ধুন্ধুমার দমদম সেন্ট্রাল জেলে। —নিজস্ব চিত্র।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালীন দমদম সেন্ট্রাল জেলে বিচারাধীন এক বন্দির মৃত্যু হল। আরও বেশ কয়েক জন সেখানে আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘এক জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি আমরা। তবে গুলিবিদ্ধ হয়েই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে কি না বলতে পারছি না। যত ক্ষণ না ভিতরে ঢুকে জেলের দখল নিতে পারছি, তত ক্ষণ পর্যন্ত এ ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’’ যদিও বন্দিদের পরিবার পরিজনদের দাবি, পুলিশ এবং জেলরক্ষীদের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে ওই বন্দির। কমপক্ষে আরও ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি তাঁদের। আহত অবস্থায় জেল থেকে ৯ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। এই ঘটনায় এ দিন সন্ধ্যায় ডিজি কারা অরুণ গুপ্তকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পীযূষ পান্ডেকে।
করোনা আতঙ্কের জেরে শনিবার সকাল থেকেই কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। সূত্রের খবর, জেলের একটা বড় অংশের দখল নিয়ে নিয়েছেন বন্দিরা। জেলের ভিতরে আগুন লাগানোর পাশাপাশি মই এনে পাঁচিল টপকানোর চেষ্টা করছেন কোনও কোনও বন্দি। অশান্তি চলাকালীন কেউ ওই ভাবে পালিয়েছেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশ ও কারাকর্মীদের একটা অংশকে সাজাপ্রাপ্তদের ওয়ার্ডে গিয়ে লুকোতে হয়েছে। জেলের যে অংশের দখল নিয়েছেন বন্দিরা, সেখানে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হচ্ছে বাইরে থেকে। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, পুলিশকে শূন্যে গুলি চালানোর নির্দেশ জারি করা হয়েছে। বন্দিদের তরফে গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে জেলরক্ষীদের বিরুদ্ধে।
জেলবন্দিরা যাতে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে না পড়েন, সে জন্য সাময়িক ভাবে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তাঁদের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য কারা দফতর। শুক্রবারের ওই সিদ্ধান্ত ঘিরেই এ দিন সকালে গন্ডগোল শুরু হয়। জেল সূত্রে খবর, দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ১ নম্বর ওয়ার্ডে মূলত বিচারাধীন বন্দিরাই থাকেন। পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ বন্ধের প্রতিবাদে এ দিন সকাল থেকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। জেল সুপার নিজে বিক্ষোভ থামাতে গেলে, তাঁর সামনে একাধিক দাবি নিয়ে হাজির হন বন্দিরা। বলা হয়, সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মতো তাঁদেরও প্যারোলে ছাড়তে হবে।
জেল চত্বরে পড়ে রয়েছে কার্তুজের খোল। —নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: কোথায় কোয়রান্টিন? বিদেশ থেকে ফিরে পুলিশ কর্তার ছেলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন
এই নিয়েই জেল কর্তৃপক্ষ এবং বন্দিদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তা সংঘর্ষের আকার নেয়। অভিযোগ, ওই সংঘর্ষ চলাকালীন জেল পুলিশ এবং বাইরে থেকে র্যাফ এসে ওয়ার্ডের মধ্যেই বিচারাধীন বন্দিদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। তার পাল্টা ওয়ার্ডে ব্যাপক ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ বন্দিরা। সেইসময় বিক্ষুব্ধ বিচারাধীন বন্দিরা ওয়ার্ডের গেট ভেঙে বাইরে বেরনোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। তাঁরা দা এবং কুড়ুলের মতো অস্ত্রও হাতে তুলে নিয়েছেন বলে জেলকর্তাদের দাবি। শুধু তাই নয়, অবিযোগ, জেলের ওয়ার্ডে আগুনও ধরিয়ে দিয়েছেন বন্দিরা। ঘটনাস্থলে দমকলের একাধিক ইঞ্জিন পৌঁছেছে। পৌঁছন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। অন্য দিকে বন্দিদের পরিবারের দাবি, জেলরক্ষীরাজেলের ভিতরে বন্দিদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তাতে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলেও তাঁদের অভিযোগ।
আরও পড়ুন: ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত
জেল দফতরের কর্তারা যদিও গুলি চালানোর কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁরা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে লাঠিচার্জ করা হয়। অতিরিক্ত বাহিনী নিয়ে কারা দফতরের শীর্ষ কর্তারাও জেলে পৌঁছেছেন। তবে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা অন্য ওয়ার্ডে রয়েছেন। তাঁদের কেউ এই সংঘর্ষে যোগ দেননি। কারা দফতরের শীর্ষ আধিকারকরা জেলে পৌঁছলেও, পরিস্থিতি এখনও অগ্নিগর্ভ বলে জেল সূত্রে খবর। বলা হচ্ছে, বিক্ষুব্ধ বন্দিদের একাংশ তালা ভেঙে দা-কুড়ুলের মতো কিছু ধারালো অস্ত্র জোগাড় করেছে। বাহিনী ঢুকলে সেই সব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওয়ার্ডের মধ্যে বন্দিরা একটি গ্যাস সিলিন্ডারও নিয়ে গিয়েছেন বলে জেল সূত্রে জানা গিয়েছে। বন্দিদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন কারা দফতরের কর্তারা।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জেলের ভিতরে শূন্যে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্য দিক, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন বন্দিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy