অসহায়: বাবা-মায়ের সঙ্গে এনআরএস হাসপাতাল চত্বরে ছোট্ট ঈশান শেখ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
মায়ের বুকে মুখ গুঁজে রয়েছে ছোট ছেলেটা। তাকে নিয়েই রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেঁদে চলেছেন বাবা-মা। হাতে ধরা কাগজ দেখিয়ে সাহায্য চাইছেন। করোনার ভয়ে প্রায় কেউই এগিয়ে আসতে চাইছেন না। কেউ কেউ এগিয়ে এলেও সব শুনে চলে যাচ্ছেন। শেষে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বাবা বললেন, ‘‘বিস্কুট খাবি? নিয়ে আসি।’’ উত্তর নেই শিশুর মুখে।
সোমবার সাতসকালে বাবা-মায়ের সঙ্গে মায়াপুর থেকে বাসে চেপে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিল পাঁচ বছরের ঈশান শেখ। জন্ম থেকেই জটিল রোগে ভুগছে সে। কী রোগ জানতে চাইলে নাম বলতে পারেন না বাবা নুর ইসলাম শেখ। শুধু বললেন, ‘‘কয়েক দিন পর পর রক্ত দিতে হয়। এখন বলছে, অস্থিমজ্জা বদলাতে হবে। আমি সামান্য মাটি কাটার কাজ করি। কোথায় পাব এত টাকা?’’
কিন্তু সরকারি হাসপাতালে তো টাকা লাগার কথা নয়?
এন আর এসের বাইরে দাঁড়িয়ে নুর ইসলাম বললেন, ‘‘চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছেন, এখানে আর কিছু হবে না। অন্য কোন হাসপাতালে গেলে হবে, সেটাও বলছেন না। এক বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছিলাম। ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হবে বলেছে। লকডাউনের পরে কাজও নেই। ভিক্ষা করে ছেলেটাকে খাওয়াচ্ছি।’’ ওই যুবকের দাবি, ছেলের চিকিৎসার জন্য লকডাউনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়েও কাগজপত্র জমা দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এখনও কোনও উত্তর আসেনি।
করোনা পরিস্থিতিতে সব সরকারি হাসপাতালে সব রোগের চিকিৎসা হচ্ছে না। তাই এই অবস্থায় অন্য কোন সরকারি হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা মিলবে, তা-ও বুঝতে পারছেন না নুর ইসলামের মতো অনেকেই। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কোথায় গেলে চিকিৎসাটা হবে, সেটাই কেউ বলছেন না। এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে ছেলেটাই তো শেষ হয়ে যাবে।’’
যেমন, রেফারের চক্করে পড়ে এ দিনই দুপুরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে স্ট্রেচারেই মৃত্যু হয়েছে ২৬ বছরের অশোক রুইদাসের। তাঁর বাবা-মায়ের দাবি, টাইফয়েড নিয়ে দক্ষিণ বারাসতের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন অশোক। আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য এ দিন ছেলেকে নিয়ে তাঁরা পৌঁছেছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁকে রেফার করা হয় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। শম্ভুনাথ থেকে পাঠানো হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে কাগজপত্র তৈরির সময়েই মৃত্যু হয় যুবকের।
এন আর এস চত্বরে দাঁড়িয়ে এ দিন রেফারের ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন ট্যাংরার বাসিন্দা রাধা দাস। ২৪ বছরের ছেলে তাপস কিডনির রোগে ভুগছেন। ছ’মাস আগে তাঁর মূত্রনালিতে পাইপ লাগানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও তা খোলা হয়নি। রাধাদেবীর কথায়, ‘‘ছেলেটার বার বার জ্বর আসছে। কিছু খেতে পারছে না। পাইপটা খোলার জন্য লকডাউনের সময়েই এন আর এসে ভর্তি করিয়েছিলাম। তখন বলা হল, দেড় মাস পরে পাইপ খুলবে। কিন্তু এখনও খোলা হল না। শুধু বলা হচ্ছে, ট্রপিক্যাল থেকে লিখিয়ে নিয়ে আসুন।’’ তাঁর দাবি, এ দিনও চিকিৎসককে দেখানোর পরে ট্রপিক্যালে যেতে বলা হয়েছে।
কেতুগ্রামের বাসিন্দা, প্রৌঢ়া মুন্নিজানের অভিযোগ, তাঁর সাত মাসের নাতি রিমান শেখের অস্ত্রোপচার কবে হবে, তা বুঝতে পারছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘বাচ্চাটা যন্ত্রণায় ছটফট করছে। ১৩ জুলাই তারিখ দিয়েছিল অস্ত্রোপচারের। কিন্তু আজ দেখানোর পরে বলা হয়, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে দেখিয়ে আবার বৃহস্পতিবার আসতে।’’ এন আর এসেই মা ও ঠাকুরমার সঙ্গে রয়েছে শিশুটি। তার ডান হাত ও পেটের বেশ খানিকটা অংশে জরুলের মতো হয়ে রয়েছে।
ট্যাংরার ২২ বছরের রূপম দাসের পরিজনের অভিযোগ, ‘‘বেশ কয়েক দিন আগে মেয়েটার স্ট্রোক হয়েছে। এখানে আনার পরে চিকিৎসকেরা ভর্তি নিলেন না। বললেন, করোনার সময়ে ভর্তি করা ঠিক হবে না। তাই বাড়ি থেকে কয়েক দিন অন্তর যাতায়াত করেই চিকিৎসা করাচ্ছি।’’
সব ক’টি অভিযোগ শোনার পরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার করবী বড়াল বলেন, ‘‘ঘটনাগুলি জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy