Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Calcutta News

স্বাভাবিক মৃত্যু দাদার, করোনা আতঙ্কে দেহ নিয়ে স্বেচ্ছাবন্দি ভাই

কাউকে কিছু না জানিয়ে কেন দাদার দেহ আগলে বসেছিলেন আশিস সিংহ?

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২০ ১৯:০৫
Share: Save:

দুই ভাই থাকতেন কলকাতা পুলিশের আলিপুর বডি গার্ডস লাইনের ক্যান্টিনে। এলাকাটা কনটেনমেন্ট জোন হওয়ায় ওই ক্যান্টিন সিল করে দেওয়া হয় সম্প্রতি। বুধবার সন্ধ্যায় ওই ক্যান্টিনের দিক থেকে পচা গন্ধ আসতে থাকায় বডিগার্ডস লাইনের পুলিশ কর্মীরা গিয়ে দেখেন, দাদার মৃতদেহ আগলে বসে আছেন ভাই আশিস সিংহ। দাদা সমীর সিংহ (৪৭)-এর দেহে পচন ধরে গিয়েছে তত ক্ষণে। কিন্তু কাউকে কিছু না জানিয়ে কেন দাদার দেহ আগলে বসেছিলেন তিনি? আশিসের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, গোটাটাই করোনা-আতঙ্কে।

গতকাল সন্ধ্যায় বডিগার্ডস লাইনের পুলিশ কর্মীরা ক্যান্টিনের দিক থেকে পচা গন্ধ পান। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন কুকুর-বেড়াল জাতীয় কিছু মারা গিয়েছে। তাঁরা ক্যান্টিনের আশে পাশে খোঁজাখুঁজিও করেন। কোথাও কিছু না পেয়ে ক্যান্টিনে যান তাঁরা। সেখানে ছিলেন ক্যান্টিনকর্মী আশিস। পুলিশ কর্মীরা ক্যান্টিনে ঢুকে দেখতে পান মেঝেতে সমীরের দেহ পড়ে রয়েছে। তাঁর মুখে বালিশ চাপা দেওয়া। গোটা ঘরে ছড়ানো ছিল ব্লিচিং পাউডার। মৃতদেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথমে গোটাটাই রহস্যজনক মনে হয় তদন্তকারীদের।

বৃহস্পতিবার সমীরের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, সেরিব্রাল অ্যাটাক থেকেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ— আর তাতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। অর্থাৎ সমীরের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, এমনটাই জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা। আর সেখানেই প্রশ্ন ওঠে, তা হলে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর কাউকে না জানিয়ে কেন চুপচাপ দেহ আগলে বসে ছিলেন আশিস?

আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যু সন্দেহে বৃদ্ধার বাড়িতে তালা প্রতিবেশীদের

আরও পড়ুন: ১০৫টি বিশেষ ট্রেন আসছে রাজ্যে, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, প্রকাশ হল তালিকাও

আশিসকে জেরা করে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে মৃত্যুর আগে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সমীর। সর্দি, জ্বরের মতো উপসর্গ ছিল তাঁর। আশিস আরও জানান, তাঁর দাদা করোনা আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছেন। কারণ কয়েক দিন আগেই ক্যান্টিন সংলগ্ন বডি গার্ডস লাইনের ধোবি পুকুর এলাকায় এক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হন। তিনি যদিও পুলিশকর্মী নন। একটি বেসরকারি হাসপাতালের সাফাইকর্মী। তাঁর করোনা পজিটিভ হওয়ায়, ওই এলাকা কন্টেনমেন্ট জোন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। সিল করে দেওয়া হয় বডি গার্ডস লাইনের ওই ক্যান্টিন। সেখানেই থাকতেন বাঁকুড়ার বাসিন্দা দুই ভাই— সমীর ও আশিস। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, আশিস মনে করেছিলেন যে, সমীর করোনায় মারা গিয়েছেন। তাঁর মনে হয়েছিল, দাদার সংস্পর্শে বা কোনও ভাবে তিনিও করোনা পজিটিভ। বৃহস্পতিবার রাতেও তিনি পুলিশের কাছে দাবি করেছিলেন যে, তিনি করোনা আক্রান্ত। আর সেই আতঙ্কেই কাউকে কিছু না বলে ভাইয়ের দেহ আগলে ওই বন্ধ ক্যান্টিনেই থেকে গিয়েছিলেন তিনি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে সমীর করোনা আক্রান্ত হননি। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘কোভিড আক্রান্ত হলে মৃতের ফুসফুসে তার চিহ্ন পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে তা ছিল না।”

আশিস যে হেতু পুলিশকে জানিয়েছিল, তাঁর দাদার করোনার উপসর্গ ছিল এবং সে কারণেই মৃত্যু, তাই পুলিশ গতকাল রাতেই তাঁকে কোয়রান্টিনে পাঠায়। কিন্তু ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট জানার পর তাঁকে এ দিন রাতে সেখান থেকে ছেড়েও দেওয়া হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy