ফাইল চিত্র
প্রবল জ্বরে আক্রান্ত রোগী। সেই রোগীকে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েডের পরীক্ষা করিয়ে আনতে বলেছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সঙ্গে মূত্রের রুটিন কালচারও। রোগীর পরিবারের দাবি, ১৫ দিন ধরে হন্যে হয়ে ঘুরে সব পরীক্ষা করার পরে দেখা যায় রিপোর্ট স্বাভাবিক। তবুও জ্বর না কমায় শেষে রোগীকে ভর্তি নেয় ওই হাসপাতাল। রোগীর পরিবারের আরও অভিযোগ, ভর্তির এক দিন পরেই শনিবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে ফোনে জানানো হয় রোগী নিখোঁজ। পালিয়ে গিয়েছেন। রোগী বাড়িতে ফিরেছেন কি না দেখতে তাঁর পাড়ায় পৌঁছয় পুলিশও।
লকডাউনের শহরে কোনও ভাবে হাসপাতালে পৌঁছে অবশ্য রোগীর পরিজনেরা জানতে পারেন, রোগীকে পাওয়া গিয়েছে। তিনি হাসপাতালেই ছিলেন। অভিযোগ, সন্ধ্যায় ওই পরিবারকেই আবার হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, রোগী ভোরেই মারা গিয়েছেন। তাঁর করোনা হয়েছিল, তাই মৃতদেহ দেওয়া যাবে না। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
গত কয়েক দিনে শহরের স্বাস্থ্য পরিষেবা ঘিরে এমনই একাধিক অভিযোগ উঠছিল নানা মহল থেকে। করোনার রোগীকেও এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘোরানোর অভিযোগ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। শ্যামবাজারের ওই জ্বরের রোগীকেও এ ভাবে মেডিক্যাল ফিরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। পরে উত্তর কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করে তাঁর করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়ে। এর পরে তাঁকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও তিনি কেমন আছেন, তা রবিবার রাত পর্যন্তও নিশ্চিত ভাবে জানতে পারেননি বাড়িতে কোয়রান্টিনে থাকা তাঁর পরিবারের লোকজন। তাঁদের দাবি, সূত্র মারফত রোগীর মেয়ের কাছে শুধু খবর এসেছে এম আর বাঙুর হাসপাতালেই শনিবার মৃত্যু হয়েছে তাঁর বাবার।
মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় শনিবার রাতেই হাসপাতালের বিরুদ্ধে বৌবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতের পরিবার। সেখান থেকেই তাঁদের হোম কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: নিউ টাউনে ডেঙ্গি প্রতিরোধে কর্মসূচি
মৃত ৫১ বছরের ওই ব্যক্তির বাড়ি বড়তলা থানা এলাকার গোয়াবাগানে। ছাত্র পড়িয়ে, আঁকা শিখিয়ে তিনিই সংসার চালাতেন। স্ত্রী আর ২১ বছরের ছেলে রয়েছেন তাঁর। মৃতের স্ত্রী রবিবার বলেন, “জ্বর না কমায় গত ৯ মে স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ভর্তি না নিয়ে পরীক্ষাগুলো করাতে বলে ছেড়ে দেয়। সব পরীক্ষা করিয়ে দেখি সব রিপোর্টই নেগেটিভ। অথচ জ্বর ছাড়েনি। শ্বাসকষ্টও আগের থেকে বেড়েছে।” গত ১৪ মে-র পরে রোগীকে মেডিক্যাল কলেজের গ্রিন বিল্ডিংয়ে ভর্তি নেওয়া হয়। মহিলার কথায়, “কোয়রান্টিনে থাকতে হবে বলে মাঝে ১৫ তারিখ আর ওঁকে দেখতে যেতে পারিনি। শনিবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলে আপনার স্বামী পালিয়ে গিয়েছে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”
কোয়রান্টিন ভেঙে হাসপাতালে পৌঁছেও স্বামীর কী হয়েছে প্রথমে তাঁরা জানতেই পারছিলেন না বলে মহিলার অভিযোগ। দেখা করেননি সুপারও। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে তাঁদের জানানো হয়, রোগী হাসপাতালেই ছিলেন, খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। মৃতের পুত্র বলেন, “সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার ঠিক আগে হঠাৎ হাসপাতাল থেকে বলা হল, ভোরেই বাবা মারা গিয়েছেন। করোনা হয়েছিল।”
কান্নায় ভেঙে পড়ে মৃতের স্ত্রী বলেন, “কেন দুপুরে ফোন করে বলা হল, রোগী পালিয়ে গিয়েছেন? কেনই বা ১৫ দিন ধরে ওই রকম জ্বর দেখেও রোগীকে ঘোরানো হল? আগেই তো করোনার পরীক্ষা করে আমার স্বামীর চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারত। তাতে হয়তো উনি সুস্থ হয়ে যেতেন। আমি এর বিচার পেতে যত দূর যেতে হয় যাব।”
মেডিক্যালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের দাবি, “রোগীর পরিজনেরা হোম কোয়রান্টিনে থাকেন। তাই হয়তো ভুল ফোন চলে গিয়েছে। তা ছাড়া রেফার রোগীর ক্ষেত্রে ফোন নম্বরে গন্ডগোল হচ্ছে। তবু কী হয়েছে খোঁজ করে দেখছি।” কিন্তু আগে কেন করোনার পরীক্ষা না করিয়ে রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হল? ইন্দ্রনীলবাবু এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে না চাইলেও রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বললেন, “দুঃখজনক ঘটনা। এই সমস্যা মেটাতেই শনিবার মেডিক্যাল কলেজে নিজে গিয়ে বৈঠক করেছি। কোয়রান্টিনে থাকা রোগীর পরিবারের সঙ্গে রোগীর সুষ্ঠু ভাবে যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হবে। এই দু’টি বিষয়েরও দ্রুত তদন্তের ব্যবস্থা করতে বলছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy