প্রতীকী ছবি।
মেয়ের লিভ-ইন সঙ্গীকে পছন্দ নয় বলে মেয়েকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল মায়ের বিরুদ্ধে। কোনও ভাবেই ওই তরুণীর সঙ্গে দেখা করতে না পেরে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁর প্রেমিক। কিন্তু তার পরেও সুরাহা না হওয়ায় আদালতে যান রঞ্জন নাথ নামে ওই যুবক। প্রায় পাঁচ মাস টানাপড়েন চলার পরে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করল কলকাতা হাইকোর্ট। পুলিশকে কয়েকটি নির্দেশ দিয়ে আগামী ১০ মার্চ এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত।
সম্প্রতি আদালত বলেছে, নরেন্দ্রপুরের যে নেশামুক্তি কেন্দ্রে ওই তরুণীকে রাখা হয়েছে, সেটি বৈধ ভাবে চলছে কি না, তা দেখতে হবে। এই ধরনের কেন্দ্র চালাতে প্রয়োজনীয় অনুমতি সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের থেকে পর্যাপ্ত ভাবে নেওয়া হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে অতর্কিতে হানা দিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার নির্দেশও পুলিশকে দিয়েছে হাইকোর্ট।
আগামী শুনানির দিন কোর্টে হাজির থাকতে বলা হয়েছে নরেন্দ্রপুরের ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের মালিককেও। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশ, যে তরুণীকে নিয়ে মামলা, তাঁকে কোনও সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বারুইপুরের পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে। সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট বন্ধ খামে আদালতে জমা দিতে হবে।
রঞ্জন জানান, কয়েক বছর আগে জাতীয় গ্রন্থাগারে তাঁর পরিচয় হয়েছিল বছর ২৯-এর ওই তরুণীর সঙ্গে। ক্রমে তাঁদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। নিউ টাউনে তাঁরা ফ্ল্যাট নিয়ে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন। গত ৭ অক্টোবর জরুরি নথি নিতে বাড়ি ফিরেছিলেন ওই তরুণী। ৯ অক্টোবর তিনি রঞ্জনের সঙ্গে দেখা করতে বেরোন। রাতে বাড়ি ফিরে রঞ্জনের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন। রাত প্রায় ১টা নাগাদ তরুণী ফোনে জানান, কলিং বেল বাজাচ্ছে কেউ, তাই তিনি ফোন রেখে দরজা খুলতে যাচ্ছেন। তার পর থেকেই আর খোঁজ নেই তরুণীর। রঞ্জন বলেন, ‘‘যত বার ফোন করেছি, ফোন বন্ধ পেয়েছি। ওর বাড়িতে যেতে ওর মা বলেন, মেয়ে রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে বুঝতে পারি, উনি মিথ্যা বলছেন। শেষে জানতে পারি, ওকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।’’ রঞ্জনের দাবি, ‘‘যে কোনও নেশা করে না, তাকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানো হবে কেন? এর পরে থানা-পুলিশ করলেও ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। কাউকে কি এ ভাবে জোর করে আটকে রাখা যায়?’’ রঞ্জন আরও জানাচ্ছেন, ওই তরুণীর ১৪ বছর বয়সে এলাকার এক জন তাঁকে নিগ্রহ করেছিল। ওর মা অন্য ভাবে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চান। সে সময়েও ওই তরুণী মায়ের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। রঞ্জনের অভিযোগ, ‘‘যিনি অতীতে এমন করে থাকতে পারেন, তিনি এখনও জোর করে মেয়েকে আটকে রাখছেন না, তার কী মানে!’’
আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই কোনও প্রাপ্তবয়স্ককে এ ভাবে আটকে রাখা যায় না। মেয়েটির লিভ-ইন সঙ্গীর ওঁর সম্পর্কে জানার অধিকার রয়েছে। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প রয়েছে, কোনও পুনর্বাসন কেন্দ্রেই পাঁচ মাসের বেশি কাউকে রাখা যায় না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মেয়েটির মা এবং পুলিশ বলছে, তিনি নিজেই ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে থাকতে চাইছেন। তাঁকে দিয়ে জোর করে এ কথা বলানো হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে। ওঁর সঙ্গে পুলিশের উপস্থিতিতেই আমাদের দেখা করতে দেওয়া হোক, তা হলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে।’’ মেয়েটির মা-র সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘যা বলার আদালতে বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy