Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

যাদবপুরের রান্নাঘরে রেঁধে শ্রম দিতে চান চা-দোকানি

লকডাউনের শহরে এলাকার দিন আনি-দিন খাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন যাদবপুরের পড়ুয়া, গবেষক, শিক্ষক ও প্রাক্তনীরা।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২০ ০৩:৩২
Share: Save:

উদ্যোক্তারা চাইলে রোজই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি কিচেনে রান্না করে দিতে পারেন শ্যামল দাস। ক্যাম্পাসের চার নম্বর গেটের বাইরে তাঁর দোকান ‘শ্যামল টি স্টল’। লকডাউনে বন্ধ সেই দোকান। বাড়িতে বসে না থেকে এক দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে কমিউনিটি কিচেনে এসে রান্না করে দিয়েছেন শ্যামল। রান্না করতে খুব ভালবাসেন!

বাবা ছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই মালি। ছোটবেলায় এক দিন বাবার সঙ্গে গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে। ক্যান্টিনের রান্না দেখে শ্যামলেরও ইচ্ছে হয়েছিল, বড় হয়ে খাবারের দোকান করার। তাঁর দোকানে পাওয়া যায় চা, ওমলেট, নুডলস।

লকডাউনের শহরে এলাকার দিন আনি-দিন খাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন যাদবপুরের পড়ুয়া, গবেষক, শিক্ষক ও প্রাক্তনীরা। তাঁদের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চার নম্বর গেটের কাছে পার্কিং লটে তৈরি কমিউনিটি কিচেন থেকে প্রতিদিন খাবার যাচ্ছে দুঃস্থ মানুষগুলির কাছে। শ্যামলের পরিবারও সেখান থেকেই প্রতিদিন খাবার পাচ্ছে। চল্লিশ ছুঁইছুঁই ওই চায়ের দোকানির পরিবারে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী ও সন্তান-সহ মোট পাঁচ জন। শ্যামল জানালেন, কমিউনিটি কিচেন থেকে আসছে ভাত, ডাল, ডিমের ঝোল বা সয়াবিনের তরকারি।

আদতে ওড়িশার বাসিন্দা শ্যামলের পূর্বপুরুষ কলকাতায় এসে যাদবপুরেই থাকতে শুরু করেন। শ্যামলের বাবাও চাকরি পান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তাঁর বড় মায়া। প্রতিদিন ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ তাঁর দোকান ভরিয়ে রাখতেন। সেই দোকান কবে আবার খুলতে পারবেন, তা নিয়েই চিন্তায় কাটাচ্ছেন শ্যামল। বললেন, ‘‘খুব দুশ্চিন্তায় আছি। দোকান যে কবে আবার খুলতে পারব!’’

জানালেন, দোকানে কাঁচামাল যা ছিল, সবই দোকানের ভিতরে থেকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাঁর রান্নাবান্নার ইচ্ছেটা প্রবল। বললেন, ‘‘কমিউনিটি কিচেনে রোজ রেঁধে দিতে বললে রোজই রেঁধে দেব।’’

প্রতিদিন প্রায় ৬০০ মানুষের রান্না হচ্ছে ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কমিউন’-এ। সেই কাজ সামলাচ্ছেন প্রদীপ নাথ। বিশ্ববিদ্যালয়েরই হস্টেলের চুক্তিভিত্তিক রাঁধুনি তিনি। এখন রাঁধছেন কমিউনিটি কিচেনে। ভাত, ডাল, ডিমের ঝোল বা সয়াবিনের পাশাপাশি একটু বৈচিত্র আনারও চেষ্টা করছেন। লাউ চিংড়ি, মুড়িঘন্ট, দই-কাতলাও রেঁধেছেন। বললেন, ‘‘দুপুর পৌনে ১টার মধ্যে রান্না শেষ করে ফেলি। এর পরে ছাত্রেরা চলে যায়

সেই খাবার বিলি করতে। এই পরিস্থিতিতে অন্য কিছু দিয়ে না হোক, শ্রম দিয়ে যে সাহায্য করতে পারছি, তাতেও ভাল লাগছে।’’ জানালেন, পড়ুয়ারাও তাঁকে খুব সাহায্য করছেন। ক্যাম্পাসের ভিতরেই স্ত্রী ও তিন মাসের মেয়েকে নিয়ে থাকেন প্রদীপ। তাঁর রান্না করা খাবার যায় যাদবপুর, গড়িয়াহাট, গোলপার্ক, ঢাকুরিয়া, চারু মার্কেট, টালিগঞ্জ ও গড়িয়ায়। এর মধ্যেই এক দিন এসে রান্না করেছেন শ্যামল দাস। প্রদীপ বললেন, ‘‘শ্যামলদা এলে ভালই হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy