প্রতীকী ছবি।
করোনার আতঙ্ক হিতাহিত জ্ঞান তো বটেই, মানবিকতার ন্যূনতম অনুভূতিগুলোকেও কি কেড়ে নিচ্ছে? না-হলে ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের কাছে মা এসেছেন জেনেও তাঁকে তাড়াতে গোটা আবাসন একজোট হয়ে নেমে পড়ে কোন যুক্তিতে? সম্প্রতি রানাঘাট এলাকার বাসিন্দা, আইডি হাসপাতালের কর্মী চিত্রা মণ্ডল গ্রামের বাড়িতে ফিরতে গিয়ে এলাকাবাসীর প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। রবিবারের ঘটনাও যেন সেই ঘটনারই অনুসারী।
গত রবিবার বসিরহাট থেকে রাজপুরে ছুটে আসতে হয়েছিল ৬৩ বছরের এক মহিলাকে। কারণ, তাঁর বছর তেত্রিশের একমাত্র মেয়ে ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই পরিস্থিতিতে মেয়ের দেখভালের জন্য তাঁর আসা ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু তিনি আসতেই রাজপুর ফাঁড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বের ওই আবাসনে বাসিন্দাদের সম্মিলিত বাধার মুখে পড়তে হয় গোটা পরিবারকে। কোনও উপসর্গ না থাকা সত্ত্বেও মহিলাকে আবাসন ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়।
পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, সোমবার রাতে ঝড়-জল মাথায় করেই সন্তানসম্ভবা মেয়েকে নিয়ে মহিলাকে ছুটে যেতে হয় সোনারপুর থানায়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটলেও আতঙ্ক কমছে না তাঁদের।
পেশায় সঙ্গীতশিল্পী ওই যুবতীর স্বামী এক জন চিত্রশিল্পী। বছর দুয়েক ধরে তাঁরা রাজপুর ফাঁড়ির কাছে ওই আবাসনে আছেন। অন্তঃসত্ত্বা ওই যুবতীকে সাহায্য করতে মাসখানেক ধরে তাঁর শাশুড়ি এসে ছিলেন সেখানে। সম্প্রতি শ্বশুরের শরীর খারাপ হওয়ায় শাশুড়িকে ফিরে যেতে হয়। এই অবস্থায় এক পারিবারিক বন্ধুর ব্যক্তিগত গাড়িতে করে নিজের মাকে বসিরহাট থেকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন ওই যুবতী। স্থানীয় কাউন্সিলর এবং পুলিশের সাহায্যে বিশেষ অনুমতি নিয়েই গত রবিবার দুপুরে মেয়ের বাড়িতে পৌঁছন ওই মহিলা।
আরও পড়ুন: রমজানে যত্রতত্র থুতু না ফেলতে আর্জি
তাঁর আসার খবর চাউর হতেই সে দিন সন্ধ্যায় কয়েক জন বাসিন্দা এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসেন। তাঁদের প্রশ্ন, বসিরহাটের মতো নজরদারির অধীনে থাকা এলাকা থেকে কেন ওই মহিলাকে আসতে দেওয়া হয়েছে?
আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা বললেও কেউ তা কানে তুলতে চাননি বলে অভিযোগ। বিষয়টি পুলিশকে জানালে সোনারপুর থানা ওই মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। সেখানে চিকিৎসকেরা সোমবার তাঁকে পরীক্ষা করার পরে জানিয়ে দেন, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। তাঁর দেহে কোনও উপসর্গ নেই। তবে সাবধানতার জন্য ১৪ দিন কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ওই ঘটনার কথা জেনে আবাসিকদের একাংশ মঙ্গলবার সকালে ফের ওই যুবতীর ফ্ল্যাটে চড়াও হন। তাঁরা পরিবারটিকে আবাসন ছেড়ে চলে যেতে বলেন। অন্তঃসত্ত্বা যুবতী তাঁদের বলেন যে, মা বাড়ি ছেড়ে কোথাও বেরোবেন না। তাঁরা নিজেরাও সতর্কতা মেনে চলছেন। কিন্তু তাতেও আবাসিকেরা সন্তুষ্ট হননি বলে অভিযোগ। ঝামেলা বাড়ায় ফের পুলিশের দ্বারস্থ হয় ওই পরিবার। পুলিশ আবাসিক কমিটির সঙ্গে কথা বলায় বিষয়টি মেটে।
আরও পড়ুন: করোনা-থাবায় অনিশ্চয়তায় যৌনকর্মীরা
তবে ভয় কাটছে না যুবতীর। তাঁর কথায়, ‘‘বছর দুয়েক আগে এখানে ভাড়ায় এসেছিলাম। পরিবেশটা ভাল লাগায় পরে ফ্ল্যাট কিনি। কিন্তু বিপদের সময়ে পরিচিত আবাসনই কী করে এত অচেনা হয়ে গেল, ভাবতে পারছি না!’’
আবাসিক কমিটির সম্পাদক অবশ্য বাড়ি ছাড়তে বলার কথা অস্বীকার করেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক জনের আসা নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল। তবে এ নিয়ে প্রশাসন যা বলবে, আমরা মেনে চলব।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy