বাসে ওঠার ভিড়। বৃহস্পতিবার, উল্টোডাঙায়। নিজস্ব চিত্র
বাসভাড়া বাড়বে কি না, বাড়লেও কতটা বাড়বে, তা নিয়ে টালবাহানা চলছেই। বেসরকারি বাস সংখ্যায় কম পথে নামায় মানুষের ভোগান্তিও অব্যাহত। এই পরিস্থিতিতে মালিকেরা জানিয়ে দিলেন, বাস নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ সেই অর্থ বা পরিকাঠামো কোনওটাই তাঁদের নেই। এর ফলে শুধু বাস পেতে ভোগান্তিই নয়, প্রশ্নের মুখে পড়ল যাত্রীদের সুরক্ষাও।
দীর্ঘ লকডাউনের পরে, আনলক-১ পর্বে রাস্তায় বেসরকারি বাস নামার আগে প্রশাসনের তরফে সুরক্ষা নিয়ে একগুচ্ছ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যাত্রী ও বাসকর্মীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, আসনের সংখ্যা অনুযায়ী যাত্রী তোলা থেকে শুরু করে প্রতিটি ট্রিপের (যাত্রাস্থল থেকে গন্তব্যে পৌঁছনো) শেষে আসন, হাতল স্যানিটাইজ় করার পাশাপাশি বাসের বাইরের অংশেও জীবাণুনাশক ছড়াতে বলা হয়েছিল।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বাস জীবাণুমুক্ত করার নিয়ম কার্যত মানা হচ্ছে না কোনও ক্ষেত্রেই। প্রায় প্রতিটি বাস সংগঠনই স্বীকার করে নিচ্ছে, পরিকাঠামোর অভাবে জীবাণুমুক্ত করার কাজ সম্ভব হচ্ছে না। তবে বাসমালিক ও কর্মীদের দাবি, প্রতিটি ট্রিপের শেষে তাঁদের পক্ষে হাতল ও আসন জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব না-হলেও সকালে বাস বেরোনোর আগে সাবান জলে ব্লিচিং মিশিয়ে বাস ধোয়ার কাজ করছেন তাঁরা। যদিও এই কাজ যে সব বাসেই হচ্ছে, তা নয় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। এই সমস্যার সমাধানের জন্য সরকারি পরিকাঠামোর আবেদন জানানো হলেও তাতে ফল মেলেনি বলেই দাবি তাঁদের। প্রশাসনের অবশ্য বক্তব্য, বাস জীবাণুমুক্ত করার দায়িত্ব মালিকদেরই। রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্যানিটাইজ় করতে না-পারাটা ওঁদের নিজেদের ব্যর্থতা। প্রতিদিন বাস বার করার সময়ে যেমন যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করাটা রুটিন দায়িত্বে পড়ে, তেমনি স্যানিটাইজ় করাটাও একটা দায়িত্ব।’’
বাস-মিনিবাসের মালিকেরা জানাচ্ছেন, সরকারি সাহায্য ছাড়া এই কাজের ভার বহন করা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব। ‘অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতি’-র সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাসগুলি যে ভাবে জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে না। জনস্বাস্থ্যের প্রশ্ন যেখানে রয়েছে, সেখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ওই কাজ যথাযথ ভাবে করার সুযোগ থাকলেও বেসরকারি ক্ষেত্রে নেই।’’ বাসমালিকেরা জানাচ্ছেন, সরকারি বাসের নিজস্ব ডিপোয় জীবাণুমুক্ত করার কাজ সম্ভব। তাঁদের সেই সুবিধা নেই।
‘বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট’-এর সহ-সভাপতি টিটু সাহা বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের তরফে কসবায় একটি স্যানিটাইজ়েশন সেন্টার হয়েছে। কিন্তু ট্রিপের মাঝে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করে বাস স্যানিটাইজ় করতে কেউ যাচ্ছেন না। প্রতিটি স্ট্যান্ডে হাতে ধরা যন্ত্র পাঠিয়ে বাসে জীবাণুনাশক ছড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও এখনও কিছু হয়নি।’’ ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস’-এর সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, কোনও যাত্রীর থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে কি না, তা বলা মুশকিল। আবার প্রত্যেক যাত্রী নামার পরে বারবার জীবাণুনাশক ছড়ানোও সম্ভব নয় কন্ডাক্টরের পক্ষে। তপনবাবুর দাবি, তাঁদের সংগঠনের তরফে একটি সংস্থার সঙ্গে জীবাণুমুক্ত করার চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু খরচ কোথা থেকে আসবে তার সমাধান হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে বাসমালিকদের বক্তব্য, দীর্ঘ লকডাউনের ধাক্কার পরে বাস জীবাণুমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কোনও ভাবেই জোগাতে পারছেন না তাঁরা। ভাড়া না-বাড়া, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ও করোনা-বিধির ত্র্যহস্পর্শে তাঁরা হয়রান। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসুর প্রশ্ন, ‘‘যথাযথ ভাবে বাস স্যানিটাইজ় করার খরচ কোথা থেকে আসবে?’’
যথাযথ ভাবে জীবাণুমুক্ত না-হয়েই তাই শহর থেকে শহরতলির পথে ছুটছে অধিকাংশ বেসরকারি বাস। গণপরিবহণে নিত্যই সঙ্কটের মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। বাস সংগঠনের কর্তা থেকে মালিক সকলেই বলছেন, ‘ভরসা শুধু ভগবান!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy