Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
ভোট মরসুমে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। সিঁদুরে মেঘ দেখছেন ভুক্তভোগীরা।
Coronavirus in Kolkata

ফেলে গিয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্স, ভোটেও তাড়া করছে সেই স্মৃতি

কেউ নিজে লাঞ্ছিত হয়েছেন, কেউ নিকট আত্মীয়কে হারিয়েছেন স্রেফ জরুরি সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না-পারায়।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪০
Share: Save:

উত্তর কলকাতার রাজেন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটের এক প্রায় অবাঙালি পাড়ায় হয়তো তিনিই একমাত্র বাঙালি। তাঁর আসল নামই ভুলে গিয়েছেন প্রতিবেশীদের অনেকে। এলাকার লোকে তাঁকে চেনেন ‘বাঙালি সিংহ’ বলে। তাঁর আরও একটি পরিচয় অবশ্য তৈরি হয়ে গিয়েছে গত এক বছরে। এক দুপুরে তাঁর বাড়ির খোঁজ করতে গিয়েই জানা গেল সে কথা। এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘ওই বাঙালি সিংহ তো? করোনা হয়েছে বলে ওঁকেই অ্যাম্বুল্যান্স ফেলে দিয়ে পালিয়েছিল! করোনা আর অ্যাম্বুল্যান্স বললেই হবে। লোকে এখন ওঁকে করোনা-অ্যাম্বুল্যান্স বলেও ডাকে।’’

কোনও একটি দিনের ঘটনা হয়তো এ ভাবেই ধীরে ধীরে কারও পরিচিতি হয়ে দাঁড়ায়। যাঁকে নিয়ে কথা হচ্ছে, তিনি অবশ্য বললেন, ‘‘বাঙালি সিংহ নয়, আমার নাম তো কমলেশ্বর সিংহ। লোকে পাল্টে দিয়েছে। গত এক বছরে লোকে অবশ্য আরও অনেক কিছুই করেছে।’’ কয়েক মিনিট দম নিয়ে বছর সত্তরের বৃদ্ধ বললেন, ‘‘গত বছরের মার্চে যখন আমার জ্বর হল, তখন আদৌ করোনা হয়েছিল কি না, কেউ পরীক্ষা করে দেখেননি। করোনা রোগী ভেবে অ্যাম্বুল্যান্সের চালক আমাকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যেতেই সেই খবর ছড়িয়ে যায়। চিকিৎসা তো জোটেইনি, উল্টে করোনার ভয়ে পাড়ার লোকজন আমাদের এক রকম ঘরবন্দি করে দেন লকডাউনের সময়ে। পরে জ্বর কমলে শুরু হয় ছেলে-ছোকরাদের টিটকিরি। অনেকেই আমাকে দেখলে করোনা-অ্যাম্বুল্যান্স বলে খেপায়।’’

বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, গত এক বছরের করোনাকালের এমন দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা এখনও সঙ্গী অনেকেরই। কেউ নিজে লাঞ্ছিত হয়েছেন, কেউ নিকট আত্মীয়কে হারিয়েছেন স্রেফ জরুরি সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না-পারায়। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভোটের গেরোয় ফের করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে দেখে এখন প্রমাদ গুনছেন তাঁদের অনেকেই। তাঁরা বলছেন, ‘‘করোনায় অনেক কিছু হারিয়েছি। ভোটদান তো তা ফেরাতে পারবে না। উল্টে ভোটযজ্ঞ গত বছরের স্মৃতি ফিরিয়ে এনে ভয় ধরাচ্ছে।’’

কমলেশ্বর যেমন জানালেন, রাজেন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটের ওই বাড়িতে দুই ছেলে রবিকান্ত ও শ্রীকান্তকে নিয়ে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভাড়া আছেন তিনি। জোড়াসাঁকো বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তাঁরা। শ্রীকান্ত সাফাইকর্মীর কাজ করতেন। এক সময়ে কমলেশ্বরও সেই কাজে যুক্ত ছিলেন। রবিকান্ত গাড়ি চালাতেন। সামাজিক লাঞ্ছনা থেকে বাঁচতে লকডাউন ওঠার পরে ট্রেন চালু হতেই বিহারে গ্রামের বাড়িতে চলে যান তাঁরা। কয়েক মাস সেখানে কাটিয়ে ফিরে দুই ছেলে জানতে পারেন, চাকরি আর নেই। কমলেশ্বরের কথায়, ‘‘দুই ছেলেরই কাজ গিয়েছে। আমার অবস্থার কথা জানিয়ে এলাকার নেতার কাছেও গিয়েছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি।’’ কয়েক মাস ধরে কাজ খুঁজে ফের বিহারের বাড়িতে চলে যেতে হয়েছে তাঁদের।

বৃদ্ধ বলে চলেন, ‘‘এর মধ্যেই ঘটে গিয়েছে আরও একটি বিপদ। মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম দিল্লিতে। সন্তান হওয়ার সময়ে মেয়ে মারা যায়। জামাই দেখত না। মেয়েকে যে নিজের কাছে নিয়ে আসব, ট্রেন বন্ধ থাকায় সেই উপায়ও ছিল না। যত দিনে ট্রেন চালু হল, সব শেষ।’’

তবে কি এ বার কলকাতার ভোট এড়িয়ে বিহারের বাড়িতেই থাকবেন তাঁরা? গলা বুজে আসে বৃদ্ধের। কোনও মতে ফোনে বলেন, ‘‘ভোটে তো শুধু করোনা বাড়ছে। যার জন্য সব শেষ হল, সেটাকেই আরও বাড়িয়ে দিতে ভোট দিতে যাব?

অন্য বিষয়গুলি:

Corona coronavirus Coronavirus in Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy