ঘেঁষাঘেঁষি: পিকনিক গার্ডেন এলাকার একটি বস্তিতে। নিজস্ব চিত্র
আক্রান্ত ব্যক্তি কার বা কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, কোভিড সংক্রমণের ধারা বোঝার জন্য সে সব জানা (কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং) খুবই দরকার। কিন্তু কলকাতায় সেই কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং-এরই খামতি রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ। ফলে এখানে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে কি না, সে ব্যাপারেও নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে মত তাঁদের।
কারণ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অর্থাৎ এপিডিমিয়োলজিস্টদের একটি অংশের বক্তব্য, সংক্রমণ ছড়ানোর অভিমুখকে (চেন অব ট্রান্সমিশন) যখন চিহ্নিত করা যায় না, তখনই বলা হয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এপিডিমিয়োলজিস্ট কুণালকান্তি মজুমদারের কথায়, ‘‘কলকাতার মতো শহরে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করাটা মুশকিল ঠিকই। কিন্তু তা সত্ত্বেও যে ভাবে তা করার দরকার ছিল, তা হয়নি। এখন কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং না হলে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে কি না, তা-ও বলা যাবে না।’’
বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের বক্তব্য, গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু না হলেও এলাকাভিত্তিক তথ্যের পর্যালোচনা এবং তার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, স্থানীয় ভাবে কোথাও-কোথাও দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এক এপিডিমিয়োলজিস্টের কথায়, ‘‘আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সবাইকে চিহ্নিত করে হোম আইসোলেশনে অথবা কোয়রান্টিন কেন্দ্রে রাখা দরকার। তা না হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সংক্রমণ থামানোটা মুশকিল।’’
রাজ্য সরকারের হেলথ বুলেটিন অনুযায়ী, করোনা আক্রান্ত পজ়িটিভ কেসের সংখ্যা সব থেকে বেশি কলকাতায়। কারণ, ‘ডিস্ট্রিক্ট সেনসাস হ্যান্ডবুক’-এর তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের মধ্যে সব থেকে বেশি জনঘনত্ব কলকাতায় (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২৪,৩০৬ জন)। এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘শহরের অনেক জায়গায় একই ঘরে তিন-চার জন বাস করেন। শুধু তাই নয়, একই শৌচাগার, একই জলের কলও তাঁরা ব্যবহার করেন। ফলে সেই সব জায়গায় সংক্রমণ হলে তা দ্রুত ছড়ানোই স্বাভাবিক।’’
তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’ করার ক্ষেত্রে সরকারি স্তরে খামতির পাশাপাশি নাগরিকদের একাংশও এ ব্যাপারে দায়ী। কারণ, অনেকেরই অসুখ হলে তাঁরা সেটা লুকিয়ে যাচ্ছেন। ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর ডিরেক্টর-প্রফেসর মধুমিতা দোবে জানাচ্ছেন, কলকাতায় এখনও পর্যন্ত সংক্রমণের যে ধারা দেখা গিয়েছে, তাতে নমুনা পরীক্ষা ও কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং আরও করা দরকার। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) সাম্প্রতিক র্যাপিড টেস্ট অনুমোদনের ফলে পরীক্ষার সুবিধা বাড়ানো যেতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘কোয়রান্টিন কেন্দ্রে যাওয়ার ভয়ে মানুষ অসুস্থতা গোপন করছেন। এই মানসিকতা পাল্টানো দরকার।’’
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা রাজ্যে মোট ৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ২৫৮ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। অর্থাৎ রাজ্যে মোট জনসংখ্যার তুলনায় পরীক্ষার শতকরা হার ০.৪৮! তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, কত কোটি লোকের মধ্যে কত জনের পরীক্ষা করা হল, সেটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং যে জায়গাগুলি থেকে বেশি সংখ্যক সংক্রমণের খবর আসছে, সেই এলাকায় পরীক্ষা করা হচ্ছে কি না, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘কোনও এলাকায় বেশি আক্রান্ত হওয়ার কারণে যদি সেখানে পরীক্ষা না করে অন্য এমন জায়গায় পরীক্ষা করা হল, যেখানে সংক্রমণের খবর নেই এবং দেখানো হল এত সংখ্যক পরীক্ষা করা হয়েছে, তা হলে সেই পরীক্ষার কোনও মানে নেই।’’ কানপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ‘ম্যাথেমেটিক্স অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স’-এর অধ্যাপক মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ‘‘কত জনের পরীক্ষা হল, তার থেকেও কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং-এর উপরে জোর দেওয়া প্রয়োজন। আক্রান্তের বাসস্থান, কর্মস্থান-সহ সমস্ত জায়গায় সমানুপাতিক ভাবে পরীক্ষা করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy