Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

কলকাতা কি কোনও দিনই পরিচ্ছন্নতার পাঠ নেবে না?

‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর (আইসিএমআর) তরফে আগেই গুটখা, খৈনি, পানমশলা-সহ ধোঁয়াহীন তামাক প্রকাশ্যে খাওয়া এবং থুতু ফেলা বন্ধে সুপারিশ করা হয়েছিল।

যত্রতত্র: করোনা সংক্রমণের আতঙ্কও ঠেকাতে পারেনি এই প্রবণতা। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

যত্রতত্র: করোনা সংক্রমণের আতঙ্কও ঠেকাতে পারেনি এই প্রবণতা। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২০ ০২:০৫
Share: Save:

গত বছর শুধু কলকাতাতেই গুটখা, খৈনি, পানমশলা, নস্যি-সহ ধোঁয়াহীন তামাকজাত (স্মোকলেস টোব্যাকো) পণ্য বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৬২০ কোটি টাকার! ‘দ্য গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২’-এর (গ্যাটস-২) তথ্য বিশ্লেষণে এমনটাই উঠে এসেছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময়ে এই তথ্যও চিন্তায় রাখছে বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ চিকিৎসক সকলকে।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর (আইসিএমআর) তরফে আগেই গুটখা, খৈনি, পানমশলা-সহ ধোঁয়াহীন তামাক প্রকাশ্যে খাওয়া এবং থুতু ফেলা বন্ধে সুপারিশ করা হয়েছিল। কারণ, পানমশলা, সুপারি বা গুটখার মতো ধোঁয়াহীন তামাক থুতু ফেলার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় বলে জানিয়েছিল আইসিএমআর। বুধবারই তামাকজাতীয় সমস্ত পণ্য উৎপাদন, বিক্রি, সরবরাহ-সহ সব কিছুই নিষিদ্ধ করার নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্য আগেই তামাকজাত পণ্য উৎপাদন, বিক্রি, সরবরাহ বন্ধ করলেও পশ্চিমবঙ্গ এখনও তা করেনি। ২০১৩ সাল থেকে গুটখা বিক্রি বন্ধের জন্যও নির্দেশিকা জারি করেছিল রাজ্য। প্রতি ডিসেম্বরে তা নতুন ভাবে কার্যকর হয়। কিন্তু এখনও সেটা করা হয়নি বলেই প্রশাসন সূত্রের খবর। এমনকি, কলকাতা-সহ রাজ্যে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রিভেনশন অব স্পিটিং ইন পাবলিক প্লেস অ্যাক্ট, ২০০৩’ থাকলেও তা মানা হয় না। যদিও প্রকাশ্যে থুতু ফেলার জরিমানা সর্বনিম্ন ৫ হাজার ও সর্বাধিক এক লক্ষ টাকা করার বিল আগেই পাশ করেছিল রাজ্য সরকার। তা ছাড়া গুটখা নিষিদ্ধ হওয়ায় তা বিক্রি, সরবরাহ-সহ একাধিক বিষয়ে ভারতীয় দণ্ডবিধি আইনেও পদক্ষেপ করা যায়। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, এই মুহূর্তে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এপিডেমিক ডিজ়িসেস অ্যাক্ট’ যেহেতু বলবৎ রয়েছে, তাই সে অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে পারে সরকার। কিন্তু তা হচ্ছে কই, প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের।

পিক-শহর


• ৪ লক্ষ ৯৬ হাজার ৪০৯ জন খৈনি খান
• ২ লক্ষ ৯৪ হাজার ১৬৮ জন পান, চুন-সহ তামাক খান
• ২ লক্ষ ২৫ হাজার ২২৩ জন তামাক সেবন করেন
• ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ২৯৫ জন গুটখা খান
• ১ লক্ষ ১ হাজার ১২০ জন তামাক-সহ পানমশলা খান
• ৯১৯৩ জন নস্যি নেন
• ৪৫৯৬ জন তামাকজাত অন্যান্য জিনিস খান।
(সূত্র: গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে-২)

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন সংক্রমণ ৮২৬ জনের, আক্রান্ত বেড়ে ১২৭৫৯, মৃত ৪২০

আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনায় মৃত্যু ৭ থেকে বেড়ে হল ১০, সক্রিয় রোগী ১৪৪

এ দিকে, গ্যাটস-২ সমীক্ষার তথ্য দেখিয়েছে, সারা দেশে ধোঁয়াহীন তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৯ কোটি ৪০ লক্ষ। সে তথ্যের বিশ্লেষণে এ-ও ধরা পড়েছে, কলকাতায় ধোঁয়াহীন তামাকের মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় খৈনি। জনপ্রিয়তার নিরিখে তার পরের পণ্যগুলি হল যথাক্রমে চুন-তামাক-সহ পান এবং পানমশলা, চিবোনো তামাক, গুটখা, নস্যি। এগুলি বিক্রির জায়গাও একাধিক। এত দিন প্রকাশ্যে তা বিক্রি হত। লকডাউন পর্বেও লুকিয়ে-চুরিয়ে দিব্যি বিক্রি চলছে বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকদের।

ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এমনি সময়ে তো বটেই, কোভিড-১৯ সংক্রমণে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার পুরো নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। কারণ, তামাক শ্বাসযন্ত্রকে দুর্বল করে। এই সংক্রমণে ফুসফুস-সহ শ্বাসযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির আশঙ্কাও থাকছে। তাঁর কথায়, ‘‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তামাকজাত পণ্য উৎপাদন বা বিক্রি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে পরিস্থিতি খুব বিপজ্জনক জায়গায় যাচ্ছে।’’

তামাকজাত পণ্য বিক্রিতে কড়াকড়ি, সচেতনতা বৃদ্ধি প্রভৃতিতে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করে যে বেসরকারি সংস্থা, তার প্রধান নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, গবেষণায় প্রমাণিত যে থুতুর মাধ্যমে যক্ষ্মা, ভাইরাল মেনিনজাইটিস-সহ ভাইরাসজনিত একাধিক সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে পারে। কোভিড-১৯ সংক্রমণেরও অন্যতম মাধ্যম এই থুতু। তাই এখনই এ সংক্রান্ত আইনের কঠোর প্রয়োগ করা প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সঙ্গীতা ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘রাস্তাঘাট তো বটেই। সরকারি হাসপাতালের দেওয়ালও গুটখা, পানের পিকে ভরে থাকে। অর্থাৎ, যেখানে কেউ সুস্থ হতে যান, সেখান থেকেই সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে আর কী!’’

২০১৬ সালে অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মহম্মদ নাদিমুল হক বলেছিলেন, ‘‘ভারত হল থুতু ফেলার দেশ। শুধু একঘেয়েমি বা ক্লান্তি নয়, সব সময়ে থুতু ফেলি আমরা।’’ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘কোভিড-১৯ অন্য সব কিছু বদলালেও থুতু ফেলার মহান অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারেনি!’’

যেমন এখনও পর্যন্ত পারেনি গুটখা, পানমশালা বিক্রি আটকাতেও!

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Kolkata COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy