প্রতীকী ছবি
খানিকটা কানে শোনা, বাকিটা ধারণার কুণ্ডলী। এই দুইয়ের উপরে ভর করে গত কয়েক দিনে বেলগাছিয়া নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। করোনা-আতঙ্কের এই আবহে এমন একটি এলাকায় ‘র্যাপিড অ্যান্টিবডি’ পরীক্ষা শুরু করা নিয়ে স্নায়ুর চাপ ছিল মারাত্মক। দিনের শেষে সে সব সামলে ভয়কে জয় করে সচেতনতার সুর বেঁধে দিল নারীশক্তি। অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় নেতৃত্ব দিলেন কলকাতা পুরসভার ল্যাব সংক্রান্ত উপদেষ্টা, চিকিৎসক মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়। আর পরিবারের সদস্যদের পরীক্ষা কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে এসে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন বেলগাছিয়ার মহিলারা।
সোমবার বেলগাছিয়ার উর্দু স্কুলে এক ঘণ্টায় মোট ১৪ জনের র্যাপিড অ্যান্টিবডি পরীক্ষা হয়েছে। সেই তালিকায় শিশু থেকে প্রৌঢ়— সকলেই ছিলেন। ঘটনাচক্রে, প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই তাঁদের পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে আসার পিছনে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন বাড়ির মহিলারা।
কোনও এলাকায় করোনার প্রকোপ কেমন, তা বুঝতে রবিবার এ রাজ্যে র্যাপিড অ্যান্টিবডি পরীক্ষার সূচনায় সবুজ সঙ্কেত দিয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য ভবন। এ শহরে এই পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে এসএসকেএম হাসপাতাল। সেই মতো এ দিন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এসএসকেএম থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দুপুরে বেলগাছিয়ায় পৌঁছয় কলকাতা পুরসভার র্যাপিড পরীক্ষার তিনটি দল। প্রতিটি দলে দু’জন করে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টও ছিলেন। মোট দশটি এমন দল গড়া হয়েছে। সমন্বয়কারীর ভূমিকায় পুরসভার ল্যাব উপদেষ্টা, চিকিৎসক মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: কাপুচিনোয় চুমুক দিয়ে বলতে পারি, ‘ক্ষমা করো’
স্নায়ুর চাপ কেমন, র্যাপিড পরীক্ষা শুরুর প্রতিটি মুহূর্ত থেকেই তা ছিল স্পষ্ট। বিকেল ৩টে নাগাদ পুরসভার দল বেলগাছিয়ায় পৌঁছয়। মৈত্রেয়ীদেবী বলেন, ‘‘র্যাপিড অ্যান্টিবডি পরীক্ষা হল এক ধরনের স্ক্রিনিং টেস্ট। কারও দেহে করোনা রয়েছে কি না, তা এই পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায় না। কারও করোনা-পরীক্ষা প্রয়োজন কি না, এই স্ক্রিনিংই তা বলে দেয়। করোনার জন্য আরটিপিসিআর-এ লালারসের নমুনা পরীক্ষাই আসল।’’
মৈত্রেয়ীদেবী জানান, পরীক্ষায় সময় লাগে ২০ মিনিট! তবে ফলাফল তৎক্ষণাৎ জানা যাবে না। আইসিএমআর-এর ওয়েবসাইটে আগে তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কী ভাবে হয় পরীক্ষা? মৈত্রেয়ীদেবী বলেন, ‘‘আঙুলে সুচ ফুটিয়ে রক্তের নমুনা নেওয়া হয়।’’
ক্ষুদিরাম বসু সরণি ধরে উর্দু স্কুলের উদ্দেশে হাঁটতে থাকেন পুর চিকিৎসক। স্কুলের হলঘরে ঢুকেই বন্দোবস্ত কেমন হবে, তা বুঝিয়ে দেন। এর পরেই এক-এক করে আসা শুরু করলেন রুকসানা পরভিন, মুমতাজ বেগম, কায়নাতরা। স্নাতকোত্তর স্তরের এক ছাত্রী জানান, গত দু’দিন ধরে জ্বর। তাই উল্টোডাঙা থানার ঘোষণা শুনে নিজে এবং পরিবারের বাকি দুই সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। দু’সপ্তাহ ধরে শরীর খারাপ মুমতাজের। সঙ্গে মাথা ব্যথা এবং দুর্বলতা রয়েছে। মুমতাজের সঙ্গী তাঁর মেয়ে। প্রৌঢ় আরিফ হুসেন চার দিন ধরে জ্বর, বমি, কাশিতে ভুগছেন। স্ত্রী রুকসানা তাই স্বামীকে নিয়ে এসেছেন পরীক্ষা করাতে।
কায়নাত বলেন, ‘‘নিজেদের স্বার্থেই অসহযোগিতার পথে না হেঁটে সকলের পরীক্ষা করানো উচিত।’’ বেলগাছিয়া সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা কাটিয়ে ওঠার আর্জিও জানান তিনি। তরুণীর কথায়, ‘‘কলকাতা পাশে না থাকলে বেলগাছিয়া একা এই লড়াই লড়বে কী ভাবে?’’
অন্য দিকে রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ এ দিন জানিয়েছেন, কলকাতা এবং হাওড়ার পরে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ‘লো ইনসিডেন্ট’ কিছু জেলাতেও এই পরীক্ষা শুরু হবে।
আরও পড়ুন: কর্মী সংক্রমিত, বিক্ষোভ শিশু হাসপাতালে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy