Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
প্রতিষেধক বাজারে এসেছে ঠিকই। কিন্তু তার জন্য মাস্ক না পরার ‘ঔদ্ধত্য’ দেখাচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের তো বটেই, অন্যদেরও সুস্থ ভাবে বাঁচার মৌলিক অধিকার খর্ব করছেন।
COVID-19

‘মাস্ক পকেটে নিয়ে ঘুরছেন, অথচ পরছেন না’

শহরের রাস্তায় মাস্ক না পরে একদল যুবক। মঙ্গলবার।

শহরের রাস্তায় মাস্ক না পরে একদল যুবক। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪৩
Share: Save:

করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে বিশ্ব জুড়ে প্রতি মাসে প্রায় ন’কোটি মাস্কের চাহিদা তৈরি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য এমনটাই বলছে। অর্থাৎ, মাস্ক-বাজারের অর্থনীতি বলছে, করোনা সংক্রমণ মাস্কের বিক্রি হু হু করে বাড়িয়ে দিয়েছে। যা থেকে বাদ পড়েনি পশ্চিমবঙ্গ-সহ এ দেশও। যার প্রতিফলন উঠে এসেছে একাধিক সমীক্ষায়। তার পরেও কেন এবং কী ভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, এর উত্তরে বিশেষজ্ঞেরা একটি কথাই বলছেন। তা হল,—‘মাস্ক কিনলেও লোকজন পরছেন কোথায়?’

অথচ পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের প্রথমার্ধে বিশ্বে ‘ডিসপোজ়েবল’ মাস্কের বাজার-মূল্য ছিল ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এক অর্থনীতিবিদের কথায়, ‘‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের তথ্য বলছে, পরবর্তী সাত বছরে এই বাজার-মূল্য ৫০ শতাংশেরও বেশি হারে বাড়তে চলেছে। ফলে বোঝা যাচ্ছে মাস্কের চাহিদা কী পরিমাণে বেড়েছে।’’ মাস্কের চাহিদা যে বেড়েছে, তা এ দেশের ক্ষেত্রেও সমান সত্যি। মাইক্রোবায়োলজিস্ট বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হল মাস্ক কিনলেও তা মানুষ পরছেন কোথায়? যাঁরা পরছেন, তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠই থুতনি বা কানের দু’পাশে নিয়মরক্ষার মতো করে ঝুলিয়ে রাখছেন। ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা পুরোপুরি থেকে যাচ্ছে।’’

অর্থনীতিবিদদের একাংশ মাস্ক বিক্রি সংক্রান্ত বেসরকারি সমীক্ষার প্রসঙ্গ উল্লেখ করছেন। যে সমীক্ষা অনুযায়ী, গত বছর দেশের মাস্ক-বাজারের অর্থমূল্য ছিল প্রায় ৪৫৩ কোটি টাকা। আগামী চার বছরে এই অর্থনীতি ১১ শতাংশ হারে বাড়ার কথা। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার জানাচ্ছেন, মানুষ মাস্ক কিনছেন ঠিকই। সঙ্গেও রাখছেন। কিন্তু পরছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘এটা অদ্ভুত মানসিকতা বলতে পারেন। বেশির ভাগই মাস্ক পকেটে নিয়ে ঘুরছেন, অথচ পরছেন না। বেগতিক পরিস্থিতি দেখলে তখন তাঁরা মাস্ক পরছেন, এমনটাও দেখা যাচ্ছে।’’

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, করোনা-পূর্ববর্তী ভারতের মাস্ক-বাজার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এখানে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার থেকে বাঁচার জন্য ব্যবহৃত মাস্কের বাজারই ছিল সর্ববৃহৎ। অর্থাৎ, বায়ুদূষণের হাত থেকে বাঁচতে নাগরিকেরা মাস্ক পরেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণ মাস্ক পরার সেই চিরাচরিত সংজ্ঞাকেই পাল্টে দিয়েছে। এক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘মূলত দু’ধরনের মাস্ক রয়েছে। একটি, পুনর্ব্যবহারযোগ্য মাস্ক এবং অন্যটি ডিসপোজ়েব‌ল মাস্ক। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ডিসপোজ়েবল মাস্কের বিক্রিই মূলত বাড়িয়ে দিয়েছে।’’

কিন্তু বিক্রি বাড়লে কী হবে, মাস্ক না পরাই আদতে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের প্রধান সংযুক্তা দত্ত জানাচ্ছেন, যে কোনও সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরলে দেখা যাবে, কী ভাবে প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাঁর কথায়, ‘‘তার পরেও মাস্ক পরার ক্ষেত্রে অদ্ভুত অনীহা!’’

আর এখানেই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে। এক জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি ক্রমশ যে পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে, তাতে নিয়মমাফিক জরিমানা বা অনুরোধে কাজ হবে না। মাস্ক না পরলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘না হলে ফের সেই পরিস্থিতি তৈরি হবে, যেখানে করোনা আক্রান্ত রোগী আর তাঁর পরিবারের লোকজন ভর্তি হতে হন্যে হয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরবেন।’’

বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই বিপদ-ঘণ্টি কিন্তু বেজে গিয়েছে। যাঁরা মাস্ক পকেটে নিয়ে ঘুরছেন, তাঁরা সেটা শুনতে পাচ্ছেন কি? —এটাই এখন একমাত্র প্রশ্ন।

(শেষ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Mask COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy