ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে চলছে মেট্রোযাত্রা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
ই-পাস উঠে যেতেই ভিড় বাড়তে শুরু করেছে মেট্রোর কামরায়। দূরত্ব-বিধির পরোয়া না করেই দিনের ব্যস্ত সময়ে যাত্রীদের একাংশ আসন দখলের লড়াইয়ে নেমে পড়ছেন। সিটে বসা নিয়ে বচসার উপক্রম হচ্ছে হামেশাই। দূরত্ব-বিধি মানার বালাই না থাকায় বিপন্ন বোধ করছেন যাত্রীদের অনেকেই। অভিযোগ, প্রবীণদের জন্য নির্দিষ্ট আসনেও বসে পড়ছেন যাত্রীদের কেউ কেউ।
অফিসের ব্যস্ত সময়ে সহযাত্রীদের এই ধরনের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকেই হেনস্থার মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ। এমনকি, যাত্রীদের অনেকে ঠিকমতো মাস্ক পরছেন না বলেও অভিযোগ।
সমস্যার কথা জানিয়ে স্টেশন মাস্টার বা আরপিএফের কাছে অভিযোগ জানালে তাৎক্ষণিক ভাবে কী করা উচিত, তাঁরাও বুঝে উঠতে পারছেন না। বিষয়টি যাত্রীদের সচেতনতার আওতায় পড়ে বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। দূরত্ব-বিধি মেনে চলা নিয়ে মেট্রো স্টেশনে প্রতিদিন প্রচার চললেও যাত্রীদের একাংশ তা ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তাঁদেরই অন্য একটি অংশ।
দিন কয়েক আগেই মহাত্মা গাঁধী রোড স্টেশন থেকে দক্ষিণ কলকাতার একটি মেট্রো স্টেশনে আসছিলেন রৌনক কাদরানা নামে এক যাত্রী। তিনি নিজে একটি ফাঁকা আসনে বসলেও কিছু ক্ষণ পরে সেন্ট্রাল এবং এসপ্লানেড স্টেশন থেকে আরও চার-পাঁচ জন যাত্রীর একটি দল উঠে খালি থাকা সব ক’টি আসনে বসে পড়ে। রৌনক ঘটনার প্রতিবাদ করতেই ওই যাত্রীরা তাঁকে উপহাস করে নেমে যেতে বলেন বলে অভিযোগ। ই-পাস উঠে যাওয়ার পরে আবার দূরত্ব-বিধি কিসের, এমন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয় তাঁকে। বিপন্ন রৌনক পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে কামরার দরজায় এসে আরপিএফকে ডাকার চেষ্ট করেন। কিন্তু প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের উপরে নজরদারির দায়িত্বে থাকা আরপিএফ কর্মীরা কেউই তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে পারেননি। ক্ষুব্ধ, অপমানিত রৌনক আসন ছেড়ে পুরো পথ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ফেরেন। পরে গন্তব্যে পৌঁছে বিষয়টি নিয়ে স্টেশন মাস্টারের ঘরে অভিযোগ জানাতে যান তিনি। মেট্রো কর্তৃপক্ষ মন দিয়ে সমস্যার কথা শুনলেও তাৎক্ষণিক ভাবে কিছুই করে উঠতে পারেননি। কারণ, ট্রেন তত ক্ষণে অনেক দূর চলে গিয়েছে।
বছর সাতাশের শোভনা সরকার পার্ক স্ট্রিটের একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। দিন কয়েক আগে শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশন থেকে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মেট্রোয় উঠে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে বসতে গিয়ে তাঁরও প্রায় একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। মহিলা যাত্রীদের একাংশ দূরত্ব-বিধির তোয়াক্কা না করেই আসনে বসে পড়েন। প্রতিবাদ করলেও কেউই তা শুনতে চাননি। এখন প্রতিটি আসনে বসার নিয়ম চালু হয়ে গিয়েছে বলেও তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কেউ কেউ। তখন বাধ্য হয়েই আসন ছেড়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ান শোভনা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিদিনই যদি এমন সমস্যার মুখে পড়তে হয়, তা হলে তো মেট্রোয় যাতায়াতই ছেড়ে দিতে হবে।’’
করোনা আবহে সবে এখন দেশ জুড়ে টিকাকরণ শুরু হয়েছে। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যাও কমে আসছে। কিন্তু করোনার বিপদ পুরোপুরি কেটে গিয়েছে, এমনটা চিকিৎসক কিংবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্তারাও বলছেন না। আর ঠিক সেই কারণেই যাত্রীদের একাংশের এই বেপরোয়া আচরণ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মেট্রোকর্তাদের। ওই যাত্রীদের একাংশের আবার যুক্তি, দূরপাল্লার বাস, ট্রেন কিংবা বিমান— সর্বত্রই তো সব আসনে যাত্রীরা বসছেন। তা হলে মেট্রোয় এই নিয়ম হলে সমস্যা কোথায়? আসনে না বসে যাত্রীরা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়ালে কি বিপদ কমবে, এমন প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা।
মেট্রো কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, যাত্রীরা যাতে দূরত্ব-বিধি মেনে যাতায়াত করতে পারেন, সে কথা মাথায় রেখেই ট্রেনের সংখ্যা নিয়মিত ভাবে বাড়ানো হয়েছে। দিনের ব্যস্ত সময় ছাড়া দিনের অন্যান্য সময়ে মেট্রোয় এখনও যাত্রী বেশ কম। যাত্রীদের দূরত্ব-বিধি মেনে চলার কথাও প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে মেট্রোর এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যাত্রীদের অ-সচেতনতা দুর্ভাগ্যজনক। প্রয়োজনে তাঁদের সচেতন করার পাশপাশি নজরদারিও বাড়ানো হবে।’’ মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আরপিএফ কর্মীরা মাইকে ঘোষণার মাধ্যমে মেট্রোর কামরায় এ নিয়ে যাত্রীদের সচেতন করছেন। প্রয়োজনে এই উদ্যোগ আরও বাড়ানো হবে। দূরত্ব-বিধি অবশ্যই মানতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy