বিপদঘণ্টি: তর্পণের সময়ে মানা হল না কোনও করোনা-বিধিই। বুধবার, বাবুঘাটে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
পুরসভার নির্দেশ ছিল, অন্তত ছ'ফুট দূরত্ব মেনে তর্পণে অংশ নিতে হবে। করোনা-বিধি মনে করাতে পুলিশকে লাগাতার ঘোষণা চালিয়ে যেতে হবে। ঘাটে ঘাটে তৈরি করতে হবে শিবির। যেখান থেকে বিনামূল্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হবে। মাস্ক পরে তর্পণ করতে হবে। মাস্ক পরতে হবে পুরোহিতকেও। বাস্তবে কোনও নির্দেশই মানা হল না ঘাটগুলিতে।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, বুধবার মহালয়ায় তর্পণ ঘিরেই যদি এমন লাগামহীন দশা হয়, পুজোর চার দিন মণ্ডপের বাইরের ভিড়ের কী হবে?
শাস্ত্র অনুসারে, এই সময়ে মর্ত্যে নেমে আসেন পিতৃপুরুষেরা। বঙ্গীয় শব্দকোষ প্রণেতা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, দেবতা ও পিতৃপুরুষদের তৃপ্ত করতে জলাঞ্জলি দানপর্বই হল তর্পণ। প্রতি বছর এই রীতি পালনে ঘাটগুলিতে ভিড় উপচে পড়ে। তাই করোনা-বিধি মেনে তর্পণ যাতে হয়, সে জন্য কলকাতা পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল পুরসভার। স্থির হয়, শেষ রাত থেকে তর্পণ করতে আসা মানুষের জন্য আলো লাগানো হবে। পরিষ্কার করা হয় বাবুঘাট, নিমতলা ঘাট ও জাজেস ঘাট-সহ শহরের ন’টি ঘাট। শিবির করে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার দেওয়ার কথাও স্থির হয়। তবে এ দিন শিবিরের কাঠামো চোখে পড়েনি। এমনকি, বৃত্তাকার দাগ কেটে দূরত্ব-বিধি মানার যে ব্যবস্থা হয়, ঘাটগুলিতে তা-ও চোখে পড়েনি। বিনামূল্যে স্যানিটাইজ়ার দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েও বিভ্রান্ত পুলিশের বড় অংশ। নিমতলা, শোভাবাজার, বাগবাজারের ঘাটগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি থানার পুলিশ আধিকারিক বললেন, “এমন নির্দেশ অন্তত আসেনি। সরে দাঁড়ানোর কথাটুকুই শুনছেন না যাঁরা, তাঁরা মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার নিয়ে কী শুনবেন?”
বাবুঘাটে দেখা গেল, রাস্তা পর্যন্ত ভিড় চলে এসেছে। সেখানেই মাটিতে বসে চলছে মন্ত্র পড়া। পুরোহিত বা তর্পণ করতে আসা ব্যক্তি, কারও মুখে মাস্ক নেই। এক যুবক বললেন, “শপিং করতে মাস্ক ছাড়া যাচ্ছে লোকে। তর্পণের সময়ে পরে কী লাভ?” জাজেস ঘাটে আবার জলের মধ্যে কিছুটা দূরে বাঁশ পুঁতে জাল লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঘাটে দূরত্ব বজায় রাখার দিকে নজরই নেই! ভিড়ের চাপ এতই যে, অনেকে জাল ছিঁড়ে জলে নেমে যাচ্ছেন। রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের সদস্যেরা তাঁদের সতর্ক করতে ঘোষণা করে চলেছেন। তবে করোনা নিয়ে সতর্কবার্তা ছিল না।
এ দিন চোখে পড়ার মতো ভিড় ছিল নিমতলা ঘাটে। গাদাগাদি ভিড়ে এক-এক জন পুরোহিতকে ঘিরে মন্ত্র পড়েছেন মাস্কহীন ১৫-২০ জন। পুরোহিত মধুসূদন বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “সঙ্গে স্যানিটাইজ়ার রেখেছি। কিন্তু কেউ মাস্ক পরার কথা শুনছেন না। আমি মাস্ক পরে কয়েকটা কাজ করলেও পরে খুলে ফেলেছি।” তর্পণ করতে নিমতলা ঘাটে হাজির সুখেন ঘোষ নামে এক ব্যক্তির আবার মন্তব্য, “মাস্ক পরে গঙ্গাস্নান হয় না। তাই ওটা বাড়ি রেখে এসেছি।”
কলকাতার পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলেছেন, “সংক্রমণ এখন নিয়ন্ত্রণে। তা কোনও ভাবে যাতে বেড়ে না যায়, সে জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। সকলেই মানার চেষ্টা করেছেন, কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।” কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্তার যুক্তি, “তর্পণ নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি চায়নি প্রশাসন। অনুরোধের মাধ্যমে বিধি মানানোই ছিল লক্ষ্য। যা সফল হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy