Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Kolkata

গবেষণার কাজে মৃত সদ্যোজাতের দেহদান করতে চাইলেন দম্পতি

জন্মের দশ দিনের মাথায় মৃত্যু হওয়া সেই শিশুটির অভিভাবকেরাই চাইলেন, চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার কাজে লাগুক তাঁদের সন্তানের মরদেহ। কিন্তু দেশের একাধিক হাসপাতালে ঘুরেও তাঁদের দেহদানের সেই ইচ্ছে পূর্ণ হয়নি।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২১ ১১:০৭
Share: Save:

নির্ধারিত সময়ের অন্তত ১০ সপ্তাহ আগেই অস্ত্রোপচার করে বার করতে হয়েছিল তাকে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সেই সময়েও কোনও শিশুর ওজন অন্তত ১ কেজি ২০০ গ্রাম হওয়ার কথা। কিন্তু তার ওজন ছিল মাত্র ৪৭০ গ্রাম! বাঁচানো যায়নি। জন্মের দশ দিনের মাথায় মৃত্যু হওয়া সেই শিশুটির অভিভাবকেরাই চাইলেন, চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার কাজে লাগুক তাঁদের সন্তানের মরদেহ। কিন্তু দেশের একাধিক হাসপাতালে ঘুরেও তাঁদের দেহদানের সেই ইচ্ছে পূর্ণ হয়নি।

যে দেশে এখনও সমস্যার মুখে পড়তে হয় দেহদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের, যে দেশে দেহদান নিয়ে হাজারো ছুতমার্গ কাজ করে এখনও, সেখানে এমন উদ্যোগ যে অভিনব, তা মানছেন সকলেই। চিকিৎসকেরাও মনে করতে পারছেন না এমন উদ্যোগের কথা।

গত ১১ জানুয়ারি মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম হয় শিশুটির। বাবা-মা সদ্যোজাতের নাম রাখেন আরোহণ। বাবা অচিন্ত্যকুমার দাস পেশায় জীববিজ্ঞানের গবেষক। মা বিপাশা পটগিরি তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। দু’জনেই অসমের গুয়াহাটির বাসিন্দা। গত অক্টোবরে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে মুকুন্দপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের কাছে একটি অতিথিশালায় ওঠেন অচিন্ত্য। তিনি জানান, শিশুটির জন্মের দ্বিতীয় দিন থেকেই জটিলতার শুরু। ধীরে ধীরে নড়াচড়াই থামিয়ে দেয় সে।

বিপাশা যাঁর অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন, সেই শিশু-রোগ চিকিৎসক অমিত রায় বললেন, ‘‘রক্ত পরীক্ষার জন্য সুচ ফোটালেও সাড়া মিলছিল না। চোখে আলো দিলেও মণি ছোট হওয়ার ব্যাপার হচ্ছিল না। পরে বোঝা গেল, মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে। আসলে গর্ভাবস্থায় অক্সিজেন বা পর্যাপ্ত খাবার না পৌঁছনোতেই এমন জটিলতা তৈরি হয়।’’

অচিন্ত্য জানান, গত অক্টোবরে মৃত্যু হয় তাঁর বাবার। নভেম্বরে মারা যান বিপাশার বাবা। সদ্য সন্তানহারা বাবা-মা বুঝতে পারছিলেন না, পরিবারে এক মাসের ব্যবধানে দু’টি মৃত্যুরই কি গভীর প্রভাব পড়ল সন্তানসম্ভবার উপরে?

এই সমস্ত প্রশ্নের মধ্যেই ওই দম্পতির মনে হয়েছিল, তাঁদের সন্তানের দেহ নিয়ে গবেষণা হোক। অচিন্ত্য বললেন, ‘‘আমাদের সন্তান ফিরল না। এতে হয়তো কারও কিছু করার নেই। কিন্তু কিছুই কি করার নেই? এই প্রশ্ন মনে আসায় ভেবেছিলাম, আমাদের সন্তানের মরদেহ নিয়ে গবেষণা হোক। যদি কোনও পথ বেরোয়! কিন্তু দেখলাম, আমাদের দেশে এ নিয়ে কোনও গবেষণাই হচ্ছে না।’’

দিল্লি এবং অসমের একাধিক হাসপাতালের পরে কলকাতার বেশ কয়েকটি হাসপাতালের সঙ্গেও দেহদানের ব্যাপারে যোগাযোগ করেছিলেন তাঁরা। আশাহত দম্পতি জানাচ্ছেন, কেউই শিশুটির মরদেহ নিতে চায়নি। চিকিৎসক অমিতবাবু বললেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময়ে মরদেহের ব্যবচ্ছেদ করেছি আমরা। কিন্তু এত ছোট শিশুর দেহ ব্যবচ্ছেদের কাজে ব্যবহার করা হয় না।’’ দেহদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্রজ রায় অবশ্য বললেন, ‘‘ছোট শিশু তো কী? দেহ নিতে বাধা নেই। ছাত্রেরা পড়ছে না বলে হাসপাতালগুলি দান করা দেহ নিতে চাইছে না।’’

বৃহস্পতিবার সন্তানের শেষকৃত্য সেরে বেরোনোর পথে শিশুটির বাবার প্রশ্ন, ‘‘আমেরিকা বা অন্য কোনও দেশ গবেষণা করে পথ বার করবে, আর আমরা সেই পথ ধরেই সব সময়ে চলব? আমরা নিজেরা পথ খুঁজে বার করব কবে?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Newborn Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy