশী রাহুল ভট্টাচার্য বলেন, “ওঁকে তখনই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংস্থায় ফোন করি। কিন্তু কোভিড রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ দমদম পুরসভাও জানিয়ে দেয়, তাদের কাছে অ্যাম্বুল্যান্স নেই। এমনকি, লেক টাউন থানার পুলিশও কোনও গাড়ি দিতে পারেনি।’’ অবশেষে সোমবার ভোরে যখন অতি কষ্টে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় হল, ততক্ষণে মারা গিয়েছেন বৃদ্ধ।

ভোগান্তির যে আরও বাকি আছে, এর পরে তা প্রত্যক্ষ করেন বৃদ্ধের আত্মীয় ও পড়শিরা। রাহুলবাবু বলেন, “সৎকারের জন্য দেহ নিয়ে যেতে দক্ষিণ দমদম পুরসভায় ফোন করা হলেও কোনও অ্যাম্বুল্যান্স বা শববাহী গাড়ি পাওয়া যায়নি। তখন লেক টাউন থানার অফিসারেরা একটি সংস্থার নম্বর দেন। সেখানে ফোন করা হলে তারা জানায়, অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া বাবদ ১৫ হাজার টাকা লাগবে। শেষ পর্যন্ত আমরা এক পরিচিতের মাধ্যমে চার হাজার টাকায় অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করি। দুপুর ১টা নাগাদ বৃদ্ধের দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়।’’ মৃতের দাদার অভিযোগ, “কোভিড রোগীদের জন্য বিভিন্ন পরিষেবার কথা ফলাও করে ঘোষণা করছে সরকার। অথচ যখন সেই পরিষেবার আশু
প্রয়োজন, তখনই তা পাওয়া গেল না।”

যদিও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ দমদম পুর প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা দাবি করেছেন, ওই পরিবারটি পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। বরং সোমবার সকালে ঘটনার খবর পেয়ে পুরসভার তরফেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু মৃতের পরিজনেরা জানিয়ে দেন, তাঁরা দেহ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। দক্ষিণ দমদম পুরসভা সূত্রের খবর, তাদের অ্যাম্বুল্যান্স এবং শববাহী গাড়ি ছিল। কিন্তু কাজে না লাগায় সেগুলির ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই পরবর্তীকালে সেই পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়। ওই কর্তা জানিয়েছেন, দ্রুত চারটি
অ্যাম্বুল্যান্স এবং দু’টি শববাহী যান চালু করা হচ্ছে। অন্য দিকে লেক টাউন থানার এক অফিসারের দাবি, তাঁরা ওই পরিবারকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংস্থার নম্বর দিয়ে সব রকম সাহায্য করেছিলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

treatment Ambulance COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy