প্রতীকী ছবি।
কারও বয়স হয়েছে। আবার কারও বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা রয়েছেন, তাই ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ। কেউ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী পনেরো দিন কোনও রোগীই দেখবেন না। অনেকে আবার জরুরি ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগী দেখছেন।
করোনা আতঙ্কের প্রভাবে এখন এমনই দৃশ্য শহর থেকে শহরতলির চিকিৎসকদের চেম্বারে। ওষুধের দোকানে ‘চেম্বার বন্ধ’ কিংবা ‘ডাক্তারবাবু বসবেন না’ লেখা নোটিস ঝুলছে। সব চিকিৎসক যে বাড়িতে রোগী দেখছেন তেমনটাও নয়। আর তাতেই বিপদে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
মার্চ-এপ্রিল মাসে এমনিই আবহাওয়ার তারতম্যের জন্য জ্বর, সর্দি, কাশি হয় অনেকেরই। চিকিৎসকেরাও জানাচ্ছেন, এই সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। শিশু, প্রবীণ এবং সর্দি, কাশি, হাঁপানি, সিওপিডি-র সমস্যা থাকা লোকজনের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
জরুরি ভিত্তিতে চেম্বারে রোগী দেখছেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তাঁর কথায়, ‘‘জ্বর-সর্দি-কাশি হলেই সেটা করোনা, এমন ভাবার কারণ নেই। এই আতঙ্কটা সব চেয়ে খারাপ। যদি কারও ভ্রমণ সংক্রান্ত ইতিহাস না-থাকে কিংবা বাড়ির আশপাশে কোনও করোনা আক্রান্ত না থাকেন, তা হলে অযথা আতঙ্কের কারণ নেই।’’ তিনি জানান, কারও যদি প্রথমেই সর্দি হয়, অর্থাৎ নাক-চোখ দিয়ে জল পড়ে, হাঁচি হয়, তা হলে সেটা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ নয়। এই উপসর্গগুলি সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রেই দেখা যায়।
শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, ‘‘অম্বল, পেটে ব্যথা, বমি, জ্বর, সর্দির জন্য ফোন করে কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে চিকিৎসকের থেকে ওষুধ জেনে নেওয়া সম্ভব। তবে শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হলে হাসপাতালে যেতে হবে।’’ বয়সজনিত কারণে ব্যক্তিগত চেম্বারে বসছেন না বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘আমার বয়সের লোকেদের তো এমনিই কোয়রান্টিনে থাকার কথা। আর যাঁরা বক্ষরোগের চিকিৎসা করেন, তাঁদের কাছে আসা রোগীরা তো সকলেই কাশছেন। কেউ যদি করোনা আক্রান্ত হন, তা হলে অন্যদের মধ্যে ছড়ানোর আশঙ্কা থাকবে।’’
ধীমানবাবু জানান, লকডাউনের ফলে ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিম খাওয়ার সুযোগ কম। ফলে হঠাৎ ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা কম। কিন্তু বাড়িতে কখনও খুব গরম লাগছে, পাখার নীচে বেশি ক্ষণ বসলে আবার ঠান্ডা লাগছে। তিনি জানান, এই ঠান্ডা-গরমের ফলে জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা খুশখুশ করার মতো সমস্যা থেকে বাঁচতে গরম চা, কফির পাশাপাশি গরম জল বারবার খেতে হবে। হাঁপানি, সিওপিডি-সহ সারা বছর সর্দি-কাশিতে ভোগা মানুষদের ওষুধ বন্ধ রাখা চলবে না। সমস্যা হলে অ্যালার্জির ওষুধ, প্যারাসিটামল খেতে পারেন তাঁরা। গরম জলে নুন মিশিয়ে গার্গল করতে হবে।
শিশুদেরও ঠান্ডা-গরম লাগার হাত থেকে নিরাপদে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ। নিয়মিত হাসপাতালে গেলেও বাড়িতে প্রয়োজন বুঝে দিনে তিন-চার জন শিশুকে দেখছেন তিনি। অপূর্ববাবু বলেন, ‘‘কোনও শিশুর অবস্থা খুব খারাপ হলে তার দায়িত্ব কে নেবে? কখনওই কোনও বাচ্চাকে ফেরানো সম্ভব নয়। কিন্তু পরিবারের দিকটাও দেখতে হবে। যতটা সম্ভব উপসর্গ বুঝে ফোনে ওষুধ বলছি।’’
অনেকেই যে চিকিৎসককে নিয়মিত দেখান, তাঁকে ছাড়া অন্যকে দেখাতে চাইছেন না। চিকিৎসকদেরও মানুষের এই বিশ্বাসকে সম্মান জানানো উচিত বলে মত অপূর্ববাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘এই সময়টা ফোনে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা দরকার চিকিৎসকদের।’’ এখনও পর্যন্ত বহু রোগীকে ফোনে ওষুধ বলে দেওয়াতেই উপকার মিলেছে বলেও জানাচ্ছেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরিজিৎ রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা আসতে পারবেন, তাঁদের চেম্বারে আসার নির্দিষ্ট সময় বলে দিচ্ছি। তবে সমস্যা শুনে সাধারণ জ্বর, সর্দি মনে হলে ফোনেই প্রাথমিক ওষুধ বলছি। পাশাপাশি, এই সময়ে কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত, তা-ও বলে দিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy