(বাঁ দিকে) হালতুর নবীন সঙ্ঘ ক্লাব, শনিবার রাতে যেখানে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ। ভাঙচুরের পর রবিবার উল্টে আছে চেয়ার (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
কসবা থানা এলাকার হালতুতে ক্লাব ভাঙচুরের অভিযোগ। প্রতিবাদ করায় দম্পতিকে মারধর করা হল রাস্তাতেই। ঘটনায় বেশ কয়েক জন জখম হয়েছেন। প্রতিবাদী দম্পতির চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই হামলায়। গোটা ঘটনায় অভিযোগের তির ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর লিপিকা মান্নার অনুগামীদের দিকে। অভিযোগ, যে ক্লাবে ভাঙচুর করা হয়েছিল, সেখানে কালীপুজোর উদ্বোধন করেছিলেন ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ। তার জেরেই ওই এলাকার বাসিন্দাদের উপর লিপিকার দলবলের ক্ষোভ রয়েছে, দাবি আক্রান্তদের। অভিযোগ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে লিপিকার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন তোলেননি। ওঁর মতামত পাওয়া গেলে তা গুরুত্ব দিয়ে এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।
হালতুতে আক্রান্ত দম্পতি জানিয়েছেন, শনিবার রাতে একটি অনুষ্ঠান সেরে ফিরছিলেন তাঁরা। বাড়ি ফেরার পথে দেখতে পান, পাড়ার ক্লাবের পুজোয় ভাঙচুর করা হচ্ছে। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। তাতেই শুরু হয় বচসা, গোলমাল। আক্রান্ত মহিলা বলেন, ‘‘আমার স্বামী শুধু ওদের জিজ্ঞাসা করেছিল, কেন ভাঙচুর করা হচ্ছে? ওরা তার কোনও জবাব না দিয়েই আমার স্বামীর উপরে চড়াও হয়। ওকে মারধর করা হয়। দুই চোখই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাকেও হেনস্থা করা হয়েছে। আমারও এক চোখে আঘাত রয়েছে।’’
ওই দম্পতির সঙ্গে আরও কয়েক জন ছিলেন। বাধা দিতে গিয়ে তাঁরাও মার খেয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁদের মধ্যে এক জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও তুলেছেন দম্পতি। তাঁদের দাবি, ‘নিষ্ক্রিয়’ ভূমিকা পালন করছে কসবা থানা। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হলেও এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। মহিলা বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে থাকা এক মহিলা হাসপাতালে ভর্তি। তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। তখন হাসপাতালে এসেছিলেন কাউন্সিলর। তিনি আমাদের টাকা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা বিচার চাই। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই।’’
কোন আক্রোশে এই হামলা? আক্রান্তদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের ক্লাবে দীর্ঘ দিন ধরেই সুশান্তবাবু এসে পুজোর উদ্বোধন করেন। এ বারও তা-ই করেছেন। তাতেই লিপিকা এবং তাঁর লোকজনের রাগ হয়ে থাকতে পারে।’’ সংশ্লিষ্ট ক্লাবের সেক্রেটারি বলেন, ‘‘লিপিকার ড্রাইভারের নেতৃত্বে গত রাতে ক্লাবে হামলা হয়েছে। ওরা ক্লাব দখল করতে এসেছিল।’’
উল্লেখ্য, কসবার ১০৭ এবং ১০৮ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূলের দখলে থাকলেও দীর্ঘ দিন ধরেই এই দুই ওয়ার্ডে শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল চলছে। বার বার তার নিদর্শন প্রকাশ্যে এসেছে। ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডে দীর্ঘ দিন কাউন্সিলর ছিলেন সুশান্ত। পরে ২০২১ সালে ওই ওয়ার্ডের আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় প্রার্থী বদল করে তৃণমূল। সুশান্তকে নিয়ে আসা হয় পাশের ওয়ার্ডে। ১০৭-এ জিতে কাউন্সিলর হন লিপিকা। সেই থেকে এই দুই কাউন্সিলর এবং তাঁদের অনুগামীরা ‘যুযুধান’। বার বার তাঁদের মধ্যেকার কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। হালতুর ঘটনাতেও দীর্ঘ দিনের সেই বিবাদের প্রতিফলনই দেখা গেল বলে মনে করা হচ্ছে। সুশান্ত অবশ্য এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই ঘটনায় রাজনৈতিক কোনও রং আছে বলে শুনিনি। কিছু দুষ্কৃতী ক্লাবের ছেলেদের মারধর করেছে। তৃণমূলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। তবে যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy